দিনাজপুর: দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাট এলাকার লাইফ কেয়ার ক্লিনিকে সিজারের পর প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে প্রসূতি ও পরে নবজাতকের মৃত্যু হয়।
এর আগে, সিজারের পর তাদেরকে খানসামার ওই ক্লিনিক থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এই মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ক্লিনিকে সিজারের পর চিকিৎসক না থাকায় রোগীর সংকটাপন্ন অবস্থাতেও চিকিৎসাসেবা না দিতে পারায় এমনটা হয়েছে বলে দাবি করেন নিহতের স্বজনরা। তবে, রোগীর চিকিৎসায় কোনো ধরনের অবহেলা ছিল না বলে দাবি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের।
জানা যায়, শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে প্রসব বেদনা শুরু হলে উপজেলার টংগুয়া গ্রামের ধরপাড়ার আবু সায়েমের স্ত্রী মাজেদা বেগমকে (৩৫) পাকেরহাট লাইফ কেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। দায়িত্বরত ক্লিনিকের নার্সরা প্রথমে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে রোগীর স্বজনদের দাবির মুখে রাত সাড়ে ১০টার দিকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জন ডা. রবিউল ইসলাম সিজার করে চলে যান। পরে প্রসূতির রক্তক্ষরণ শুরু হলে চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে প্রসূতি ও নবজাতককে নার্স ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা দেন। তাদের অবস্থা আরো সংকটাপন্ন হলে প্রথমে নবজাতককে এবং ভোরে প্রসূতিকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে প্রসূতি ও তার কিছুক্ষণ পর নবজাতকের মৃত্যু হয়।
প্রসূতির স্বামী আবু সায়েম জানান, চিকিৎসক ভুলে সিজার করতে গিয়ে নাড়ি কেটে ফেলে। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুরে পাঠায় ক্লিনিকের লোকজন। সেখানে নিয়ে ভর্তির পরপরই প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু হয়।
রোগীর অন্যান্য স্বজনরা জানান, সিজারের পর যখন শিশুটি ও প্রসুতির দুই জনের অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল তখন ক্লিনিকে কোন ডাক্তার ছিল না। এখানকার নার্স আর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই চিকিৎসা দেয়। একটি ক্লিনিকে সংকটাবস্থায় চিকিৎসক থাকবে না এটি তো হয় না। এটি জনগণের সঙ্গে এক প্রকারের প্রতারণা।
এ বিষয়ে জানতে অপারেশনকারী সার্জন ডা. রবিউল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রসূতির ব্যথা ছিল আগের দিন থেকে। অপারেশন আরও আগে করানো উচিত ছিল। আমাকে বলার পর আমি সাড়ে ১০টার দিকে অপারেশন করি। তখন তেমন সমস্যা ছিল না। অপারেশন পরবর্তী সমস্যার কারণে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। আমার পক্ষ থেকে ভালোভাবেই আমি অপারেশন করেছি। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কেউ দিতে পারবে না।
এদিকে ওই ক্লিনিকের ম্যানেজার আব্দুর জব্বার জানান, সিজারের পর নবজাতকের অবস্থা সংকটাপন্ন হলে প্রথমে তাকে এবং পরে প্রসূতিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রসূতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। দিনাজপুরে নিয়ে যাওয়ার পর প্রসূতি ও শিশু দুইজনেই মারা যায়। এখানে আমাদের কোন গাফিলতি ছিল না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কাম্য নয়। বিষয়টি জানার পর তা তদন্ত করা হচ্ছে।
প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুতে চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অবহেলার প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগেও গত ১৬ জানুয়ারি পাকেরহাটে অবস্থিত ইনফিনিটি ক্লিনিক ও কনসালন্টেশন সেন্টারে সিজার করার পর এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। এই দুটি ঘটনাই ঘটেছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২২
এএটি