ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ব্যাখ্যা অগ্রহণযোগ্য, ফের আসতে হবে স্বাস্থ্যসচিবকে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭
ব্যাখ্যা অগ্রহণযোগ্য, ফের আসতে হবে স্বাস্থ্যসচিবকে

ঢাকা: রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২৮ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অযোগ্যতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের দেওয়া ব্যাখ্যা গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে ফের হাজির হতে সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন।

ওই দুই কর্মকর্তা হলেন- ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন।

বুধবার (২৩ আগস্ট) বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। স্বাস্থ্যসচিবের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী।

মনজিল মোরসেদ জানান, রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২৮ জন শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় আদালতের রায়ে ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অযোগ্যতা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে অবহেলার বিষয়টি উঠে আসার পর তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- তা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।

এরপর স্বাস্থ্যসচিবের পক্ষে সোমবার (২১ আগস্ট) দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়- ওই দুই কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে। অথচ আদালত জানতে চেয়েছিলেন- কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা না নেওয়ার ব্যাখ্যা দিতে স্বাস্থ্যসচিবকে বুধবার তলব করেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে হাজির হন তিনি।
 
বুধবার হাইকোর্ট বলেন, ‘গত ১৬ মার্চ থেকে বিবাদীরা বসে আছেন, কোনো ব্যবস্থা নেননি। ওই ঘটনায় মোট ৭৬ জন শিশু মারা গেছে। আপনি (দুই কর্মকর্তা) বহাল তবিয়তে আছেন। আর বলছেন, দেখছি’।

এ সময় ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘আগে সতর্ক, তারপর বরখাস্ত। সতর্ক না করা হলে জটিলতার ‍সৃষ্টি করতো’।

আদালত বলেন, ‘আপনিতো (দুই কর্মকর্তা) জামাই আদরে আছেন’।

মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘দু’জনকে বদলি বা বরখাস্ত- কিছু করেনি’।

তখন আদালত বলেন, ‘ব্যবস্থাতো নেওয়া হয়নি। আমরাতো আগে থেকে বলেই আসছি’।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার এ বিষয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম ও পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

আদালত বলেন, ‘আদালতকে আর খাটো করার চেষ্টা করবেন না। মার্চ থেকে বলে আসছি’।

একপর্যায়ে কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘ব্যবস্থা নেওয়ার আগে কারণ দর্শাও (শো’কজ) ও তদন্ত আছে। আমরা ব্যাখ্যা তৈরির সময় পাইনি। আমাদের সময় দরকার’।  

তখন আদালত বলেন, ‘বৃহস্পতিবার যথাযথভাবে ব্যাখ্যা দেবেন। ৭৬ জন শিশু মারা গেলো। আপনার (সচিব) ছেলে-মেয়ে এখানে থাকে না। যারা মারা গেছে, এরাতো মরার জন্য জন্মেছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক। এদেশ গরিব হতে পারে। এভাবে শিশুরা মারা যাবে, সে শিক্ষাতো কাউকে দেয়নি’।

২০০৯ সালে রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে সারাদেশে অনেক শিশু মারা যায়। এ ঘটনায় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পক্ষ থেকে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলার বিচার শেষে গত বছরের ২৮ নভেম্বর পাঁচজনকে খালাস দেন বিচারিক আদালত।

ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারিক আদালত বলেছিলেন, ‘ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর মামলাটি করার ক্ষেত্রে ১৯৮০ সালের ড্রাগ আইন যথাযথভাবে অনুসরণ করেনি। মামলায় যথাযথভাবে আলামত জব্দ ও তা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো এবং রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন আসামিদের দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে ড্রাগ আইনের ২৩, ২৫ ধারা প্রতিপালন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তৎকালীন ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম ও আলতাফ হোসেন চরম অবহেলা, অযোগ্যতা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন’।

পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। গত ০৯ মার্চ ওই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।