মচমইল ফার্মেসির বারান্দায় একদিকে কংক্রিটের বেঞ্চ, অন্যদিকে রয়েছে একটি কাঠের চেয়ার। বাইরে তখন টুপটাপ বৃষ্টি ঝরছে।
দোকানটির সামনে বাগমারা থানা সদরে যাওয়ার প্রধান সড়ক। আর সড়কের ওপারে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পানের হাট ’মচমইল’। ঔষধের বেচাবিক্রি বেশ ভালোই চলছিলো। দোকান মালিক ও সেলসম্যান মিলে ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কখনও কখনও।
কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, দোকানি সব ঔষধ রেখেছেন ভেতরের সেলফে। আর লোকেসটিল, রেনিটিড ও নাপা ট্যাবলেটের বক্স রেখে দিয়েছেন সামনের শোকেসের উপরে। এই ট্যাবলেটের বক্স এখানে রাখার কারণ জানতে চাইলে বলেন, এই ট্যাবলেটের ক্রেতা বেশি। বারবার উঠে সেলফ থেকে আনতে হয়। তাই হাতের কাছে রেখেছি যাতে বসে থেকেই কাস্টমার বিদায় করতে পারি।
অবস্থানকালে পঁচিশজনের মতো ক্রেতার আগমন ঘটে মচমইল ফার্মেসিতে। তার মধ্যে আঠারো জনই অ্যাসিডিটির ট্যাবলেট কিনলেন। মাত্র ২ জনের হাতে ছিলো ব্যবস্থাপত্র, আর ৪ জন এসেছিলেন চিরকূট নিয়ে, কয়েকজন পুরনো ট্যাবলেটের খোসা নিয়ে, আর বাকিরা এসে গ্যাসের ট্যাবলেট চাইলেন। আর অমনি পটাপট লোসেকটিল দিয়ে বিদায় করলেন দোকানি।
এ বিষয়ে কথা হয় ফার্মেসির মালিক পল্লী চিকিৎসক শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, আমার দোকানে দিনে চার থেকে দশ হাজার টাকার ঔষধ বিক্রি হয়। এরমধ্যে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ থাকে গ্যাসের ট্যাবলেট। লোসেকটিল দৈনিক এক থেকে দু’টি বক্স বিক্রি হয়। এর সঙ্গে নিউট্যাক, রেনিডিন, সার্জেল ও অন্যান্য কোম্পানির অ্যাসিডিটির ট্যাবলেটও থাকে।
গ্রামের এই বাজারটিতে নাকি ১২টি ঔষধের দোকান রয়েছে। যার প্রত্যেকটিতেই গ্যাসের ট্যাবলেট বিক্রির আধিক্য। শুধু বাগমারায় নয়, সারাদেশেই নাকি এই চিত্র। গ্যাস এখন আর ছোট বড় মানছে না, সবার হচ্ছে। তাই অনেকেই কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্যাসের অন্যতম কারণ হচ্ছে ভেজাল খাবার। এই ভেজাল রোধ করা না গেলে জাতির জন্য মহাবিপর্যয় নেমে আসতে পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শহিদুল ইসলাম বলেন, পেইনকিলার দিলে সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের ট্যাবলেট দিয়ে থাকি আমরা। তার কাছে প্রশ্ন ছিলো কেন আপনারা মানুষকে জোর করে গ্যাসের ট্যাবলেট খাওয়াচ্ছেন। রোগীর যদি অ্যাসিডিটির সমস্যা না থেকে তাহলেও কেন খেতে হবে। এর কি কোনই বিকল্প নেই!
জবাবে বলেন, হ্যাঁ রয়েছে। অনেক ঔষধ রয়েছে খাওয়ার পরে খেতে হয়, কিন্তু অনেকেই ঠিকমতো নিয়ম মানে না। এতে সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে আমরা গ্যাসের ট্যাবলেট দিয়ে থাকি।
কিন্তু আপনারাতো কোন সময় এসব কথা বলেন না। শুধু লিখে দেন ওষুধের নাম। আর দোকানিরাও প্যাকেট ভর্তি করে দিয়ে দিচ্ছে। রোগীরা সেটাকে অমর বাণীর মতো মেনে নিচ্ছে। তারা ভাবছে ডাক্তার বলেছে না হলে নির্ঘাত বিপদ, তাই গোগ্রাসে গিলছে সবই। আপনারাতো কখনও বলেন না যে, আপনি চাইলে এই ভাবে অ্যাসিডিটির ট্যাবলেট এড়াতে পারবেন। আপনারা বুঝিয়ে বললে নিশ্চয় মানবে রোগীরা। আর অ্যাসিডিটির ঔষধের কি কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। জবাবে বলেন, কিছুতো আছেই।
চোখে পড়লো নিষিদ্ধ ঘোষিত ডাইক্লোফেনাক ট্যাবলেটের পাতা। একজন রোগী খোসা হাতে করে কিনতে এসেছিলেন। আজকেই তার শেষ হয়ে গেছে, আরও প্রয়োজন তাই কিনতে চান। মচমইল বাজারেই কিনেছিলেন গত সপ্তাহে। কিন্তু এই ঔষধ অনেক আগে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে।
এসব নিষিদ্ধ ঔষধ কারা বিক্রি করে? জবাবে ফোঁস করে ওঠেন শহিদুল ইসলাম। বলেন, আপনি একটা দুইটা ঔষধ খুঁজছেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত ৩৫টি কোম্পানির ত্রিশটিই এখনও চুটিয়ে ব্যবসা করছে। প্রকাশ্যে তাদের গাড়িতে করে ঔষধ পৌঁছে দিচ্ছে দোকানে দোকানে। আবার ডাক্তাররাও লিখছে বিশেষ সুবিধা পেয়ে। তাই বাধ্য হয়ে দোকানিরাও রাখছে। তাহলে কোর্টের রায়ের কি মূল্য থাকল। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কি করে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
এসআই/আরআই