ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

শেবাচিমের ইতিহাসে সেবা নিচ্ছে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৯
শেবাচিমের ইতিহাসে সেবা নিচ্ছে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী

বরিশাল: প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ২৪ ঘণ্টাতেই সর্বোচ্চ সংখ্যাক রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে। 

শনিবার (২৪ আগস্ট) হাসপাতালের অন্তঃবিভাগেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন এক হাজার ৯৭৯ জন রোগী। যা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৪৯ বছরে এই প্রথম।

 

মাত্র পাঁচশ শয্যার অর্গানোগ্রামের এই হাসপাতালে চার গুণ বেশি রোগী চিকিৎসাধীন থাকলেও তাদের সেবা দেওয়ার চিকিৎসক সংকট চরমে। বর্তমানে হাসপাতালের অর্ধেকেরও বেশি চিকিৎসক পদ শূন্য। চিকিৎসক-কর্মকর্তাসহ ২২৪টি পদের বিপরীতে তিন শিফটে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৯৯ জন চিকিৎসক।

সূত্র জানায়, ১৯৭০ সালে শেবাচিম হাসপাতালে ৩২৪ শয্যায় রোগীর চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। পরে সেটি ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০০ শয্যার হাসপাতালটিকে এক হাজার শয্যায় উন্নীতকরণ করেন। হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের সেবায় আউটডোর-ইনডোরে মোট ২৮টি বিভাগে রয়েছে ৪৪টি ইউনিট। দিন যতই বাড়ছে ততই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।  

তাই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), স্ক্যানু (এনআইসিইউ), বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি, কার্ডিওলজি, মেডিসিন, নিউরো মেডিসিন, গ্যাসট্রো অ্যানটোলজি, নেফ্রোলজি, জেনারেল সার্জারি, নিউরো সার্জারি, পেডিয়াটিক সার্জারি, ইউরোলজি, চক্ষু, নাক-কান-গলা, অর্থোপেডিক, গাইনি, আবস্টোট্রিকস, শিশু রোগ, নিউনেটোলজি, আইসোলেশন ও মানসিক রোগ বিভাগে শয্যা না পেয়ে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে হাসপাতালের মেঝেতে।

হাসপাতালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রায় ছয় লাখ রোগী চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকেন এ হাসপাতালে। কিন্তু চলতি বছরে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বছর সাত লাখেরও বেশি রোগী চিকিৎসাসেবা নিবেন এ হাসপাতাল থেকে। যার অন্যতম উদাহরণ শনিবার (২৪ ঘণ্টায়) হাসপাতালের অন্তঃবিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এক হাজার ৯৭৯ জন রোগী। যা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৪৯ বছরে এই প্রথম।  

এর আগে গত ২০ আগস্ট এক হাজার ৮৫১ জন, ২১ আগস্ট এক হাজার ৮৯৩ জন, ২২ আগস্ট এক হাজার ৮৫৭ জন ও ২৩ আগস্ট এক হাজার ৮২৫ জন রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

শনিবার ভর্তি হওয়া এক হাজার ৯৭৯ জন রোগীর মধ্যে ৪৯১ জনই শিশু রোগী। এছাড়া মেডিসিন বিভাগের চারটি ইউনিটে রয়েছেন ৪৫৬ জন ও সার্জারি বিভাগের ৪টি ইউনিটে রয়েছে ২৭২ জন। পাশাপশি ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৮৩ জন।

এদিকে হাসপাতালকে এক হাজার শয্যায় উন্নীতকরণের ঘোষণা দেওয়া হলেও বিগত সাত বছর ধরে ৫শ’ শয্যার জনবলসহ অর্গানোগ্রামেই চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। সেখানে চিকিৎসক থেকে শুরু করে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর তীব্র সংকট। বিশেষ করে চিকিৎসক সংকট চরমে।

শনিবার এ হাসপাতালে চিকিৎসক-কর্মকর্তাসহ ২২৪টি পদের বিপরীতে তিন শিফটে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৯৯ জন চিকিৎসক। হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসক সংকট কিছুটা কম থাকলেও অন্তঃবিভাগে এ সংকট আরও চরমে।  

সেখানে ৩৩ জন রেজিস্ট্রার পদে ১৮টি শূন্য, ৬৬টি সহকারী রেজিস্ট্রার পদের ৪৮টি, ১০টি অ্যানেসথেসিওলজিস্ট পদে ৪টি, ১০টি ইএমও পদের ২টি, ২০টি মেডিকেল অফিসার পদের ১৮টি ও ২০টি ইনডোর মেডিক্যাল অফিসর পদের ১১টি শূন্য রয়েছে।

একই অবস্থা বিরাজ করছে হাসপাতালটির আউটডোরের চিকিৎসকদের পদের ক্ষেত্রেও। প্রতিদিন আউটডোরে তিন হাজারের অধিক রোগীকে সেবা দিচ্ছেন হাতেগোনা কয়েকজন চিকিৎসক। বহির্বিভাগের ৪৬ জন এম.ও, সহকারী সার্জন ও ডেন্টাল সার্জনের মধ্যে ২২টি পদই শূন্য। একইভাবে প্যাথলজি বিভাগের ৮টি ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট পদের ৩টি পদই শূন্য। আর সেখানেই প্রতিদিন গড়ে পাঁচশ রোগীর রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হচ্ছে।

হাসপাতালের দ্বিতীয় শ্রেণির নার্স ও কর্মকর্তাদের ৮০৬টি বিভিন্ন পদের মধ্যে মাত্র ৩৭টি পদ শূন্য থাকলেও তৃতীয় শ্রেণির ১০২টি পদের মধ্যে ৩১টি ও ৪২৬টি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদের মধ্যে ১১৮টি পদই শূন্য রয়েছে।

বিপুল পরিমাণ রোগী ও তাদের সেবার দায়িত্বে থাকা পদের অর্ধেকেরও কম চিকিৎসকসহ জনবল নিয়ে সাধ্য অনুযায়ীই রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন।  

বাংলা‌দেশ সময়: ২২২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
এমএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।