বুধবার (২০ নভেম্বর) মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে সচিবালয়ে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ কর্মসূচির বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভা শেষে মন্ত্রী তার আশঙ্কার কথা জানান।
চলতি বছরে ডেঙ্গু জ্বরে নিহতদের মধ্যে ১৭৯ জনের মরদেহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১১২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, এবার ঢাকা শহরে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব দেখেছেন। কিন্তু আগামীতে যে গ্রামে ছড়িয়ে যাবে না- এটার নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না। কারণ, গ্রাম তো আর সেই গ্রাম নেই। এখন প্রায় বাড়িতে বিল্ডিং, সেই বিল্ডিংয়ে ছাদ আছে, ছাদের মধ্যে পানি জমবে। ইতোমধ্যে এডিস মশা শহর থেকে গ্রামে কম-বেশি মাইগ্রেট করেছে। আমরা এবার সব জায়গাতেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখেছি।
উন্নত দেশে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব নিয়ে মন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ১৯৯৯ সালে এক হাজার লোক মারা গেছে, ১০ লাখের বেশি আক্রান্ত হয়েছে। আমরা সেসব রেফারেন্স জানি। সেখানে আমাদের দেশ জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। আর তাদের ঘনত্ব খুব কম। এক জায়গায় মশা কামড় দিয়ে আরেক জায়গায় যেতে যেতে সেটি মারাই যায়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি ডিম পাড়তে না পারে তাহলে বেঁচে থাকা মশার জন্য কষ্টকর। আর, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডিম পাড়তে হলে একটা লোককে কামড়াতে হবে। কামড়াতে না পেরে সেটি পথেই মারা যাবে।
‘কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র এরকম না। কয়েকশ’ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আরেকজনকে কামড়ানোর ব্যবস্থা নাই। বাংলাদেশে প্রতি মিটারেই কয়েকজন লোক রয়েছে। এজন্য, এটা আমি খুব গুরুত্ব দিতে বলবো। এটা নিয়ে একটা ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট করতে হবে, গবেষণা করতে হবে। ’
গ্রাম-গঞ্জে এডিস মশা রোধে স্কুলের শিক্ষার্থী ও চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন মন্ত্রী।
প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যসূচিতে এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় অন্তর্ভুক্ত করার ওপর জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকরা তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের শেখাবেন এবং বাড়িতে গিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ফলে, কোনো গৃহস্থালি বাদ থাকবে না। পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মোটিভেট করতে হবে।
‘প্রতিটি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের আমরা যদি মোটিভেট করতে পারি, তাহলে তারা তাদের বাড়িতে গিয়ে মা-বাবাদের বলবে। এজন্য তাদের কারিকুলাম কী হবে সেটা আমরা ঠিক করে দেবো। ’
মশা নিধনে ওষুধ ছিটানো ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, মানুষের শরীরে একশ’ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া আছে। এই ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ৯৯ শতাংশ প্রয়োজনীয় আর ১ শতাংশ বা তারও কম ক্ষতিকর। যে ব্যাকটেরিয়াগুলো প্রতিরক্ষার কাজ করছে, সেগুলো যদি মেরে ফেলেন, তাহলে আপনার বেঁচে থাকার কোনো সুযোগ আছে?
‘আমি খুব দুঃখ করে বলছিলাম, মানসিক কষ্ট নিয়ে বলছিলাম, মশা মারতে গিয়ে তো মানুষ মেরে ফেলা যাবে না। আমি এমনভাবে ইনসেকটিসাইড স্প্রে করছি যে, মশাগুলো খেয়ে ফেলবে, ধ্বংস করবে, এধরনের প্রাণীও যেন মারা না যায়। এজন্য আমাদের খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ’
এবার মশার প্রাদুর্ভাব নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি হারিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পুনরুদ্ধার হয়েছি। এগিয়ে যাচ্ছি, অর্থাৎ আগামী দিন আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সাহস ও বিশ্বাস থাকতে হবে। এখানে কোনো ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা নিজেদের মতো কাজ করবে।
উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নিয়েছেন এবং আপনাদের সবাইকে দায়িত্বের সঙ্গে অংশ নিতে বলেছেন। সে কারণে আজকে অনেক দূর এগিয়েছি। হতাশার কোনো কারণ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৯
এমআইএইচ/এফএম