ঢাকা: কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে আইভারমেকটিন ওষুধের কার্যকারিতা আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য গবেষকেরা। করোনায় মৃদু আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন একসঙ্গে প্রয়োগের তুলনায় শুধু আইভারমেকটিনের বড় ডোজ পাঁচ দিনব্যাপী প্রয়োগে অধিক কার্যকর ফলাফল মিলেছে।
সোমবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে করোনা আক্রান্ত রোগীর উপর আইভারমেকটিন, ডক্সিসাইক্লিন ও প্লাসিডো ওষুধ প্রয়োগের কার্যকারিতা বিষয়ক এক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের পৃষ্ঠপোষকতায় এই গবেষণা পরিচালনা করে আইসিডিডিআর,বি। রাজধানীর তিনটি হাসপাতাল থেকে ৬৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে এই গবেষণা পরিচালিত হয়।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে আইসিডিডিআর,বির গবেষক ও বিজ্ঞানী ড. ওয়াসিফ আলী খান বলেন, গত ১৭ জুন থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (ডিএমসি), মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে অংশ নেওয়া ৬৮ জন রোগীর উপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। এটিই দেশের প্রথম র্যা ন্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল (আরসিটি)।
‘এখানে দেখা গেছে, গবেষণার আওতায় যেসব রোগী অ্যান্টি প্যারাসাইটিক ওষুধ আইভারমেকটিনের পাঁচদিনের কোর্স পেয়েছেন তাদের ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স ও রক্তের বিভিন্ন বায়োমার্কারের উন্নতি দেখা গেছে। ’
গবেষণা ফলাফলে আরও জানানো হয়, মৃদু করোনায় আক্রান্ত এসব রোগীর মধ্যে যারা পাঁচদিন ধরে শুধু আইভারমেকটিন নিয়েছেন তাদের ৭৭ শতাংশ ১৪ দিনের মাথায় করোনামুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে যারা আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন নিয়েছেন তাদের ৬১ শতাংশ এবং শুধু প্লাসিডো পাওয়া ৩৯ শতাংশ রোগী করোনামুক্ত হয়েছেন।
একই সঙ্গে আইভারমেকটিন প্রয়োগের কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এরই মধ্যে এই গবেষণার ফলাফলের উপর একটি প্রবন্ধ বিগত ২ ডিসেম্বর জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজেস এ প্রকাশিত হয়েছে বলে গবেষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এসময় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন বলেন, করোনার শুরুর দিকে আমরা যে কী করবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কারণ এত এত ডাক্তার কেউ জানতো না যে কী করতে হবে। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ছিল চিকিৎসকদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। তাই শুরু থেকেই বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল এ বিষয়ে কাজ করা শুরু করে।
‘আইভারমেকটিন খুব পুরনো এবং সস্তা একটি ওষুধ। আমাদের মতো দেশে এ ধরনের ওষুধ যদি আসলেই কাজে আসে তাহলে খুব উপকার হবে। সবাই এখন পর্যন্ত ভালো ফলাফলের কথা জানিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস এই গবেষণা চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করবে। ’
তবে এই গবেষণার ফলাফল এখনই অনুসরণ করা যাবে না বলে সতর্ক করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ কবির। বরং এই গবেষণা করোনা মোকাবিলায় ন্যাশনাল প্রটোকল ও গাইডলাইনের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
অধ্যাপক আহমেদ কবীর বলেন, আমাদের এই গবেষণার অর্থ এই নয় যে এখনই সবাই এই ওষুধ খাওয়া শুরু করুন। সব ওষুধ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ও পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। করোনা মোকাবিলায় ন্যাশনাল গাইডলাইন এবং প্রটোকলের সঙ্গে এটি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক তারেক আলম, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ড. এম এ হাসনাত এবং মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক ডক্টর রশিদা ইয়াসমিনসহ অন্য গবেষক ও চিকিৎসকরা বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২০
এসএইচএস/এএ