সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে খুলনার বয়রাস্থ আদ্-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মনোরঞ্জন মণ্ডল(৬০)বাংলানিউজকে এ কথা বলেন। তিনি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কপালিয়া গ্রাম থেকে চোখের ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন এখানে।
স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে তিনি বলেন, ১২০ টাকার মধ্যে ডাক্তার দেখানো ও চোখের টেস্ট করতি পারিছি। ডাক্তার বলিছে চশমা নিতি। সিজারিয়ান মা তানিয়া জানান, ৫ হাজার ১শ’ টাকার মধ্যে তার সিজারিয়ান অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আজ (২১ আগস্ট) সন্তান নিয়ে নগরীর ফুল মার্কেট এলাকার বাসায় ফিরে যাবেন।
হাসপাতালের পরিবেশ ও সেবার মান সম্পর্কে তিনি বলেন, সস্তায় সব সেবা এখানে পাওয়া যায়। সেবার মানও ভালো। যে কারণে আমার পরিবারসহ আত্মীয় স্বজনরা প্রায় সবাই এখানে আসেন।
নাসির উদ্দিন নামের এক রোগী বলেন, আত্মীয়ের কাছে প্রশংসা শুনে এখানে এসেছেন। এসে দেখেন যা শুনেছেন তার চেয়ে বেশি ভালো এখানে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বেশ কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বললে তারা হাসপাতালের চিকিৎসার মান নিয়ে খুশি বলে জানান।
তারা জানান, খুলনার কোনো হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহার এখানকার মতো এতো ভালো নয়।
সোমবার সরেজমিনে খুলনা-যশোর মহাসড়কের পাশের হাসপাতালে গেলে সামনের ফুলের বাগান ও বিভিন্ন গাছ-গাছালির সবুজের সমারোহে চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রবেশের পর ভিতরের পরিবেশ এতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন যে মন ভরে যায়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তারা নামমাত্র মূল্যে ও অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ নিতে হতদরিদ্র সাধারণ রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। একারণে প্রতিদিন এখানে ভিড় লেগেই থাকে।
হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. প্লাবন বসু বাংলানিউজকে বলেন, লাভ নয়, সেবাই আমাদের লক্ষ্য। স্বল্প মূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। হাসপাতালটিতে রয়েছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। ৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। রয়েছেন অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয় এ হাসপাতালে।
তিনি আরও বলেন, আমরা গাইনি ও চক্ষু বিভাগে সফল হয়েছি। যে জায়গায় পৌঁছাতে চাচ্ছি সেই জায়গার অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এখানে রয়েছে আকিজ কার্ডিয়াক সেন্টার। যেখানে অভিজ্ঞ হার্ট স্পেশালিস্ট চিকিৎসকের মাধ্যমে আউডডোর ও ইনডোরে হার্টের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, হাসপাতালে চিকিৎসক ৮৫ জন, সেবিকা ১১০ জন, রিসেপশনিস্ট ৫৫জন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ১৪৫ জন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ১৮ জন কর্মরত রয়েছেন।
তিনি আরো জানান, হাসপাতালটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল। কেবিন ও বেড রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের। ২৪ ঘণ্টা স্বল্পমূল্যে ১৭টি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসও চালু রয়েছে এই হাসপাতালে। এছাড়া ৬ উপজেলায় ৬টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।
আকিজ কার্ডিয়াক সেন্টারের সিইও ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ জগলুল কবির বলেন, এখানে ১৫ শয্যা বিশিষ্ট করনারি কেয়ার ইউনিট রয়েছে। অচিরেই ক্যাথল্যাব সুবিধার মাধ্যমে এনজিওগ্রাম, এনজিওপ্লাস্টি, পেস মেকার স্থাপনের সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করা হবে। এজন্য মেশিনও আনা হয়ে গেছে। কোরবানির ঈদের পর আশা করছি চালু হবে। এর জন্য যে খরচ নির্ধারণ করা তা মানুষের ধারণার চেয়ে কম। এরপর আমরা পূর্ণাঙ্গ কিডনিসেবা দিতে চাই। সেখানেও আমরা কম মূল্য রাখতে চাই। যাতে রোগীরা তা বহন করতে পারেন।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. হোসেন আলী বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালটি সাড়ে ৭ বিঘা জমির ওপর। এখানে ৮তলা ভবন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আন্তরিক সেবা, কম খরচ, চাওয়া মাত্র অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহসহ রোগীবান্ধব নানা উদ্যোগ নিয়ে শিশু ও প্রসূতিসেবায় অনন্য স্থান দখল করেছে আদ-দ্বীন হাসপাতাল। আদ-দ্বীন হাসপাতালের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। চিকিৎসক নার্সদের সেবা দেয়ার মানসিকতা। প্রতিদিন গড়ে ৭০০ রোগীর বহির্বিভাগ সেবা দেওয়া হয় এ হাসপাতাল থেকে। চিকিৎসাসেবার বাইরে হাসপাতালটিতে এমন কিছু সুবিধা রয়েছে যাতে রোগী বা তার পরিবারকে কোনো প্রয়োজনে বাইরে যেতে না হয়। এই হাসপাতালে গর্ভকালীন, গর্বোত্তর, নিরাপদ ডেলিভারি, পরিবার পরিকল্পনা, স্ত্রীরোগ, নবজাতক ও শিশু, টিকা, চর্ম, চক্ষু, নাক- কান,-গলা, মেডিসিন, হৃদরোগ, অর্থোপেডিক্স, ইউরোলজি, জেনারেল সার্জারী, ব্লাড ব্যাংক সেবাসহ সকল ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
এখানে মায়ের ছোঁয়া ক্যাফেটরিয়া, শিশু আউটডোর ও এনআইসিইউ রয়েছে। নবজাতক ইনটেনশিভ কেয়ার ইউনিট-এর প্রধান ডাঃ বেলাল হোসেন বলেন, পদ্মার এপাড়ে কেবল আমাদেরই এনআইসিইউ রয়েছে। যেখানে অপরিপক্ষ, অসুস্থ নবজাতককে নিবিড় পরিচর্যা করা হয়। এনআইসিইউ নবজাতকদের লাইফ সাপোর্টসহ সকল ধরনের উন্নতমানের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এতো কম খরচে দেশের আর কোথাও নবজাতকের এমন সেবা দেওয়া হয় না বলে দাবি করেন তিনি। আমাদের এনআইসিইউটি ২০ শয্যা বিশিষ্ট।
আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের কর্পোরেট অফিসের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তারিকুল ইসলাম মুকুল বাংলানিউজকে বলেন, আদ্-দ্বীনের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম সেখ আকিজ উদ্দিন স্যারের স্বপ্ন ছিলো হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দক্ষিণ বঙ্গের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে নামমাত্র মূল্যে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দীন স্যার নিরলস পরিশ্রম করে বাবার এই স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টা করছেন। আদ্-দ্বীন হাসপাতালের মূল লক্ষ্য হলো দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের স্বল্পমূল্যে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৭
এমআরএম/জেএম