এদিকে প্রায় দুই দশক পার করতে যাচ্ছে দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান গত ২৪ মার্চ তার দায়িত্বের দ্বিতীয় বর্ষ পার করেছেন।
বুধবার (২৬ এপ্রিল, ২০১৭) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে একান্ত আলাপে বাংলানিউজকে বলেন বিএসএমএমইউ নিয়ে তার ভাবনার কথা:
আমাদের তিন দশকের একটি দাবি ছিল, দেশে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কেন চেয়েছি! আমাদের মেডিকেল শিক্ষা একটি ত্রয়ী প্রশাসনের অধীন হয়ে রয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা, ভর্তি সবকিছু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্য দিয়ে করে মন্ত্রণালয়। কোর্স কারিকুলাম করে বিএমডিসি। আবার সার্টিফিকেট দেয় সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
ডা. কামরুল বলেন, ত্রয়ী প্রশাসনের মধ্য দিয়ে যাওয়া এই মেডিকেল শিক্ষার স্ট্যান্ডার্ড খারাপ নয়; তবে একটু জটিল। সে কারণে আমরা চেয়েছিলাম, দেশের সকল মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এর মানে মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউশন, বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন, যেমন এনআইসিডি, ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এগুলোর স্বায়ত্ত্বশাসনের কথা। স্বায়ত্তশাসন দিয়ে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সকল মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কি হবে! এটা একদিকে যেমন আমাদের মেডিকেল সায়েন্সকে আধুনিক করবে, আর জনগণের স্বাস্থ্যসেবাটা জনগণের আশানুরূপ ও চাহিদামাফিক করতে হবে। সেটাই হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, সেখানে সবকিছু পূর্ণতা পায় না। অথচ শুধু পিজি হাসপাতালকেই পেলাম। আমরা যখন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বানালাম, তখন আমরা দেশের সকল সরকারি মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আউটার ক্যাম্পাস হিসেবে চেয়েছিলাম। এখন হয়ে গেলে মেডিকেল শিক্ষার স্ট্যান্ডার্ডটাও একই হবে। এখন যেমন এক এক ডিভিশনে এক এক রকম হচ্ছে, এক এক ধরনের প্রশ্নে পরীক্ষা হচ্ছে। সেটা আমরা চেয়েছি, মানসম্মত করার জন্যে।
উপাচার্য বলেন, আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় পেলাম, তখন আমি পিজি হাসপাতালের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আবেগের বিষয় হচ্ছে, নামটা আমারই দেয়া ছিল। যে আবেদনপত্রটি ছিল, সেখানে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দুজনে স্বাক্ষর করে আমরা জমা দিলাম। তার আগেই আমরা প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত সিদ্ধান্ত পাই।
তখন আমরা মতামত দিই যে, নেহেরু বা জিন্নার নামে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নামে নেই। তখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এই সিদ্ধান্ত দেয়। তবে নাম কী হবে,সেটি বাছাই করার দায়িত্ব আমার ছিল।
এখন আমরা এখান থেকে দেশের উচ্চ মেডিকেল শিক্ষা পরিচালনা করি। উচ্চ মেডিকেল শিক্ষাতে ৪২ টি মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোর্স পরিচালনা করি। এর মধ্যে রেসিডেন্সিয়াল প্রোগ্রাম ৫৬ টা। যেগুলোতে বিশ্বমানের কোর্স কারিকুলাম রয়েছে। এরপরে এমফিল আছে, ডিপ্লোমা আছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমরা পুরোপুরি পরিচালনা করি, ভর্তি পরীক্ষা ও ভর্তির সুপারভাইজারি করি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বারডেম, বরিশাল মেডিকেল কলেজ এসবখানেই পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স আমরা পরিচালনা করি।
উপাচার্য ডা. কামরুল বলেন, এখন আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, অন্যগুলোকেও চাই। তাহলে এক মানে চলে আসবে। নতুন যেটা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হলো চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে, সেখানে কিন্তু পরিষ্কার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে, ক্যাম্পাসটা হবে পোস্ট গ্রাজুয়েশনের। সেখানে কিছু নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে আইনের মধ্য দিয়ে। এই এলাকায় যতো মেডিকেল কলেজ বা ইনস্টিটিউট থাকবে সেগুলো ওই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত হবে।
আমাদের আইনেও এর সুযোগ রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য মেডিকেল প্রতিষ্ঠানও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত হবে। আমরা এখন সরকারের কাছে দাবি করছি, ওই দুই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দিয়ে বাকিগুলো বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেয়া হোক। এ নিয়ে নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা মন্ত্রণালয়কে বলেছি এ ব্যাপারে। যেন এটা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে যে জাতীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিল রয়েছে সেখানে আমরা এই এজেন্ডাটি দিয়েছি। এটা খুব কঠিন কাজও নয়।
একটি আন্ডারগ্রাজুয়েট কন্ট্রোলার অফিস খুলে কাজটা করা যাবে বলে মনে করেন অধ্যাপক কামরুল।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৭
এমএন/জেএম