নেত্রকোনা: নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় ও ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারায় কৃষকের চোখে-মুখে দেখা দিয়েছে হাসির ঝিলিক।
নেত্রকোনা মূলত ধান উদ্ধৃত্ত জেলা।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে নেত্রকোনা জেলায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। গত বোরো মৌসুমে ব্রি-২৮ জাতের ধানে ব্যাপক চিটা দেখা দেওয়ায় মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা ব্রি-২৮ এর পরিবর্তে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষে পরামর্শ দিয়েছিলেন। পরামর্শ অনুযায়ী এবার হাওরাঞ্চলের কৃষকরা বেশি করে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কোনো ধরনের রোগ বালাই না দেখা দেওয়ায় হাওরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের আশা, এবার জেলায় যে পরিমাণ ধান উৎপাদিত হবে তা থেকে ৮ লাখ ২ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত জেলার খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জ, ও কলমাকান্দা উপজেলায় ইতোমধ্যে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান দ্রুত পেকেও যাচ্ছে। আগাম বন্যা, ঝড়, শিলা বৃষ্টি না থাকায় প্রচণ্ড রোদে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ধান কাটা, মাড়াই ও শুকিয়ে কৃষকরা তাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল গোলায় তুলতে পারছেন।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি কাজে যান্ত্রিকী করণের কারণে হাওরাঞ্চলে এবার শ্রমিক সংকট নেই। মোহনগঞ্জের ডিঙাপোতাসহ বেশিরভাগ হাওরে কৃষকরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে তাদের জমির ধান দ্রুত কেটে ফেলছেন। প্রান্তিক চাষিরা বছরের খোরাকির জন্য ধান সংরক্ষণ করছেন। কৃষকের বাকি ধান হাওরের জমি থেকেই ফারিয়া দালালরা কিনে নিচ্ছেন।
শেহড়াতলী গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছি। ৯৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করেছি। আমার ৮০ কাঠা ক্ষেতে ৬০০ মণ ধান হয়েছে।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭৩০টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন হাওরাঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় সার বীজ কীটনাশক প্রয়োগ করায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। খুব কম সময়ে মেশিনের সাহায্যে ধান কাটা ও মাড়াই করা হয় বলে কৃষকরা তাদের বোরো আবাদ সহজেই ঘরে তুলতে পারছেন।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, এ বছর যথাসময়ে জেলার হাওরাঞ্চলে ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। ফলে হাওরে এবার আগাম বন্যায় বোরো ধানের কোনো ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি শাহেদ পারভেজ বলেন, চলতি সপ্তাহে হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকরা যাতে দ্রুত সময়ে ধান কেটে সহজে ঘরে তুলতে পারেন তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত হাওরাঞ্চলে ৭৫ ভাগ ও উঁচু এলাকার ২০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
এসআরএস