ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

লক্ষ্য অনুসারে কমেনি মা-শিশু মৃত্যুর হার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৯
লক্ষ্য অনুসারে কমেনি মা-শিশু মৃত্যুর হার গর্ভবর্তী মায়েদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘বাংলাদেশে মা ও শিশু মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমলেও স্বাস্থ্যসেবা সেক্টরের লক্ষ্য অনুসারে কমেনি। শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে এক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এ বিষয়ে সফলতা অর্জনটা খুব সহজ কাজ।’

মঙ্গলবার (২৮ মে) রাজধানীর মিরপুর-১৭ (পুরানো-১৩) এলাকায় অবস্থিত অবস্ট্রিটিক্যাল ও গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) হাসপাতালে আয়োজিত সচেতনতামূলক সভায় এ কথা বলেন বক্তারা।

আন্তর্জাতিক নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘মর্যাদা ও অধিকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতি সেবার অঙ্গীকার’।

সভায় বক্তারা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের মাতৃমৃত্যুর হার ৭০ এ নামিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতিবছর তিন লাখ ৩০ হাজার গর্ভবতী নারী মৃত্যুবরণ করেন। ২৬ লাখ মৃত জন্মসহ ৩০ লাখ শিশু অকালে মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি এক লাখ জীবিত শিশুর মধ্যে ১৭২টি মৃত্যুবরণ করে। ৩৭ শতাংশ মা প্রসবপূর্ব সেবা গ্রহণ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি হয় ৪৭ শতাংশ। আর প্রসব পরবর্তী সেবা গ্রহণ করেন ৭৩ শতাংশ নারী। প্রসবজনিত জটিলতার কারণে দেশে এখনও প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ জন মা মৃত্যুবরণ করেন। বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৪৭৫ জনে।

বক্তারা আরও বলেন, দেশে মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ রক্তক্ষরণ এবং খিঁচুনি। খুব স্বল্প মূল্যের ওষুধ দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু দেশীয় কোম্পানি এসব ওষুধ তৈরি না করায় এর প্রাপ্যতা সহজলভ্য করা সম্ভব হয় না। মানুষকে টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সরকার সারাদেশে এই সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। আর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সাধারণ জনগণের। তারা সচেতন হলে বা প্রসব প্রক্রিয়া শতভাগ হাসপাতালে করা সম্ভব হলে মা ও শিশু মৃত্যু একেবারে কমিয়ে আনা সম্ভব। আর এ ধরনের সচেতনতামূলক প্রোগ্রামে নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের সচেতন হওয়াও অনেক জরুরি।

ওজিএসবি’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক শাহলা খাতুন। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসি বেগম, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সাহেলা বেগম, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. লায়লা আরজুমান্দ বানু, ডা. রওশন আরা বেগম, অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার, অধ্যাপক ডা. রশীদা বেগম, অধ্যাপক ডা. পারভিন ফাতেমা, অধ্যাপক ডা. নজনীন কবীর, ডা. শারমিন আব্বাসি প্রমুখ।

এদিকে, দিবসটি পালন উপলক্ষে সকাল থেকেই গর্ভবতী মায়েদের বিনামূল্যে দিনব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করে ওজিএসবি হাসপাতাল। এর মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা, বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া এবং কাউন্সিলিং সেবা। মিরপুর-১৭ নম্বর এলাকায় এই হাসপাতালটি স্থাপিত হওয়ার কারণ এখানকার বেশিরভাগ রোগী দরিদ্র এবং অশিক্ষিত। এই এলাকার আশেপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি বস্তি এবং অধিক সংখ্যক গার্মেন্টস কর্মী। যে কারণে তাদের জন্যও এটি।

হাসপাতালটিতে প্রবেশের পর প্রথমেই দেখা যায় গর্ভবর্তী মায়েদের ওজন ও প্রেশার মাপা হচ্ছে। এরপর গর্ভবতী মায়েদের সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগী দেখছেন। এরপর পরামর্শ অনুসারে ওষুধ গ্রহণ এমনকি কাউন্সিলিং করা হচ্ছে তাদের। এই সম্পূর্ণ সেবাগুলো বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে ওজিএসবি’র পক্ষ থেকে।

সেবা গ্রহণকারী গর্ভবতী নারী রোজিনা বাংলানিউজকে বলেন, আমি জানতাম না আজকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হবে। এমনিতে প্রতি মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখানে আজ এসে ওজন এবং প্রেশার মেপে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধও নিয়েছি। আমার কিছু জটিলতা ছিল। আশা করি তা দূর হয়ে যাবে। তাছাড়া কাউন্সিলিংয়ের স্থানে গিয়ে বেশ কিছু অজানা সচেতনতামূলক তথ্য জানতে পেরেছি। যেমন গর্ভবতীদের পাঁচটি ঝুঁকির বিষয়টা সঠিকভাবে জানতে পেরেছি। তাছাড়া কী কী খাবার উপকারী ও তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে, তা-ও জানতে পেরেছি।

কাউন্সিলিং ক্যাম্পে কর্মরত চিকিৎসক ডা. ইশরাত জেরিন বাংলানিউজকে বলেন, কাউন্সিলিং ক্যাম্পে নারীরা কম আসছে। তারা ওজন ও প্রেশার মাপিয়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ওষুধ নিয়ে চলে যাচ্ছে। অনেক সাড়া পাচ্ছি আমরা। এছাড়া আমাদের এখানে প্রতি মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার আউটডোরের অন্যান্য দিনের নিয়মে সেবা বন্ধ থাকে। এ দিন আমরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিই। সেদিনও অনেক সাড়া পাই। এমনিতে এখানে ডাক্তার দেখাতে ২০০ টাকার একটি টিকিট কাটতে হয়।

সামগ্রিক বিষয়ে হাসপাতালটির ডেপুটি ডিরেক্টর মো. নাঈম বিন হাফিজ বাংলানিউজকে বলেন, মিরপুরের এই এলাকাটি একটি অনুন্নত এলাকা। এখানে অনেক অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া বিশেষ করে হাসপাতালে গর্ভপাতের জন্য জোর দিয়ে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৯
এমএএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।