প্রতিবেশী ভারত থেকে আমদানি করা ক্যাপসুলগুলো মানসম্পন্ন না হওয়ায় ক্রয় প্রক্রিয়ার সময়ই এর এনওসি (অনাপত্তিপত্র) দেয়নি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। কিন্তু পরবর্তীতে এনওসি ছাড়াই এসব মানহীন ওষুধ কেনা হয়।
এদিকে পরবর্তী ক্যাম্পেইনের ক্যাপসুল দিয়ে এ মাসেই ক্যাম্পেইন করে শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে অধিদপ্তর। শিগগির ক্যাম্পেইনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।
ক্যাপসুলে ঝামেলা চিহ্নিত করার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার (১৮ জানুয়ারি) গাজীপুরের কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করে দেখি একটি কৌটার সব ক্যাপসুল জোড়া লেগে বলের মতো হয়ে আছে। তবে কোথাও কোথাও ওষুধ ভালো রয়েছে। সিদ্ধান্ত হয় এই ওষুধ দেশের কোথাও ব্যবহার করা হবে না। বছরের দ্বিতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনের জন্য দেশি কোম্পানির কাছ থেকে আন্তর্জাতিক মানের ক্যাপসুল কেনা রয়েছে। এসব ক্যাপসুল মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ করে এই মাসেই ক্যাম্পেইন করা হবে। এখন তদন্ত চলছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ার পর রোববার (২০ জানুয়ারি) ছিলো প্রথম কার্যদিবস, প্রতিবেদন জমা দিতে হবে সাত কার্যদিবসের মধ্যে। আমাদের কেবল ওষুধ পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করতে হবে না। আরও কাজ আছে। তাই তদন্তের প্রতিবেদন জমা দিতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
এর আগে ১৮ জানুয়ারি দুপুরে কিশোরগঞ্জ সার্কিট হাউসে ‘ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুলের’ নমুনা পর্যবেক্ষণে যান স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান। সে সময় তিনি বলেন, মামলা করে ভারতীয় একটি অখ্যাত কোম্পানির কাছ থেকে নিম্নমানের ‘ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল’ কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। ক্যাপসুলের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ভিটামিন ‘এ প্লাস’ ক্যাম্পেইন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। ভারতীয় ওই কোম্পানির কোনো সুনাম নেই। সরবরাহ করা এসব ক্যাপসুল কৌটার সঙ্গে লেগে আছে। আলাদা করা যাচ্ছে না। কেন এ রকম হল পরীক্ষার পর তা বলা যাবে। নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে দেশের কোম্পানি থেকে কেনা সবুজ রঙের ট্যাবলেটে কোনো সমস্যা নেই। ‘ভিটামিন এ ক্যাপসুলে’ শিশুদের যেন কোনো প্রকার সমস্যা না হয়- সেজন্য আপাতত এ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে শিগগিরই এটা আবার শুরু করা হবে।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘এ’ ক্যাপসুল কেনার কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। প্রথমে একটি দেশি ওষুধ কোম্পানি সরবরাহের কার্যাদেশ পেলেও এর বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করে অ্যাজটেক নামের ভারতীয় এক কোম্পানি। এরপর ওই ভারতীয় কোম্পানিকে ওষুধটি সরবরাহের আদেশ দেয় আদালত। তারপর থেকে লাল রঙের এ ক্যাপসুল সরবরাহ করে আসছে অ্যাজটেক।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিদেশি কোনো কোম্পানির ওষুধ কিনতে হলে অবশ্যই সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। সেই অনুযায়ী ওষুধ প্রশাসনকে অনাপত্তিপত্র দিতে বলা হয়। কিন্তু ওষুধের মান যাচাই করে ওষুধ প্রশাসন অ্যাজটেককে অনাপত্তিপত্র প্রদান থেকে বিরত থাকে। অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় সে কোম্পানির ওষুধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরেজ ডিপার্টমেন্ট (সিএমএসডি)। এ পর্যায়ে ভারতীয় কোম্পানিটি আদালতের শরণাপন্ন হলে তাদের পক্ষে রায় আসে। আদালতে তারা জানায়, তাদের ওষুধের মেয়াদ ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত রয়েছে। তাই এই ওষুধ গ্রহণে কোনো বাধা থাকতে পারে না। আদালতের নির্দেশে ওষুধ প্রশাসনের অনাপত্তিপত্র ছাড়াই পরবর্তীতে এই ওষুধ স্টোরেজ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত ডিসেম্বরে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কথা ছিল শিশুদের। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষা, জাতীয় নির্বাচনসহ নানা কারণে তা পিছিয়ে যায়। জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছর দু’বার ৬-১১ মাস বয়সী শিশুকে নীল এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুকে লাল রঙের ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। রাতকানা রোগ প্রতিরোধের জন্য ১৯৯৪ সাল থেকে দেশের শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৯
এমএএম/এইচএ/