ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের কেনাকাটায় সিন্ডিকেটের থাবা!

সুমন কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২১
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের কেনাকাটায় সিন্ডিকেটের থাবা! সংগৃহীত ছবি

টাঙ্গাইল: দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়ম আর একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। এতে হাসপাতালটির চিকিৎসা ব্যবস্থা দিন দিন ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে।

 

এছাড়া প্রতি বছর এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে বিভিন্ন কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বিনিময়ে সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঠিকাদারের কাছ থেকে পাচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। এতে করে প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে টাঙ্গাইল হাসপাতালের খাতে।

তবে প্রতি বছর যে টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়, সেই অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করলে টাঙ্গাইল জেলাবাসীর চিকিৎসার জন্য যতেষ্ট বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।  

তারা বাংলানিউজকে জানান, প্রথমে দরপত্রের পুরো টাকাই সিন্ডকেটের মাধ্যমে ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়। পরে আবার আহ্বানকৃত দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় পুনরায় আবার বরাদ্দ এনে তার অর্ধেক কাজ করা হয়।

এবারও ২০২০-২১ অর্থবছরের এমএসআর (মেডিক্যাল ও সার্জিক্যাল রিইকুইজিট) সামগ্রী কিনতে ওষুধপত্র, লিলেন, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি, গজ ব্যান্ডেজ কটন, কেমিক্যাল রি-এজেন্ট এবং আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য ৬টি গ্রুপে দরপত্র আহ্বান করে। এই দরপত্রে টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।  

এর মধ্যে প্রান্তিক এন্টারপ্রাইজ, লোটাস সার্জিকাল ও শামছুল হক ফার্মেসিসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অন্য সব দরপত্র বাতিল করে হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ও ঠিকাদারের যোগসাজশে নিজেদের পছন্দ মতো ঠিকাদার রাফি ও সাফি মেডিক্যাল হক, জুয়াইরিয়া ইন্টারন্যাশনাল, ফারুক ট্রেডার্স ও মক্কা ট্রেডার্সকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে প্রস্তাব পাঠায়। যা আইনসঙ্গত হয়নি। এর আগে গত ২০১৯-২০ এই তিন প্রতিষ্ঠান টাঙ্গাইল হাসপাতালে মালামাল সরবরাহে কাজ করে।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৮ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৬ বিধি ভঙ্গ করে অজ্ঞাত কারণে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা।  

এ ঘটনায় তিন ভুক্তভোগী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালকের বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতেই নজরে আসে কর্তৃপক্ষের। পরবর্তীকালে টাঙ্গাইল থেকে পাঠানো পছন্দের ঠিকাদারের সব কাগজপত্র ফেরত পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা এবং একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তার সঙ্গে ১ কোটি টাকা চুক্তি করা হয়। সেই অনুযায়ী নগদ টাকা, চেকের মাধ্যমে এবং অগ্রিম চেক দেওয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য ঠিকাদারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ০৪ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) পছন্দের পাঁচ ঠিকাদারের কাগজপত্র ফেরত পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে করেই বেকায়দায় পড়ে যান ওই পাঁচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

এ ব্যাপারে প্রান্তিক এন্টারপ্রাইজ প্রোপাইটর কাজী আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি শিডিউলে উল্লেখিত সব শর্তাবলী পূরণ করে টেন্ডারে অংশ নেই। আমার সব কাগজপত্র বৈধ, কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই যাচাই-বাছাইয়ে শিডিউল বাতিল করা হয়। যা আইনসঙ্গত হয়নি।  

তিনি আরও জানান, একাধিকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিলেও তা তারা গ্রহণ করেনি। পরবর্তীকালে ডাকের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হলেও তা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এ কারণে এর প্রতিকার চেয়ে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহারিচালকের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তার দাবি সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ কিংবা নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা হোক।

এ বিষয়ে শামছুল হক এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর মো. শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, এই দরপত্র আহ্বানে ১৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ করে। আমার শিডিউলে যাবতীয় কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে বাতিল করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) শফিকুল ইসলাম সজিব বাংলানিউজকে জানান, এ বিষয়ে মোবাইলফোনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন তিনি। তবে কোনো কিছু জানার থাকলে তার সঙ্গে অফিসে গিয়ে কথা বলতে বলেন।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. সদর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, টেন্ডারের যাচাই-বাছাইয়ে কোনো অনিয়ম হয়নি। তবে ঢাকা থেকে পাঠানো ফাইল ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আমি অবগত নই।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।