ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

রেস্টুরেন্টে যাওয়ার আগে ফুডব্যাংক!

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯
রেস্টুরেন্টে যাওয়ার আগে ফুডব্যাংক!

ঢাকা: পরিবার-পরিজন বা বন্ধুদের নিয়ে কোথাও খেতে যাবেন অথবা অফিসিয়াল কোনো মিটিংয়ের জন্য রেস্টুরেন্ট বা হোটেলে যাবেন। কিন্তু কোথায় যাবেন? কাদের খাবারের মান ভালো, দামে মানানসই এবং ইন্টেরিয়র সুন্দর? এসব নিয়ে দ্বিধায় থাকলে আপনার সাহায্যে আসতে পারে ‘ফুডব্যাংক’। 

ফেসবুকভিত্তিক কমিউনিটি গ্রুপটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৪ সালে। শাবাব, অন্তর ও শীষ নামের তিন বন্ধুর উদ্যোগে যাত্রা আরম্ভ করে ফুডব্যাংক।

উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেখানে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা রেস্টুরেন্টে পাওয়া তাদের অভিজ্ঞতাগুলো রিভিউ আকারে প্রকাশ করবেন, যেন অন্যরাও বড় পরিসরে সেগুলো দেখতে পারেন। একইসঙ্গে তারা যেন বাছাই করে নিতে পারেন তাদের পছন্দের রেস্টুরেন্ট, হোটেল বা খাবার।  

সম্প্রতি গ্রুপটির মূল দায়িত্বে আসেন সাবিত হোসেন। মূলত তার হাত ধরেই বহুর্মুখী কাজ শুরু করে প্ল্যাটফর্মটি। সাবিত জানান, মূলত খাবার এবং রেস্টুরেন্টের অভিজ্ঞতা থেকে গ্রুপ সদস্যদের দেওয়া পোস্ট থেকেই উপকৃত হচ্ছেন অন্য সদস্যরা। একটি রেস্টুরেন্টের খাবারের স্বাদ, দাম, আশেপাশের পরিবেশ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহার, খাবারের একটি মান সম্পন্ন ছবি- এ ধরনের মৌলিক কিছু বিষয়ের ওপর রিভিউ দিতে হয় সদস্যদের। তাই যাচ্ছেতাই রিভিউ দিলেই গ্রুপে প্রকাশের জন্য তা অনুমোদন দেওয়া হয় না। ফলে যথাসম্ভব সঠিক রিভিউগুলোই সদস্যদের সামনে উঠে আসে প্ল্যাটফর্মটিতে। ফলে একজন নতুন গ্রাহক একটি রেস্টুরেন্টের অভিজ্ঞতা বা খাবারের স্বাদ নেবেন কি-না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।   

এদিকে ফুড রিভিউয়ের মাধ্যমে দেশের ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে ইতিবাচক বিপ্লব সাধিত হয়েছে বলে মনে করেন বিভিন্ন ফুড রিভিউ গ্রুপ এবং রেস্টুরেন্টের মালিক ও উদ্যোক্তারা। সাবিত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আপনি যদি পাঁচ থেকে সাত বছর আগেকার চিত্রও দেখেন, তাহলে দেখতেন যে ঢাকা শহরে রেস্টুরেন্ট ছিল কয়টা? যাও-বা ছিল সেগুলোতে নিয়মিত খেতে যেতো এমন মানুষ কতো ছিল? আমাদের ফুডব্যাংকের মতো দুই একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হওয়ায় একদিকে যেমন রেস্টুরেন্টের সংখ্যা বেড়েছে, তেমনি বিশাল এক গ্রাহক শ্রেণী তৈরি হয়েছে।  

সাবিত আরও বলেন, উত্তরার কোনো একটি ভেতরের দিকের এলাকার একটি ছোট গলির ভেতরে কেউ একজন দারুণ স্যুপ বানায়। এটির সম্পর্কে কেউ জানে না। ফুডব্যাংকের কল্যাণে দেখা গেছে সেগুলো সবাই এমনভাবে জেনেছে যে, সেই দোকানে গ্রাহকদের সিরিয়াল লেগে গেছে। মোহাম্মদপুরের বোবা বা কামালের বিরিয়ানি, লালবাগের রয়্যাল অথবা হাজারীবাগের মারুফের পায়া বিরিয়ানি; এসব কিছুর উঠে আসার পেছনে ফুডব্যাংকের মতো গ্রুপের বড় অবদান আছে। অন্যদিকে কোনো গ্রাহক কোথায় যাবে বা কী খাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অথবা তার অবস্থান থেকে আশেপাশে কোথায় ভালো পিজা, পাস্তা, বার্গার বা বিরিয়ানি এমনকি বাঙালি খাবার ভালো পাওয়া যায়; সেগুলো ফুডব্যাংক থেকে জানা যাচ্ছে সহজেই। আমাদের মনে হয় দেশের শীর্ষ তিন ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে হতে যাচ্ছে ফুড ইন্ডাস্ট্রি।  

তবে বিশাল এই গ্রুপটির পরিচালনায় বিশেষ সতর্কতাও অবলম্বন করতে হয় বলে জানান সাবিত। তিনি বলেন, গ্রুপে প্রতিদিন প্রায় দেড়শ’ রিভিউ জমা পড়ে। এর থেকে যাচাই-বাছাই করে আমরা পোস্ট অনুমোদন করি। আগে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক রিভিউ আসতো। সেসব রিভিউয়ের ফলে দেখা গেছে, কোনো কোনো রেস্টুরেন্টের ব্যবসায় বড় ধরনের সমস্যা হতো। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বেশিরভাগই কেসেই দেখা গেছে, নেতিবাচক রিভিউগুলো মিথ্যা বা সাজানো। তাই আমরা এখন নেতিবাচক রিভিউ অ্যাপ্রুভ করি না। আমরা মনে করি, কোনো গ্রাহকের কোনো রেস্টুরেন্টে বাজে অভিজ্ঞতা হলে সেটি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গেই মিটিয়ে ফেলতে পারেন। কারণ বর্তমান সময়ের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তারাও গ্রাহকসেবা প্রদানে বেশ আন্তরিক। সেখানেও সমাধান না হলে ভোক্তা অধিকারসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি সংস্থা আছে। আমরা এখন গ্রুপে শুধু পজিটিভ রিভিউ দেই।  

পজিটিভ রিভিউগুলোও যে খাবারের সঠিক প্রকাশ করে তার নিশ্চয়তা কী-এমন প্রশ্নের জবাবে ফুডব্যাংকের এই অ্যাডমিন বলেন, যখন কোনো নতুন একটি রেস্টুরেন্টের পজিটিভ রিভিউ আসে যার সম্পর্কে আমরা জানি না, সেগুলোতে আমরা নিজেরা আগে যাই। গ্রাহক হয়ে সেখানকার অবস্থা সম্পর্কে ধারণা নেই। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। তারপর এ ধরনের পজিটিভ রিভিউ অনুমোদন দেওয়া হয়।  

গ্রুপের বাইরেও খাবার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সফল আয়োজন ইতোমধ্যে করেছে ফুডব্যাংক। বিশেষ করে বছরখানেক আগে দেশের স্বনামধন্য রেস্টুরেন্টগুলো নিয়ে ‘ফুডল্যান্ড’ এবং ‘ডেজার্ট ফ্যাকটরি’ শীর্ষক আয়োজন ঢাকার ভোজনরসিকদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলে দেয়। বর্তমানে একটি স্মার্টফোনভিত্তিক কমার্সিয়াল অ্যাপ নিয়ে কাজ করছে ফুডব্যাংক। এই অ্যাপের মাধ্যমে রেস্টুরেন্ট খুঁজে বের করা, সেগুলোর রিভিউ দেখা, খাবারের মান যাচাই করা থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট বুকিং এবং খাবার হোম ডেলিভারিতে অর্ডারও করা যাবে। এছাড়াও সামাজিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অসহায় এবং ছিন্নমূল শিশু ও দুস্থ মানুষদের মাঝে খাবার বিতরণের কাজ করে ফুডব্যাংক।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৯
এসএইচএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।