ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুতে সর্বোচ্চ সংখ্যা বরিশালে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২১
করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুতে সর্বোচ্চ সংখ্যা বরিশালে

বরিশাল: বিগত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে ১৩৫ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। আর করোনা পজিটিভ একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

যা নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ২১৮ জন।

বুধবার (৭ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তির বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায়। ৬৫ বছর বয়সী আব্দুল খালেক নামের ওই ব্যক্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।  

ডা. বাসুদেব কুমার দাস সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ে বরিশাল বিভাগে সংক্রমণের হার কম ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের হার বেশি। এই অবস্থায় শুধু করোনার টিকা গ্রহণ করলেই চলবে না স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর বলছে, ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে বরিশাল জেলায় ৬৪ জন। এরপর ৩২ জন ভোলায়, ১৩ জন পিরোজপুরে, ১১ জন পটুয়াখালীতে, ১০ জন ঝালকাঠিতে এবং বরগুনায় ৫ জন শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে ১৩ মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৯০১ জন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ বরিশালে ৫ হাজার ৪৪০, এরপর পটুয়াখালীতে ১ হাজার ৮৫৬ জন, পিরোজপুরে ১ হাজার ৩১৩, ভোলা ১ হাজার ২৫৫ জন, বরগুনা ১ হাজার ৯৫ জন এবং ঝালকাঠিতে ৯৪২ জন।

এই ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ১৮ জন রোগী বরিশাল বিভাগে করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থতা লাভ করেছেন। যা নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৭১২ জন। অর্থাৎ আক্রান্ত শনাক্তের মধ্যে ১ হাজার ১৮৯ জন করোনারোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে কিছু রোগী হাসপাতালে, অন্যরা নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন।

বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন বরিশাল জেলায়। মোট মৃত্যুবরণ করা ২১৮ জনের মধ্যে বরিশাল জেলায় সর্বোচ্চ ৯৪ জন, এরপর পটুয়াখালীতে ৪৪ জন, পিরোজপুরে ২৭ জন, বরগুনায় ২২ জন, ঝালকাঠিতে ২০ জন এবং ভোলায় ১১ জন ।

বরিশাল বিভাগের মধ্যে সর্বপ্রথম ২০২০ সালের ৯ মার্চ নারায়ণগঞ্জ ফেরত পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার এক শ্রমিক আক্রান্ত শনাক্ত হন। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত ৩৯৪ দিনের আপডেটে এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এদিকে প্রথম ঢেউ কিছুটা স্থিমিত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে রোগী শূন্য ছিল এই অঞ্চলের একমাত্র ডেডিকেটেড করোনা চিকিৎসার শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি এই ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন মঠবাড়িয়ার খালেদা বেগম। এরপর দুই মাসের মত করোনা ইউনিট সম্পূর্ণ খালি ছিল। তবে ৭ মার্চ আবার করোনা ওয়ার্ডে একজন রোগী ভর্তি হয়। সেই থেকে দিনে দিনে বাড়ছেই ভর্তির সংখ্যা। আর লোকবল সংকটের মধ্যেই এখানো চালানো হচ্ছে অতিরিক্ত দেড়শত শয্যার করোনা ওয়ার্ডের কার্যক্রম। সঙ্গত কারণে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কিভাবে মোকাবিলা করবেন তা নিয়ে বিপাকে রয়েছেন তারা।  

এ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন জানিয়েছেন, আমাদের যা সম্বল আছে তা দিয়েই চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কার্যকম চলমান রয়েছে। করোনা ওয়ার্ডের জন্য নতুন করে কোনো চিকিৎসক, নার্স, আয়া, পরিচ্ছন্নতাকর্মী সংযুক্ত করা হয়নি। ফলে মূল হাসপাতালে যা জনবল রয়েছে সেখান থেকে নিয়েই চলছে করোন ইউনিট।

১৯৬৮ সালে যাত্রা শুরু করা হাসপাতালটি ২০১৩ সালে এক হাজার বেডে উন্নীত করা হয়। কাগজে কলমে ১০০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও ৫০০ শয্যার হাসপাতালের লোকবল দিয়ে চলছে এখনো। সেই এক হাজার শয্যার সঙ্গে ২০২০ সালে নতুন করে দেড়শ শয্যার করোনা ইউনিট চালু হলে সেই সংকট আরো বেশি বৃদ্ধি পায়। করোনা সংকট মোকাবিলায় গত বছর ৪০ জন চিকিৎসক সংযুক্ত করা হলেও প্রথম ঢেউ শেষ হওয়ার আগেই অনেকেই নিজেদের পছন্দমত অন্য কর্মস্থানে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, করোনারোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যনুলা। শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২২টি ক্যানুলা থাকলেও ১০টির মতো বিকল হয়ে পড়ে আছে। আইসিইউ থাকলেও তা বিকল হলে পরিচালনার জন্য নেই টেকনিশিয়ান।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের অনেক কিছুই নেই। এর মধ্য থেকেই চলতে হচ্ছে। সব থেকে বড় অভাব হচ্ছে করোনার এই চরম সংকটকালীন সময়ে হাসপাতালে পরিচালক নেই।  
এ হাসপাতালটির করোনা ওআইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫০৭ জানের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে ১৪৬ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে আর ২১ জনের রিপোর্টের ফলাফল প্রাপ্তির অপেক্ষায় রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২১
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।