যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্পাইন সার্জারি এবং ব্রিটেন থেকে স্পাইনের উপরে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। একাধারে স্কটিশ রিসার্চ সোসাইটির অ্যাক্টিভ ফেলো ও বাংলাদেশ স্পাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদকও তিনি।
সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। এখন বছরে প্রায় এক হাজার জটিল ভাঙ্গা হাড় জোড়া দিচ্ছেন এই চিকিৎসক। বৃহস্পতিবার ( জুন ০৮) সকালে নিটোরে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মফিজুল সাদিক। দু’পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব পড়ুন আজ-
বাংলানিউজ: নিটোরে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার রোগীর সংখ্যা। এর কারণ কি?
ডা. শাহ আলম: আমদের দেশে প্রচলিত যে ট্রাফিক আইন রয়েছে, এটার সঠিক প্রয়োগ নেই। যে কারণে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। সড়কে চলতে চলতে যত্রতত্র পথচারীরা পারাপার হচ্ছেন। এদের ধরে শাস্তি ও জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। একটা দুর্ঘটনা শুধু তার নিজের পরিবারের ক্ষতি করে না, এটা রাষ্ট্রেরও ক্ষতি। কয়েকটি বিষয় মেনে চললে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ, বিদ্যমান ট্রাফিক আইন অমান্য, অশিক্ষিত চালক, অসৎ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও অসচেতনতা। আইন কানুন ঠিক মতো মেনে চললে দুর্ঘটনা কমে আসবে। ’
বাংলানিউজঃ কি ধরনের রোগী বাড়ছে?
ডা. শাহ আলম: মটর বাইক দুর্ঘটনা ভয়ংকরভাবে বেড়েই চলেছে। এরা সবাই ইয়াং, ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী। এরা নিয়ম কানুন মানতে চায় না। হেলমেটও পরে না। সড়ক দুর্ঘটনায় এরা প্রচুর মারা যাচ্ছে। এমন রোগীর সংখ্যা হাসপাতালে বেড়েই চলেছে। আমাদের অনেক কষ্ট লাগে। যখন দেখি এসব ইয়াং মারা যাচ্ছে চোখের সামনে। অঙ্গহানিও হচ্ছে। দুর্ঘটনায় ইয়াং বাইকারদের পা কেটে ফেলার সময় আমাদের কান্না পায়। স্বজনেরা অনেক সময় কান্নাকাটি করে হাত-পা যেন না কাটা হয়। কিন্তু আমাদের কিছুই করার থাকে না। না কাটলে সমস্ত শরীরে পচন ধরে মরে যাবে। তাই শরীরের পচন ধরা অংশ কেটে ফেলতে হয়। এসব ইয়াং মটরবাইকাররা কারো কথাও শুনতে চায় না। ওভার স্পিডে বাইক চালায়। বাংলাদেশে অনেক সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। ওভারস্পিডে বাইক চালালে অটো কেস করে দেয়া উচিত। কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে সর্বনিম্ন তিন হাজার টাকা জরিমানা করা উচিত। আমি বলবো বাবারা (ইয়ং বাইকার) তোমরা সচেতনভাবে বাইক চালাবে। ’
বাংলানিউজ: চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছোট থেকেই দেখতেন?
ডা. শাহ আলম: ছোট বেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। আল্লাহ এই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। আমি নিজেকে খুবই স্যাটিসফাই মনে করি। হাজার হাজার মানুষের অপারেশন করেছি, ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগাচ্ছি। এটাই শান্তি। গত দুই বছরে দেড় হাজার অপারেশন করছি। ৯৪ থেকে অপারেশন করে আসছি। একদিন অপারেশন না করলে মনে হয় কাজই করলাম না। মনে হয় খারাপ ডাক্তার হয়ে গেলাম। কোনো কাজ, কাম নাই। অনেক সময় দিনে ১৫ থেকে ১৬টা অপারেশন করছি। এখন গড়ে ১০টা অপারেশন করা লাগে। ’
বাংলানিউজঃ অপারেশন করতে গিয়ে কখনও ভয় লাগে?
ডা. শাহ আলম: জটিল অপারেশনের সময় অনেক ভয় লাগে। কাজটা ঠিকঠাক করতে পারবো কি? অপারেশন থিয়েটারে এই কথা সব সময় ঘুরপাক খেতে থাকে। গতকাল (জুন ০৭) একটা বাচ্চার জটিল অপারেশন করেছি। বাচ্চাটার মেরুদণ্ডে টিবি হয়েছে। এতে করে মেরুদন্ডের হাড় বাঁকা হয়ে গেছে। ভয় হচ্ছিলো অপারেশন সঠিকভাবে না করতে পারলে বাচ্চাটা পঙ্গু হয়ে যাবে। মেরুদণ্ডের হাড় ঠিক করার সময় দেখছি পাশেই হার্ট কেমন করে পাম্প করছে। এই বিষয়টিতে সতর্ক থাকতে হয়। যেন অন্য কোথাও আঘাত না লাগে। সব কিছুর বিষয়ে সতর্ক থেকেই চতুর্দিকে হাতুড়ি বাটাল দিয়ে হাড় কাটতে হয়। রড স্ক্রু দিয়ে হাড় ঠিক করতে হয়। অপারেশন করার সময় প্রচুর রগ সামনে থাকে। একটা কেটে গেলেই জীবনের মতো পঙ্গু হয়ে যাবে এসব বিষয়েও খেয়াল করতে হয়। বার বার প্রশ্ন জাগে ঠিক মতো অপারেশন হচ্ছে কি না। ঠিকঠাক মতো অপারেশন করতে পারলে রাতে ঘুমটাও প্রশান্তির হয়। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৭
এমআইএস/আরআই