ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সিংগাইরে ১৫০ কোটি টাকার পেঁপে বিক্রির সম্ভাবনা

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
সিংগাইরে ১৫০ কোটি টাকার পেঁপে বিক্রির সম্ভাবনা

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের সিংগাইরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে বেড়েছে পেঁপের আবাদ। স্বল্প খরচ আর ঝুঁকি কম থাকায় দিন দিন এই চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জরিপে জানা যায় এ মৌসুমে প্রায় ১৫০ কোটি টাকাও বেশি পেঁপে বিক্রি হবে।

জানা গেছে, জেলার সাতটি উপজেলায় কম বেশি পেঁপের আবাদ হয়ে থাকলেও সিংগাইরের জমি উঁচু হওয়ায় পেঁপের আবাদে ঝুঁকি কম। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই পেঁপের চাহিদা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এর চাহিদা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। উপজেলার অনেক শিক্ষিত যুবকেরা ব্যবসায় কিংবা চাকরির পেছনে না ছুটে তারা পেঁপে চাষে ঝুঁকছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সব কয়েকটি উপজেলার চেয়ে সিংগাইর অঞ্চলটি তুলনামূলক একটু উঁচু হওয়ায় সবজিজাত পণ্য বেশি উৎপাদিত হয়ে থাকে। তাই স্বল্প পরিশ্রম, কম পুঁজি আর ঝুঁকিমুক্ত হওয়ায় এই পেঁপে আবাদে ঝুঁকেছেন অনেকেই। প্রতি বিঘা জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে গাছের পেঁপে তোলা পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। দাম ভালো পেলে প্রতি বিঘা থেকে লক্ষাধিক টাকার বেশি পেঁপে বিক্রি করা যায়। যার কারণে এই উপজেলার প্রায় সব কয়েকটি ইউনিয়নেই কম বেশি পেঁপের আবাদ হয়ে থাবে।  

অপরদিকে এই পেঁপে চাষিদের জমি থেকে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয় না, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে ক্ষেত থেকে নিয়ে যায় এ পেঁপে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়াতেই এ অঞ্চলের পেঁপের কদর রয়েছে সর্বত্র।

সিংগাইরের চর আজিমপুর এলাকার পেঁপে চাষি আবুল হোসেন বাবুল বলেন, আর্থিক অনটনের কারণে বেশি দূর লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি তবে বাবার কাছ থেকে কৃষি কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে ছিলাম। সেই প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে এখন আমি কৃষি কাজ করছি, কৃষি কাজের উপার্জিত অর্থে চলে আমার পুরো সংসার। চলতি মৌসুমে ছয় বিঘা জমিতে পেঁপের আবাদ করেছি। খরচ হয়েছে চার লাখ টাকা এবং বিক্রি করেছি ১৮ লাখ টাকা। আরও ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করা যাবে। এই কৃষি কাজ করেই আমার পরিবারের সচ্ছলতা এসেছে। আমার তিন ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি আমাকে এই কাজে সাহায্য করে থাকে।  

একই এলাকার পেঁপে চাষি শামসুল হক বলেন, গাজরের পাশাপাশি আমাদের এই অঞ্চলে এখন পেঁপে চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁপের ফলন এবার অনেক ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘায় সব মিলে আমাদের খরচ প্রায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা আর বিঘায় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গাছ লাগানো যায়। মৌসুমের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁপে পাইকারি বিক্রি হয় গড়ে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। আর পাইকাররা খেত থেকে কিনে নিয়ে যায় বলে আমাদের তেমন কষ্ট করতে হয় না।

পেঁপে কিনতে আসা পাইকার বরকত হোসেন বলেন, সিংগাইরের প্রচুর পরিমাণে সবজির আবাদ হয়ে থাকে। একেক মৌসুমে ভিন্ন ভিন্ন সবজির আবাদের কারণে এই অঞ্চলের সবজির কদর দেশ জুড়ে। বর্তমানে আমি প্রতিদিন এই এলাকার পেঁপে কিনে তা ঢাকাসহ গাজীপুর, নোয়াখালী, ফেনীতে বিক্রি করছি। সিংগাইরের পেঁপের স্বাদ ও আকার ভালো হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। এবং আড়তগুলোতে খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়।

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, এই মৌসুমে সিংগাইরে প্রায় সাড়ে ৬০০ হেক্টর জমিতে পেঁপের আবাদ হয়েছে। পেঁপের ফলনও খুব ভালো হয়েছে। বাজারের ভালো দাম পেলে উপজেলা থেকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার পেঁপে বিক্রি আশা কৃষি বিভাগের।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।