ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

‘চা গাছের ছাঁটাই’ উপকার বয়ে আনে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
‘চা গাছের ছাঁটাই’ উপকার বয়ে আনে নির্দিষ্ট পরিমাপে শক্ত চায়ের ডালকে কেটে এভাবে প্রুনিং করা হয়। ছবি: বাংলানিউজ 

মৌলভীবাজার: উৎপাদন বাড়াতে এখন বাগানে বাগানে চলছে চা গাছ ছাঁটাই। এটি শীতকালীন বাৎসরিক আয়োজন।

চা বাগানের দিকে তাকালে মনে হয় কেউ যেন ইচ্ছে করে গাছ কেটে দিয়েছে, যাতে চা পাতা আর উৎপাদন না হয়। আসলে তা নয়। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এমন দেখালেও এর বাস্তবতা ভিন্ন।

মৌলভীবাজারের চা এর রাজধানী শ্রীমঙ্গলসহ বিভিন্ন উপজেলার চা বাগানে শীত মৌসুম শুরুর সাথে সাথে শুরু হয়েছে ‘প্রুনিং’ বা ‘কলম’ করার কাজ।
চা গাছের স্বাস্থ্য ও উৎপাদন ক্ষমতার দিক বিবেচনায় রেখে এমন পদ্ধতি বাংলাদেশের ১৬৭টি চা বাগানের প্রায় সবগুলোতেই। অর্থাৎ প্রতি বছর বাগানে বাগানে এই পদ্ধতিই প্রয়োগ করা হয়। শীতকাল এলেই কাটা পড়ে চা গাছের মাথা।

দেখা যায়, সেকশনব্যাপী চা বাগানের গাছগুলোর মাথা কাটা। দূর থেকে দেখা যায় পত্রশূন্য বৃক্ষের সম্মিলিত সারি। অসংখ্য চা গাছে এই একই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এভাবে চা গাছের মাথা কেটে ফেলার নাম- প্রুনিং (Pruning)। বাংলায় একে ‘চা গাছের ছাঁটাই’ বা ‘চা গাছে কলম করা’ বলা হয়। বাণিজ্যিক চায়ের গাছে এভাবেই চলে মাথা-ছাঁটাই। দেশের প্রায় প্রতিটি চা বাগান প্রুনিংয়ের আওতায়। পরবর্তী মৌসুমে অধিক চা পাতা উৎপাদনের জন্য এই প্রুনিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ফলে আগামী দুই থেকে তিন মাস পাতা উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে।



জানা যায়, বছরের এই সময়ে চা গাছে ফুল আসার কারণে চা পাতা উৎপাদন অনেকটা কমে যায়। উৎপাদন বাড়ানো জন্য চা গাছের এক-দুটি শাখা রেখে অন্যান্য শাখাগুলো ছাঁটাই করা হয়।

বাংলাদেশীয় চা সংসদ সূত্রে জানা যায়, চা গাছকে মূল্যবান করার জন্য অপ্রয়োজনীয় ডাল পালা কর্তনকে প্রুনিং বলে। প্রুনিং এর কারণে চায়ের গাছে অনেক শাখা-প্রশাখা বাড়ে। ফলে নতুন মৌসুমে সজীব ও সতেজ পাতা অনেক বেশি পাওয়া যায়। একই সাথে সব চা বাগানে প্রুনিং করা হয় না। যেসব সেকশনে (চা বাগানের সুনির্দিষ্ট এলাকা) প্রুনিং প্রয়োজন হয় সেই সব সেকশনে শুধু এটি করা হয়।

সরেজমিনে ফিনলে টি কোম্পানির একটি চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চা গাছের একটি বা দুটি ডাল রেখে নিদিষ্ট পরিমাপে অন্যান্য সব ডাল কেটে ফেলা হচ্ছে। প্রুনিং করা গাছে সাদা রং দেওয়া হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে প্রুনিং করা গাছে ডাল-পালা বাড়বে। একই সাথে চা পাতা উৎপাদনও বাড়বে।

চা শ্রমিক কৃষ্ণ দাস জানান, শীত মৌসুম এলে যে বাগানে প্রুনিং প্রয়োজন হয়। প্রুনিং এর কারণে গাছ কেটে ফেলা হলেও গাছের কোনো ক্ষতি হয় না বরং চা পাতার উৎপাদন আরও বাড়ে।

অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বাংলানিউজকে বলেন, চা গাছের এই কর্তন গাছের ক্ষতি করার জন্য নয়। বরং উপকার বয়ে নিয়ে আসে। এভাবে কেটে ফেলার এই পদ্ধতিকে ‘প্রুনিং’ বা ‘কলম করা’ বলে। চা বাগানে এখন চলছে শীতকালীন পরিচর্যা। চা গাছে প্রুনিং করার কারণে গাছে প্রচুর শাখা-প্রশাখা বাড়বে। শাখা-প্রশাখা বাড়ার কারণে চায়ের উৎপাদনও ভালো হয়।

প্রুনিংয়ের উদ্দেশ্যসমূহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চা গাছগুলোকে একটি নির্দিষ্ট আকৃতি দেওয়া। যাতে জায়গার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। মৃত, রোগাক্রান্ত ও পুরাতন শাখা-প্রশাখা ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে বয়স্ক গাছগুলোর উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা। চা গাছের আকার ও উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করা। যাতে পাতা চয়ন বা তুলতে সুবিধা হয়। চায়ের গুণগত মান নিশ্চিত করাসহ গাছের রোগ-বালাই কমানো।

প্রুনিং এর সময়কাল মূলত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সাপ্তাহ পর্যন্ত। কারণ এই সময়টাতে বৃষ্টি তেমন হয় না। আর বৃষ্টি না হওয়ার ফলে চা গাছে নতুন পাতাও তুলনামূলক কম আসে। সেজন্য এই সময়টা প্রুনিংয়ের জন্য উপযুক্ত।

তবে একই চা বাগানের একই সেকশনে (চায়ের সুনির্দিষ্ট এলাকা) প্রতি বছর প্রুনিং করা হয় না। বাগানভেদে প্রুনিং এর প্রয়োজনীয়তা বুঝে প্রুনিং করা হয় বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।