ঢাকা: স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিচতলার একপাশে এক্স-রে কক্ষ। এক্স-রে হয় না।
এখানেই শেষ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালটির এক্স-রে কক্ষের সামনে দোতলার সুয়ারেজ পাইপ থেকে ময়লা পানি পড়ে। সেই ময়লা পানি ছড়ানো রোধ করার জন্য মেঝের টাইলসের ওপর বালি ফেলে রাখা হয়েছে।
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখেছে সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
এ বিষয়ে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। পরে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়গুলো জানিয়েছে সরকারের একমাত্র প্রকল্প তদারকী বিভাগ আইএমইডি।
হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের জানালার গ্লাস নেই, বাথরুমের পানি নিচতলায় পড়ে। মহিলা ওয়ার্ডেও একই অবস্থা। ছাদের পানি উপচে নীচে পড়ে, নিষ্কাশন পাইপ ভাঙা। ফলে বাথরুমের পানি হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে পড়ছে।
আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সম্প্রতি হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন এবং মতবিনিময় করেছেন। ওই পরিদর্শনের ওপর ভিত্তি করে তার তৈরি একটি প্রতিবেদনে হাসপাতাল নির্মাণে নানা ত্রুটি উঠে এসেছে। পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক ২ ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি পরিদর্শনে যান। হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে।
আইএমইডি সরেজমিন প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, হাসপাতালটির নিচতলার দেয়ালে টাইলস বসানো হয়েছে। ইলেকট্রিক ওয়্যারিংগুলো ঝুলে আছে যা দেখতে খারাপ দেখাচ্ছে। দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে টাইলস বসানো হয়নি, দোতলায় আংশিক টাইলস বসানো হয়েছে। দোতলার স্টোর রুমে ডিস্টেম্পার করা হয়েছে। কিন্তু একদিকের দেয়াল স্যাঁতসেঁতে। পানি চোয়ানো বন্ধ না করেই দেয়ালে রঙ করা হয়েছে। স্টোর রুমের দরজার কপাট ভাঙা। ভাঙা কপাটেই রঙ করা হয়েছে। আইএমইডি এতে মনে করছে দরজা আর মেরামত করা হবে না।
দোতলার অটোক্ল্যাভ রুমে ময়লা কাপড় চোপড় রাখা হয়েছে। পাশেই প্রসূতি মায়েদের লেবার রুম। দোতলার পুরুষ ওয়ার্ড সংলগ্ন বাথরুম ব্যবহার করলে পানি বাইরে চলে যায়। মহিলা ওয়ার্ডের বাথরুমের একই অবস্থা। এসব তদারকির জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা চলতি বছরের ০৯ জুলাই ১৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করে। মেডিকেল অফিসার থেকে শুরু করে ওয়ার্ড বয় পর্যন্ত ঐ কমিটিতে আন্তর্ভূক্ত আছেন।
প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, নার্সিং স্টেশনের কাজ করা হয়নি। তাই নার্সদের বসার জায়গা নেই। নার্সরা করিডরে বসে সেবা প্রদান করছেন। এই অবস্থায় সুষ্ঠু সেবা কার্যক্রমের স্বার্থে নার্সিং স্টেশনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
আন্তঃবিভাগের পুরুষ ওয়ার্ড ও মহিলা ওয়ার্ডের বাথরুমে টাইলস বসানোর ফলে বাথরুমের প্রবেশ মুখে পানি জমে থাকে। অবিলম্বে বিষয়টি সুরহা করা প্রয়োজন বলে মনে করে আইএমইডি। বাথরুমের পাশেই দুটি বাথরুমের কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। জানালার গ্লাস নেই। রান্নাঘর, বাথরুম ও অন্যান্য স্থানের জানালার কাচ নষ্ট হয়ে গেছে। দ্বিতীয়তলার স্টোর রুম তিনটির বাথরুমসহ কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। স্যানিটারি রুম, এক্স-রে রুম, যক্ষা-কুষ্ঠ রুম, ইপিআই রুম, জেনারেটর রুমে কোনো কাজ হয়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রতিটি কক্ষের জানালায় গ্রিল ও মূল কলাপসিবল গেট প্রয়োজন।
পরিদর্শনে দেখা গেছে, বাবুর্চিখানা হয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ড পর্যন্ত সিসি রাস্তা করা প্রয়োজন। পানির পাম্প হাউজের দরজা, জানালা ও ছাদ, আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগসহ বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত করা দরকার। আইসোলেশন ওয়ার্ডের বিদ্যুৎ সংযোগ, ফ্লোর ও বাথরুমে টাইলস বসানো দরকার। ভিজিটর রুমে টাইলস বসানো দরকার।
ইতোমধেই আইএমইডি চলতি বছরের পয়লা নভেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, নির্বাহী প্রকৌশলী, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে, হাসপাতালটির মেরামত, সংস্কার কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় কাজে কর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে চিঠিতে বলা হয়েছে, পুরুষ ওয়ার্ডের বাথরুমের ময়লা পানি দীর্ঘদিন ধরে অনবরত নীচতলায় পড়ে সম্পূর্ণ করিডোর নোংরা হয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং করিডর দিয়ে চলাচল করা যায় না কাজে কর্মে অসুবিধা হচ্ছে। ভিজিটর রুম সংলগ্ন দুটি বাথরুম মেরামত না হওয়ায় গর্ভবর্তী মায়েদের বাথরুমে যেতে কষ্ট হচ্ছে।
আইএমইডি সচিব বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালটি পরিদর্শন করে আসার পর আমি একাধিকবার হাসপাতালের সহকারী প্রকৌশলী এবং একবার নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। তাদের সঙ্গে আলাপ করে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে আমি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে বিস্তারিত জানিয়েছি। তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
এমআইএস/এজে