ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

বগুড়ায় রবি মৌসুমে শীতকালীন সবজিতে মাঠে মাঠে সবুজের হাসি

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বগুড়ায় রবি মৌসুমে শীতকালীন সবজিতে মাঠে মাঠে সবুজের হাসি

বগুড়া: বগুড়ায় প্রতিবছর রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি চাষ করে কমবেশি লাভবান হয়ে থাকেন কৃষকরা। যা মৌসুমের অন্য সময় চাষাবাদ করলে নাও হতে পারে।

এ কারণে প্রতিবছর ভাগ্য বদলের স্বপ্ন নিয়ে শীতকালীন সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েন তারা।

জেলার সবজিখ্যাত এলাকাগুলোতে এখন রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজিতে মাঠে মাঠে সবুজের হাসি বিরাজ করছে।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার সবজিখ্যাত কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ জনপদ ঘুরে দেখা গেছে, রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি নিয়ে চাষিদের নানান কর্ম ব্যস্ততা।

বগুড়া সদর, গাবতলী, শাজাহানপুর, শেরপুর, শিবগঞ্জ সবজিখ্যাত উপজেলা হিসেবে পরিচিত। এ উপজেলাগুলোতে বছরের বার মাসই রকমারি সবজি ফলান চাষিরা। এর মধ্যে শাজাহানপুর, সদর ও শেরপুর উপজেলায় সবজি চাষের পাশাপাশি বছরজুড়ে নানাজাতের সবজি চারা তৈরি করা হয়। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায়ও কমবেশি সবজি চাষ করা হয়ে থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানান, বর্তমানে রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে এ জেলার কৃষক। মূলত আগস্ট থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে চাষাবাদকে আগাম চাষ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে এবং ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত চাষাবাদকে রবি মৌসুমের চাষাবাদ বলা হয়। এ জেলার কৃষক শীতকালীন আগাম সবজি চাষ আগেই শেষ করেছেন। এখন যেসমস্ত জমি ফাঁকা হচ্ছে সেগুলোতে নতুন করে সবজি চাষে আবারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শীতকালীন সবজিতে মাঠে মাঠে যেন সবুজের হাসি বিরাজ করছে। চাষিদের কেউ ক্ষেতের সবজি তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। কেউবা জমির আগাছা পরিচর্যা করছেন। কেউ কেউ আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। সবমিলে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, শিম, টমেটো, কাঁচামরিচ, মুলা, করলা, লাউ, ঢেঁড়স, গাঁজর, পটল, লালশাক, পালংশাকসহ বিভিন্ন জাতের সবজিতে ভরে আছে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ।

বগুড়ার সদর ও শাজাহানপুর উপজেলার আবু বক্কর, বাদল মিয়াসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর শীতকালীন সবজি আবাদে ফলন ভালো হয় এবং কৃষক অনেকাংশেই লাভের মুখ দেখে থাকেন। আবহাওয়া খারাপ হলে সবজির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাড়তি বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশা হলে ফসলের ক্ষতি হয়। সবজি চাষ করতে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলক অল্প সময়ে তা বাজারজাত করা যায়। নিজেদের চাহিদা মেটানো যায়। হাট ও বাজারে বিকিকিনি করা যায় সবজি। এতে করে কৃষকের হাতে কম-বেশি টাকা থাকে। যা অন্য ফসলে সম্ভব হয় না।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক হান্নান সরকার বাংলানিউজকে জানান, তিন ভাগে রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি আবাদ হয়ে থাকে। আগাম চাষাবাদ করে অনেকে শীতের প্রথম ভাগে সবজি বাজারে তুলতে মাঠে নামেন। কারণ এই সময়টাতে সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। দ্বিতীয় ভাগে শীতের মাঝামাঝিতে সবজি হাটে-বাজারে তোলার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করেন কৃষকরা। আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে এ সময়টাতে সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। ঝুঁকি থাকে শেষভাগে উৎপাদিত সবজির। তবে যেকোনো আগামজাতের ফসল চাষে ফলন কম হয়। শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ঝুঁকি অনেকটা বেশি থকে। তবে ঠিকঠাক মতো ফসল ঘরে তুলতে পারলে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বগুড়ার কৃষকেরা শীতকালীন সবজিতে স্বপ্ন দেখেন। এ কারণে এ জেলার চাষিরা আগামসহ তিন ভাগে শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করে থাকেন। বগুড়ায় ইতোমধ্যে প্রায় ৯৩ ভাগ রোপা-আমন ধান কাটা মাড়াই শেষ হয়েছে। বর্তমানে ফাঁকা হওয়া সেই জমিগুলোতে একযোগে রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ জেলার চাষিরা।  

মূলত আগস্ট থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে চাষাবাদকে আগাম চাষ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে এবং ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত চাষাবাদকে রবি মৌসুমের চাষাবাদ বলা হয়। জেলায় এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। এ বছর পুরো রবি মৌসুমে জেলায় ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রকমারি সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।  

বগুড়া জেলার চাষিরা নিজেরাই সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনে অনেকটা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও নিয়মিতভাবে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিবছর শীতের সবজি নিয়ে বগুড়া জেলার কৃষকরা ব্যস্ত থাকেন। আবহাওয়া অনুকূলে ও বাজার দর ভালো থাকলে শীতকালীন সবজি চাষে বেশ লাভবান হন কৃষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।