ঢাকা: শহর থেকে গ্রামে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের তালিকায়।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৪০ জন নতুন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মারা গেছেন আরও পাঁচ জন। এ নিয়ে এবছর এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ৩৫ হাজার ২৬৬ জন এবং মোট মৃত্যু হয়েছে ১২৮ জনের।
সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই চার মাস হল ডেঙ্গুর মূল মৌসুম। চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এবছর অক্টোবর মাসের শেষে এসেও ডেঙ্গু জ্বরের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত ২০ বছরের অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার অক্টোবর মাসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। এবার দেরিতে এসেছে বর্ষা। থেমে থেমে বৃষ্টিপাতে কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় এডিস মশার প্রজনন বেশি হয়েছে। ফলে দীর্ঘায়িত হয়েছে ডেঙ্গু মৌসুম।
চলতি বছর ডেঙ্গুর চারটি ধরনের মধ্যে তিনটি (টাইপ-১, ৩, ৪) রোগের প্রকোপ বাড়িয়েছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেওয়ায় আক্রান্তদের শক সিন্ড্রোম, অর্থাৎ হঠাৎ শরীর নিস্তেজ হয়ে যাওয়া, হেমোরেজিক ফিবার বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে বাড়ছে মৃত্যু। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিনের মধ্যে ৬৪ শতাংশ ডেঙ্গুরোগী মারা যাচ্ছেন।
এবছর ডেঙ্গু রোগে মৃত্যু না কমার কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমিউনিক্যাবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ডেঙ্গুর কয়েকটা ধরন রয়েছে। অনেকেই ডেঙ্গুতে আগেও আক্রান্ত হয়েছিল, নতুন করে তিনি যদি ডেঙ্গুর আরেকটা ধরনে আক্রান্ত হন, তাহলে তার ঝুঁকি বেশি হবে, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। কেউ যদি আগে ডেঙ্গুর টাইপ-১ আক্রান্ত হয়ে থাকেন, এখন যদি তিনি আবার টাইপ-২ এ আক্রান্ত হন, তাহলে বিপদে পড়ে যাবেন। টাইপ ফোর এ আক্রান্ত হলে সে আরও বিপদে পড়ে যাবে। এই বিপদের মাত্রা ৩ এবং চার ডেঙ্গুর ধরনে আরও বেশি।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু হলে মানুষের জ্বর, শরীর, মাথা ও চোখে ব্যথা হবে। জ্বর যখন কমে যায়, তখন অনেকে ভাবে আমিতো ভালো হয়ে গেছি, আসল কথা হচ্ছে তখন ওই ব্যক্তি বিপদে পড়ে যান। এই সময়ে ৪৮ ঘণ্টা হচ্ছে ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড। জ্বর কমে যাওয়ার সময় কেউ যদি ঠিকমত লিকুইড না নেয়, তার যদি ডিহাইড্রেশন হয়ে যায়, তার জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। তখন তার নানা জটিলতা তৈরি হবে, একেকটা অর্গান নষ্ট হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে বাচ্চারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে, কারণ বাচ্চারা বড়দের মতো বলতে পারে না, বা খারাপ লাগলে দুই গ্লাস লিকুইড খেয়ে ফেলবে, সেটাও পারে না। সুতরাং বাচ্চারা যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, জ্বর কমে যাওয়ার মুহূর্তে বেশি করে লিকুইড খাওয়ানোর বিষয়ে তাদের মা-বাবাকে অনেক বেশি সচেতন এবং সজাগ থাকতে হবে। জ্বর কমে গেলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কোনো রোগীর যখন দুই তিনটা অর্গান নষ্ট হয়ে যায়, তখন তাকে বাঁচানো কষ্টকর। তিনটা অর্গান ফেইলর হলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হার হবে ৮০ শতাংশ।
ডেঙ্গু রোগীর বিপজ্জনক লক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কারও তীব্র পেটে ব্যথা হচ্ছে কিনা, বারবার বমি হচ্ছে কিনা, শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্তপাত হচ্ছে কিনা, প্রসাব একেবারে কমে গেছে কিনা? এসবের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে চলে যেতে হবে। ডেঙ্গু রোগী কারো এসব লক্ষণ দেখা দিলে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। দ্রুত তাকে স্যালাইন দিতে হবে, রিহাইড্রেশন করতে হবে। এজন্য ন্যাশনাল গাইড লাইন আছে, ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া আছে, তার চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত আছে। আমাদের সবার চেষ্টা রয়েছে ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমিয়ে আনা।
>>> আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৪০
বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২২
আরকেআর/এমএমজেড