ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

লবণ পানিতে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের দুইশ বিঘা জমির ধান

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২২ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৩
লবণ পানিতে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের দুইশ বিঘা জমির ধান

বাগেরহাট: বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষা উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের অন্যতম নদী বেষ্টিত উপজেলা রামপাল। ৩৩৫ বর্গ কিলোমিটারের এই উপজেলায় পশুর, মরা পশুর মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলসহ ৫০টির বেশি নদী-খাল রয়েছে।

এসব নদী ও খালের পানি লবণাক্ত হওয়ায় এই এলাকার বেশিরভাগ ধানী জমি অনাবাদি থাকত।  

দীর্ঘদিন পরে পেরিখালি ও রাজনগর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে এ বছর ইরি মৌসুমে কিছু নদী ও খাল আটকে বাঁধ দিয়ে মিস্টি পানি সংরক্ষণ করে ধান চাষ করেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু চিংড়ি মাছের পোনা ছাড়ার সময় হওয়ায়, প্রভাবশালী ঘের মালিকরা সেই খাল কেটে দেওয়ায় ধানের জমিতে লবণ পানি প্রবেশ করছে। চিংড়ি চাষের জন্য ওঠানো লবণ পানিতে পচে যাচ্ছে কৃষকের কষ্টের ফসল। ফলে দুই শতাধিক কৃষকের ৫০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হবে। তবে পানি যদি ১৫-২০ দিন পরে প্রবেশ করাতো তাহলে ধানের ক্ষতি হত না বলে দাবি কৃষকদের। ১৫ দিন সময় চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোনো সুফল পায়নি হতদরিদ্র কৃষকরা।

বুধবার (০৮ মার্চ) সকালে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য থেকে যাওয়া কালেখারবেড় এলাকার ঘরের খালের বাঁধ কেটে মৎস্য ঘেরে পানি ঢুকিয়েছেন জুলু হাজীসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা। লবণ পানিতে কৃষকের ধান পচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দুই তিনদিনের মধ্যে এসব ধানের গোড়া পচে নষ্ট হয়ে যাবে বলে দাবি কৃষকদের। শুধু কালেখারবেড় নয়, রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের সিংগুরবুনিয়া, রনজয়পুর ও আড়ুয়াডঙ্গা এলাকায়ও একইভাবে ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। এসব এলাকার ঘের ব্যবসায়ীরা এখন খাল কেটে লবণ পানি ঢোকানের পাঁয়তারা করছেন। কৃষকদের কোনো আবেদন কর্নপাত করছেন না তারা।

কালেখারবেড় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সবিতা হাওলাদার বলেন, গরু বিক্রি করে এবং এনজিও থেকে লোন নিয়ে ৬ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। ১৫-২০ দিন পর ধান ঘরে তুলতে পারতাম। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাঁধটি কেটে দেওয়ায় ক্ষেতে লবণ পানি ঢুকে ধান গাছ সব মরতে শুরু করেছে। অনেক অনুরোধ করেছি, কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি।

একই গ্রামের কৃষক হুমাউন কবির বলেন, কৃষিবিভাগ থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ নিয়ে ধান চাষ করেছিল। তখন লবণ পানি ঠেকাতে সবার সম্মতি নিয়ে কালেখার খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ঘেরে লবণ পানি প্রবেশ করাতে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বাঁধটি কেটে দেয়। বাঁধটি কাটার আগে চেয়ারম্যান, কৃষি অফিসার ও ইউএনওকে বিষয়টি জানিয়েছি। ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য মাত্র ১৫দিন সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেনি।

রাজনগর ইউনিয়নের সিংগুরবুনিয়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম বলেন, সবার অনুমতি ও সম্মতি নিয়ে খাল কেটে আমরা তিন গ্রামের শতাধিক কৃষক প্রায় একশ একর জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী শেখ মোতাহার আলী, মোকছেদ শেখসহ কিছু ঘের ব্যবসায়ী একই এলাকার চামারখালী ও দোয়ানে খালের বাঁধ কেটে লবণ পানি প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছে। এই খাল কেটে লবণ পানি ঢোকালে আমাদের ধান সব নষ্ট হয়ে যাবে।

একই এলাকার দবির উদ্দিন নামে আরেক কৃষক বলেন, মাত্র ১৫ দিন পরে লবণ পানি প্রবেশ করালে আমাদের ধানের কোনো ক্ষতি হত না। যেকোন মূল্যে লবণ পানি প্রবেশ ঠেকানো প্রয়োজন। তা না হলে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। পথে বসা লাগবে এলাকার অর্ধশতাধিক কৃষকের।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, উপজেলার অন্তত ৩০টি খাল আটকে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করছেন। তাতে কিছু হয় না, আমরা শুধু কয়েকদিনের জন্য খাল আটকে ধান চাষ করেছিলাম এটাই আমাদের অপরাধ। কারণ আমরা গরিব।

রাজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতানা পারভিন বলেন, সব কৃষক একমত হয়ে খাল আটকে ধান চাষ শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কিছু ঘের ব্যবসায়ী ক্ষেতে পানি ঢুকিয়ে মাছ চাষ করতে চায়। এ কারণে মাছ চাষিরা বাঁধটি কেটে দিয়েছে। মানবিক কারণে চাষিদের ১৫ দিন সময় দেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম বলেন, কাউকে সরকারি খাল আটকে রাখার অনুমতি দিতে পারি না। তবে ঘের ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মাঝে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল সেটা সমাধানের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা সমাধান করবেন। এছাড়া খাল না আটকে অন্য কোনোভাবে ধান চাষ করা যায় কিনা, সে বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করার পরামর্শ দেন ইউএনও।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।