কেবল আবুল হোসেনই নন শনিবার (০৪ মার্চ) থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি থাকা পুরাতন রোগীরাও চলে যাচ্ছেন। সময়মতো চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২নং ওয়ার্ডে সাইফুল ইসলাম নামের একজন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, সকাল ৮টা এবং সন্ধ্যা ৭টার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাউন্ডে আসেন। তারা এসে রাউন্ড দিয়ে চলে যান। একজন রেজিস্ট্রার সার্বক্ষণিক থাকার কথা থাকলেও তার রুম বন্ধ পাওয়া যায়। মূলত যে কোনো সমস্যা হলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরাই জরুরি মুহূর্তে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
প্রয়োজনে মোবাইলে বিভাগীয় প্রধানদের পরামর্শও নেন। কিন্তু শনিবার সকাল থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে আছেন। এতে রোগীর কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। রাউন্ড দেওয়ার সময় যেই ওষুধ লিখে দেওয়া হয় নার্সরা তার বাইরে কোনো ওষুধ দিতে পারেন না। তাই সার্বক্ষণিক চিকিৎসা না পেয়ে বাধ্য হয়ে অনেকে হাসপাতাল ছাড়ছেন বলেও জানান সাইফুল।
এদিকে, রোগীরা ভোগান্তিতে থাকলেও ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে শনিবার সকাল ৮টা থেকে কাজে যোগ দেননি রামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। রোববার দুপুরেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সামনে মানববন্ধন করেছেন তারা। মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে সংক্ষিপ্ত সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচি থেকে জানানো হয়, দাবি না মানলে ৭২ ঘণ্টার পর অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাবেন তারা।
রামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের মুখপাত্র আবু রায়হান সাংবাদিকদের বলেন, বগুড়ার চার ইন্টার্ন চিকিৎসকের শাস্তি মওকুফ করে কর্মস্থলে বহালের দাবিতে সারা দেশে ইন্টার্নদের কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন তারা। এ কর্মবিরতি চলবে।
তবে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে থাকলেও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের বক্তব্য, যারা হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সারোয়ার জাহান বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক রয়েছে। তারা সেই সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ইন্টার্নদের কর্মবিরতির কারণে প্রতিটি ওয়ার্ডে রেজিস্ট্রারসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। তারাই সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করছেন।
এর আগে রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শজিমেকে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা রোগী আলাউদ্দিনের ছেলে ও ২ মেয়ে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে প্রহৃত হন। পরে রোগীর স্বজনের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ তুলে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে উচ্চ পর্যায়ে এই কমিটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেন। এ ঘটনায় চারজনের ইন্টার্নশিপ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।
শাস্তি ঘোষণার পর ধর্মঘট শুরু করেন শজিমেকের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে শনিবার থেকে কর্মবিরতিতে যান রামেকের ইন্টার্নরাও।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৭
এসএস/এমজেএফ/