ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘এলিফ্যান্ট ডিজিজ’এ আক্রান্ত আব্বাস বাঁচতে চায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
‘এলিফ্যান্ট ডিজিজ’এ আক্রান্ত আব্বাস বাঁচতে চায় ‘এলিফ্যান্ট ডিজিজ’এ আক্রান্ত আব্বাস

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার দিনমজুর রাজ্জাক শেখের একমাত্র ছেলে আব্বাস (১৩) বিরল রোগে আক্রান্ত। দিন দিন তার একটি পা ফুলে অস্বাভাবিক আকার ধারণ করছে। এছাড়াও ছোট-বড় আঁচিলে ভরা পুরো শরীর।

এ অবস্থা থেকে সুস্থ জীবনে ফিরতে চায় আব্বাস। বাঁচতে চায় অন্য আর ১০টি স্বাভাবিক কিশোরের মতো।

দিনমজুর রাজ্জাকের ঘরে আরো রয়েছে ২৪ বছরের এক প্রতিবন্ধী মেয়ে। যার জীবন কাটছে বিছানায় শুয়ে। এছাড়াও ৪০ বছর ধরে প্রতিবন্ধী এক বোনও রয়েছে তার কাছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার রাজৈর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের আলমদস্তার গ্রামের রং মিস্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক শেখের ৩ সন্তানের মধ্যে ২ মেয়ে ও ১ বোন জন্ম প্রতিবন্ধী। ৪০ বছর বয়সী বোন ইসমত আরা শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী। বিছানাতেই যার জীবন কাটছে। ২৪ বছর বয়সী বড় মেয়ে শারমীন আক্তারেরও একই অবস্থা। আদুরী আক্তার (১৭) নামের ছোট মেয়েটিও ছিল প্রতিবন্ধী। ৩ বছর আগে মারা গেছে প্রায় বিনা চিকিৎসাতে। এখন একমাত্র ছেলে আব্বাস ভরসার পরিবর্তে বোঝা হয়ে উঠছে দিনের পর দিন।

জন্মের পর তার ডান পা সামান্য মোটা ছিল, এছাড়া আর সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে ফুলতে থাকে তার পা। আর শরীরে উঠতে থাকে দানাদার আঁচিল। ছেলেকে সুস্থ করার জন্য শিশু বয়স থেকেই ছুটছেন চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে। কিন্তু কোনো পরিবর্তন দেখছেন না।

ডান পা ফুলে হাতির পায়ের সমান হয়ে গেছে। তা থেকে বের হচ্ছে এক ধরনের রস। এদিকে বয়সের তুলনায় শরীরের বৃদ্ধিও কম।
ছেলের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে পৈত্রিক স‍ূত্রে পাওয়া জমিজমা সবই শেষ করেছেন। থাকার মধ্যে আছে শুধু বসত বাড়িটুকু।

আব্বাসের বোন ও ফুফুজানতে চাইলে প্রতিবেশীরা জানান, ‘ছোট্ট আব্বাসের ডান পা ফুলে অস্বাভাবিক আকার ধারণ করেছে। সারা শরীরে ঘায়ের মত হয়ে গেছে। শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। আগে আব্বাস স্কুলে গেলেও এখন আর যেতে পারছে না। ওর সুচিকিৎসা দেওয়া এই গরীব পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

বিরল রোগে আক্রান্ত আব্বাসের বাবা রাজ্জাক শেখ বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে জন্ম থেকেই হাঁটতে পারে না। এক বোনেরও একই অবস্থা। বিছানায় রেখেই ওদের লালন পালন করছি। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। কোনো পরিবর্তন হয় নাই। জমিজমা সব গেছে। এখন পরিবারের সবার খাবার জোটানোই আমার পক্ষে কষ্টকর। চিকিৎসা করাবো কীভাবে?

অসুস্থ আব্বাস বলে, আমার পা দিন দিন ফুলে মোটা হচ্ছে আর সারা শরীরে গোটা গোটা হচ্ছে। আবার পা থেকে দুর্গন্ধ ও রস বের হচ্ছে। তাই স্কুলেও যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আমি ভালোভাবে বাঁচতে চাই।

রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার মণ্ডল বলেন, আব্বাস যে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছে এটাকে আসলে এলিফ্যান্ট ডিজিজ বলা হয়। তার পা দেখতে অনেকটা হাতির পায়ের মত। এই রোগটি যদিও জটিল কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বড় হাসপাতালে বিশেষ ধরনের অপারেশন ও ওষুধের মাধ্যমে এর চিকিৎসা সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।