বগুড়া: উত্তরাঞ্চলের শস্য ভাণ্ডারখ্যাত জেলা বগুড়া। রকমারি ফসল ফলানোর দিক থেকে সারা দেশে এ জেলার কৃষকদের একটা আলাদা পরিচিত রয়েছে।
বগুড়ায় চলতি রোপা-আমন মৌসুমে এক লাখ ৮৩ হাজার ৫শ ১০ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ করা হয়। এ মৌসুমে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৩৪ মেট্রিক টন। যা গতবছরের তুলনায় লক্ষমাত্রা ছাড়িয়েছে।
বুধবার (২২ নভেম্বর) বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে এ বিষয় নিশ্চিত করেন।
বগুড়ায় এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। মৌসুমে কৃষকরা তাদের জমি প্রস্তুত থেকে হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। চোখের সামনেই তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে জমির ধান। এখন সোনারঙা সেই ধান ঘরে তুলতে ও বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
জেলার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সোনারঙা ধানের সমারোহ দৃশ্যমান। ধান গাছের ডগায় থোকায় থোকায় পুষ্ট ধান ঝুলছে। ধানের শীষে সোনারঙা ধারণ করেছে। অনেক ধান পুষ্ট হলেও এখনো কাঁচা রয়েছে। উপযুক্তগুলো কাটা-মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক।
কাহালু উপজেলার কৃষক আক্কাস মিয়া বাংলানিউজকে জানান, এ বছর রোপা-আমন মৌসুমে তিনি প্রায় ২৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এক সপ্তাহ আগে থেকে ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেন তিনি। তার আবাদের মোট ১৮ বিঘা জমির ধান কাটা মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি বাজারে ধান বিক্রি করতে শুরু করেছেন।
বাজারে প্রতি মণ ধান জাতভেদে ১ হাজার ১শ থেকে ১ হাজার ৪শ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ধানের এমন দাম তাদের মতো কৃষকদের ব্যাপক আশাবাদী করে তুলেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সদর ও গাবতলী উপজেলার জোমসের আলী, হেদায়ত উল্লাহ, সোলায়মান শেখ নামে একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, কৃষি কাজ তারা বংশপরমম্পরায় করে আসছেন। এটি তাদের আয়ের প্রধান উৎস। ধানের দাম ভালো পাওয়ায় তারা পর্যাপ্ত শ্রম দিয়েছেন চাষের কাজে। নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী কৃষকরা এবার রোপা-আমন মৌসুমে ব্রি ধান-১১, ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৭৫ জাতের ধান অনেক বেশি জমিতে লাগিয়েছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলার কৃষক মুকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের ওপর তেমন ধকল যায়নি। তবে প্রায় প্রতিবছরই বন্যার পানি বাড়ায় তাদের ধকল পোহাতে হয়। তবুও এখানকার কৃষক হাত গুটিয়ে বসে না থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়া মাত্রই জমিতে নেমে পড়েন।
তিনি জানান, তিনি প্রায় ১৪ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। গেল সপ্তাহ থেকে জমির ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন। গোবিন্দগঞ্জ জেলার একদল শ্রমিক প্রতিবছর তার জমির ফসল কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করে থাকেন। শ্রমিক দলের ১১ সদস্যের দলটি ইতোমধ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। মোট আবাদের প্রায় ৯ বিঘা জমির ধান কাটা মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। শ্রমিকের এ দলটি আগামী কয়েকদিনে মধ্যে পুরো জমির ধান কাটা সম্পন্ন করে এ এলাকার অন্যদের জমির কাজে হাত দেবেন।
গাইবান্ধা জেলা থেকে ধান কাটতে আসা শ্রমিক সিদ্দিকুর, শফিক ও এনায়েত বাংলানিউজকে জানান, তাদের ১৬ জনের একটি দল নিয়ে সপ্তাহ দুয়েক আগে বগুড়ায় এসেছেন। প্রতিবছর বগুড়ার শাজাহপুর ও নন্দীগ্রামে কয়েকজন বড় গৃহস্থের জমির ফসল কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করে থাকেন। তাদের দলটি ইতোমধ্য নন্দীগ্রামের কাজ শেষ করে এখন শাজাহানপুরের খরনা ইউনিয়নে দুইটি গৃহস্থের ৫৭ বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই করছেন।
তারা জানান, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পুরো জমির ধান কাটা সম্পন্ন করবেন তারা। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই করতে তারা পারিশ্রমিক নিচ্ছেন তিন হাজার টাকা। সেই সঙ্গে থাকার জমিসহ পাচ্ছেন তিন বেলা খাবার। ফসলি মাঠের দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে চুক্তি হয়ে থাকে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, চলতি রোপা-আমন মৌসুমে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫শ ১০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়। চাষ করা ধানের মধ্যে রয়েছে ব্রি ধান-১১, ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৫৮, ব্রি ধান-৭১, ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান-৮৭, মিনিকেট,কাটারিভোগ,রঞ্জিত, বিনা-৭ জাতের ধান অন্যতম।
তিনি জানান, গেল বছর এ মৌসুমে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৮১৩ মেট্রিক টন। এ মৌসুমে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৩৪ মেট্রিক টন। যা গতবারের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত মোট চাষাবাদের ৩৬ শকতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। ফলন হয়েছে ১৮-২১ মণ হারে।
রোপা-আমন মৌসুমে বগুড়ার কৃষক তাদের ফসলি জমির যত্ন ও পরিচর্যায় কোনো খামতি রাখেননি। এ বছর রোগ বালাইয়ের আক্রমণ অনেক কম ছিল। এখন ব্যাপক হারে ধানকাটা-মাড়াইয়ের কাজ চলছে। সবমিলে চলতি মৌসুমে ধানে বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি কৃষক। কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন কৃষি এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২৩
এএটি