ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ডায়াবেটিসের ওষুধ দূর করবে অ্যালঝেইমারও!

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৮
ডায়াবেটিসের ওষুধ দূর করবে অ্যালঝেইমারও! অ্যালঝেইমার রোগ ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। ছবি: সংগৃহীত

অ্যালঝেইমার বা মস্তিষ্কের স্মৃতিহীনতা রোগ হলে মানুষ স্মৃতিশক্তি হারাতে থাকে। এক সময় নিজের যাপিত জীবনের কিছুই আর মনে থাকে না তার। আবার টাইপ ২ ডায়াবেটিস অ্যালঝেইমারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর এবং এটি এ রোগ বাড়াতে সহায়ক।

এতোদিন নিদারুণ রোগটির তেমন কোনো চিকিৎসা না থাকলেও এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, ডায়াবেটিসের ওষুধই অ্যালঝেইমারের উপসর্গগুলো দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

বিজ্ঞানীরা সম্ভাব্য ওষুধ উদ্ভাবন করেছেন, অ্যালঝেইমারের উপসর্গে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে তৈরি ওষুধটি ইদুরের ওপর প্রয়োগ করে দেখা গেছে, এটি উল্লেখযোগ্যহারে স্মৃতিশক্তি হারানোর বিপরীতে কাজ করতে সমর্থ।

জার্নাল ব্রেইন রিসার্চ পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক ক্রিশ্চিয়ান হোলসকারের নেতৃত্বে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘ওষুধটির অ্যালঝেইমার রোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী নিউরোডিজেনরটি ডিসঅর্ডারের জন্য নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিতে উন্নীত হওয়ার স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি রয়েছে’।

‘এটি মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ফ্যাক্টরের মাত্রা বাড়িয়েছে, যা স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা রক্ষা করে, মস্তিষ্কের অ্যালজাইমার, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেনের সাথে সংযুক্ত অ্যাইয়াইলয়েড ফলকগুলোর পরিমাণ হ্রাস করে। ওষুধটি স্নায়ুকোষের ক্ষতির হারও নিচে নামিয়ে আনে’।

অ্যালঝেইমার রোগ ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। এটি একটি বর্ধনশীল রোগ, যা স্মৃতিশক্তি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মানসিক কার্যকারিতা ধ্বংস করে। ডিমেনশিয়া সংক্রান্ত গবেষণা দাতব্য প্রতিষ্ঠান অ্যালঝেইমার সোসাইটির মতে, ২০৫১ সালের মধ্যে ব্রিটেনের ২০ লাখের বেশি মানুষের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অ্যালঝেইমার সোসাইটির গবেষণা ও উন্নয়ন পরিচালক ড. ডগ ব্রাউন বলেন, ‘এ ওষুধটি কাজ করলে আগামী ১৫ বছর কোনো নতুন চিকিৎসার সঙ্গে অ্যালঝেইমার মোকাবেলার নতুন উপায় খুঁজতে হবে না’।

‘ওষুধটিকে উন্নত করা গেলে এটি  অ্যালঝেইমার ও ডিমেনশিয়ার অন্যান্য ফর্মগুলোর সঙ্গে মানুষের উপকার করতে পারে। গবেষণার এ পদ্ধতিটি তাদের প্রয়োজনে নতুন ওষুধের প্রতিশ্রুতিও লাভ করতে পারে’।

যদিও ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝেইমারের কোনো নির্দিষ্ট প্রতিকার নেই। তবে মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে পুষ্টিকর ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার ও শরীরচর্চা সহায়ক। বায়তানাথের ক্লিনিক্যাল অপারেশনস অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন ম্যানেজার ড. আশুতোষ গৌতম বলেন, ‘অশ্বগন্ধা ও ব্রাহ্মীর মতো উদ্ভিদগুলো মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তির ফাংশনকে মনোযোগ ও ঘনত্বের মতো উন্নতি এবং স্নায়ুকোষের ক্ষতি প্রতিরোধে সাহায্য করে’।

ভিটামিন সি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চলাফেরা এবং ভিটামিন বি বয়সজনিত মস্তিষ্কের সংকোচন ও জ্ঞানীয় ক্ষতিকারকতা থেকে রক্ষা করে। কালো মুরগির মাংস, চিংড়ি মাছ, ফল, মাছ, সবুজ শাক-সবজি, মাশরুম, চিনাবাদাম, তিলের বীজ, ডিম মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে সংশোধন করে।

একটি পুষ্টিকর বীজ ও বাদাম উল্লেখযোগ্যভাবে মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে কুমড়ার বীজ স্মৃতিশক্তিকে তীক্ষ্ম করতে দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করে। আখরোটও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও স্মৃতিশক্তি দক্ষতার গুরুত্বপূর্ণ অন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলোর একটি ভাল উৎস। সূর্যমুখী বীজসহ অন্যান্য বাদাম এবং বীজ ভিটামিন ই এর ভালো উৎস, যা মস্তিষ্ক শক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যায়ামও হৃদস্পন্দনকে বাড়িয়ে দেয়, যা মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহিত করে, যা স্মৃতিশক্তিকে ধারালো রাখে, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য, চেতনা ও হিপোকাম্পাসকেও বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা বা নাচাও মস্তিষ্কের দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতির অনুঘটক।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৮
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।