ঢাকা: দেশে আবারও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এ কারণে আবারও বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ভিতর ও চত্বর এলাকায় দেখা গছে বেশিরভাগ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এমনকি হাসপাতালের নতুন ভবনে করোনা ইউনিটে লিফটের সামনে এক করোনা রোগীকে ট্রলিতে নেওয়ার সময়ও হাসপাতালের কিছু নারীকে দেখা গেছে মাস্ক থাকলেও সেগুলো মুখের নিচে থুতনিতে রয়েছে। নাক-মুখ ছিল খোলা। এছাড়া হাসপাতাল চত্বরে ভ্রাম্যমাণ মাস্ক বিক্রেতাকে দেখা যায় নিজেই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। কিন্তু অন্যদের কাছে মাস্ক ব্যবহারের জন্য সেগুলো বিক্রি করছেন। উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলছেন, ‘আবারও করোনা আইস্যা গেছে, করোনার থেকে বাঁচতে চাইলে মাস্ক পড়েন। আমার কাছে সস্তায় মাস্ক আছে। ’
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে ঢামেক হাসপাতাল চত্বর ও ভিতরে ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। তা দের মুখে নেই মাস্ক , কারও কারও আবার মাস্ক থাকলেও সেগুলো রয়েছে থুতনির নিচে। অনেকেই বলছেন, হাপাতালের তরফ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার দুর্বল নির্দশনার কারণেই অধিকাংশনই মানুষ মানছে না। নির্দেশনার বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে কর্তৃপক্ষকে।
হাসপাতালের পুরাতন ভবনের নিচ তলায় ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডসহ আশেপাশে যত ওয়ার্ড আছে ও দ্বিতীয় তলায় ২০০ নম্বরসহ আশেপাশে যত ওয়ার্ড আছে,সেখানে ভর্তি রোগীসহ স্বজনদের মাস্কবিহীন অবস্থায় চলাফেরা করতে দেখা যায়। এছাড়া হাসপাতালের ভিতর আনাচে-কানাচে লোকজনকে চলাফেরার সময় দেখা যায় অধিকাংশই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।
এদিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সংলগ্ন ময়দানের চিত্র আরও ভয়াবহ। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই নেই। সেখানে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের কোনো লোকজন মুখে নেই মাস্ক। সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা, সব সময় ১৫ থেকে ২০ জন একসঙ্গে জটলা বেঁধে আছেন।
নতুন ভবনে করোনা ইউনিটে এক রোগীকে চিকিৎসার জন্য লিফটে করে উপরে নিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে কর্মরত বেসরকারি এক নারীর কাছে মুখে মাস্ক নেই কেন জানতে চাইলে বলেন, মাস্ক তো পড়াই আছি, তবে থুতনির নিচে। এই কথা বলে দ্রুত রোগিকে নিয়ে লিফটে উঠে যান তিনি। শীতকালের টুপিসহ অন্যান্য জিনিসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য মাস্ক। ভ্রম্যমাণ হকার গিয়াসউদ্দিন এগুলো বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি নিজে না পড়ে মাস্ক বিক্রি করছেন, আবার বলছেন করোনাভাইরাস আইয়া পড়ছে,বাঁচতে হলে মাস্ক পড়ুন। উত্তরে তিনি বলেন, আমি মাস্ক পড়তে পারি না, শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এই কথা বলে তিনি ওই স্থান দ্রুত ত্যাগ করেন।
ঢামেক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, চিকিৎসক-নার্সরা সবসময় মাস্ক পরেন। রোগী ও স্বজনরা মাস্ক না পরে তাদের সামনে যেতে পারে না। কারণ তাদের বারণ আছে, রোগীরা যেন মাস্ক ছাড়া তাদের সামনে না যায়। এভাবেই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অন্য যেসব কর্মচারী আছে, তারাও রোগী ও স্বজনদের মাস্ক পরতে বলেন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা তো তাদের পিছে লেগে থাকা যায় না।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আশরাফুল আলম বলেন, পরিচালক স্যার প্রায় সময় হাসপাতালের সেন্ট্রাল মাইকে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক পড়ার জন্য অনুরোধ করেন। এছাড়া হাসপাতালে যত প্রবেশ গেট আছে, সেখানে দায়িত্বরত আনসারদের বলা আছে কেউ মাস্ক ছাড়া হাসপাতালে ঢুকতে পারবে না।
দেখা যায় আনসাররা বাঁধা দিলে লোকজন সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক পরে আবার ওয়ার্ডে ভিতরে গিয়ে সেটি খুলে ফেলছে।
তিনি আরও বলেন, কিছুক্ষণের মধ্যে আবারও সেন্ট্রাল মাইকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি ও নানা রকম দিক নির্দেশনা এবং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সবাইকে নির্দেশ দেবেন মাস্ক ছাড়া কেউ যেন ওয়ার্ডে অবস্থান না করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘণ্টা,১১ জানুয়ারি, ২০২২
এজেডএস/এমএমজেড