ভারতীয় তরুণ ফুড আর্টিস্ট (শেফ) সুপ্রিয় পালের (৩৬) হাত ধরে এখানে তৈরি হচ্ছে জিভে জল আনা চকলেটের স্বাদে বাহারি ধরনের পেস্ট্রি থেকে কেক। যে উদ্যোগ সাভারে ভোজনরসিকদের কাছেও তুলে দিয়েছে চকলেটের নতুন স্বাদ আর বৈচিত্র্য- বলছিলেন ক্যাফে মেট্রোর স্বত্বাধিকাকারী আশরাফুজ্জামান।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়ে সেখান থেকে নামী-দামি ফাস্টফুড শপে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে আশরাফুজ্জামান সাভারে গড়ে তুলেছেন ‘ক্যাফে মেট্রো’।
সাশ্রয়ী দাম। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, সুস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করে সাভারবাসীর নজর কাড়তে খুব বেশি সময় লাগেনি সেই মেরিন ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুজ্জামানের।
এখন ক্যাফে মেট্রোই যেন ব্র্যান্ড। সাভার মহিলা কলেজের পাশের ছোট্ট একটি শপ থেকে যাত্রা শুরু করে এরইমধ্যে মেট্রো শপ খুলে ফেলেছে তিনটি শাখা। দু’টিই সাভারে আবুল কাসেম সন্দ্বীপ সড়কে (থানা রোডে)। অন্যটি ব্যাংক কলোনিতে।
আশরাফুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, ভোজনরসিকদের মুখে বৈচিত্র্যময় নতুন স্বাদের খাবার তুলে দিতেই প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকেন তিনি। ফাস্টফুড বলতে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের মাঝে এক ধরনের ভীতি রয়েছে। সেটি কাটিয়ে কোন খাবারটা বরং স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো তা নিয়েই কাজ করেন তিনি। আর সেই চিন্তা-চেতনা থেকেই নতুন নতুন খাবার নিয়ে হাজির হন নিজের রেস্টুরেন্টে। এর অংশ হিসেবে চকলেটের স্বাদে নতুন নতুন খাবারের আইটেমে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ভোজনরসিকদের।
স্বাদে ভরপুর চকলেট কেক, চকলেট চিপস কুকিজ, পিউর চকলেট ব্রাউনি, বাটার্স স্কচ কেক, মোল্ডেড চকলেট উইথ ফিলিংসসহ নানা মুখরোচক লোভনীয় খাবার মিলছে এখন ক্যাফে মেট্রোতে।
আশরাফুজ্জামান জানান, ছোট-বড় সব বয়সের মানুষই চকলেট খেতে ভালোবাসেন। ডায়াবেটিক রোগীদেরও কিন্তু বিশেষ মোহ রয়েছে চকলেটের প্রতি। অনেকেই আবার শরীর-স্বাস্থ্যের কথা ভেবে চকলেট খান না। কিন্তু একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হার্টের রোগীদের জন্য ডার্ক চকলেটের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কালো চকলেট রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়, রক্তচাপ কমায় এবং রক্তনালী কোমল রাখে, তাই হার্টের জন্য ভালো।
‘এসব বিবেচনায় চকলেট দিয়ে নতুন স্বাদের নানা আইটেম এখন আমরাই তৈরি করছি সাভারে। রকমারি চকলেট স্বাদের এসব খাবারের আইটেম তৈরিতে আমাদের কারিগরি বিষয়টি দেখছেন ভারতীয় ফুড আর্টিস্ট সুপ্রিয় পাল। ’
কথা হচ্ছিল সুপ্রিয় পালের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, চকলেট দিয়ে রকমারি স্বাস্থ্যসম্মত নানা ধরনের খাবার তৈরি করতে হয় তার। প্রশিক্ষণ দিতে তাকে ছুটে বেড়াতে হয় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে।
সম্প্রতি শ্রীলংকা থেকে ফিরে আসা সুপ্রিয় জানান, চমৎকার ডেকোরেশনে চকলেটের স্বাদে নানা ধরনের বেকারি পেস্ট্রি ফুডে বাংলাদেশিদের আগ্রহ বেশি। আমাদের দেখতে হবে খাবারটি কতটা স্বাদের আর কতটা স্বাস্থ্যকর। সেটাই হাতে-কলমে শিখিয়েছি ক্যাফে মেট্রোর শেফদের।
প্যারামাউন্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের খাদ্য আমদানিকারক ফুডেক্স ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকেই সুপ্রিয় পাল বাংলাদেশে নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করছেন।
ফুডেক্স ইন্টারন্যাশনালের করপোরেট ম্যানেজার ইমরান হোসেন বাংলানিউজকে জানান, চকলেট হতে পারে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত একটি খাবার। তবে তা হতে হবে সঠিক মান আর গুণের। চকলেটের মূল উপাদান আসে কোকো বিন বা বীজ থেকে। কোকো বা কোকোয়া দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন উপত্যকার উদ্ভিদ। আমেরিকা মহাদেশ ছাড়িয়ে এর চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে আফ্রিকার আইভরি কোস্ট, ঘানা, নাইজেরিয়া ও ক্যামেরুন, এশিয়ার মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও নিউগিনিতে। ক্রমান্বয়ে তা দক্ষিণ ভারত ও উড়িষ্যা রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
ফুডেক্স ইন্টারন্যাশনাল মূলত বিশ্বসেরা কোকোয়া থেকে ‘মরডে কোকোয়া চকলেট’ ব্র্যান্ডের নামে ফুডিং চকলেট, কুকিং চকলেটের নানা উপকরণ সরবরাহ করছে।
সাভারে চকলেটের স্বাদ আনা নতুন ধরনের এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে বলে জানাচ্ছেন ক্যাফে মেট্রোর স্বত্বাধিকারী আশরাফুজ্জামান। গ্রাহকদের কাছ থেকেও ভূয়সী প্রশংসা পাওয়ার কথাই বলছিলেন কণ্ঠে ভরপুর উত্তেজনা নিয়ে।
সাভার ফুড ব্যাংক নামে ভোজনরসিকদের গ্রুপ পেজে সক্রিয় থাকা শিক্ষার্থী নিতু রহমান বাংলানিউজকে জানান, ক্যাফে মেট্রোতে চমৎকার পরিবেশে নতুন নতুন খাবারের সমারোহ। সব মিলিয়ে ক্যাফের মেট্রো সত্যিই ঝড় তুলেছে সাভারে।
আরও পড়ুন
মেরিন ইঞ্জিনিয়ার থেকে সুপার শেফ আশরাফুজ্জামান
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৭
এইচএ/