ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

কৃষি

বিনা চাষে সরিষার আবাদে বাম্পার ফলন

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫
বিনা চাষে সরিষার আবাদে বাম্পার ফলন সরিষার ক্ষেত

বরিশাল: সাধারণত জমিতে চাষ দেওয়া ছাড়া কোনো ফসল ফলানো যায় না। তবে বরিশালে জমিতে চাষ ছাড়াই সরিষার ফলন হয়েছে।

শুধু যে ফলন হয়েছে তাও বলা যায় না, বিনা চাষে বা হাল না দিয়ে জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে সরিষার। আর এতে কৃষকরা বেজায় খুশি। তাই আগামী মৌসুমে আবাদ আরও বাড়ানোর কথাও বলছেন তারা।

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কৃষক মো. গোলাম কবির বলেন, আমন ধান পেকে যাওয়ার আগে অর্থাৎ ধান কাটার এক সপ্তাহ আগে সরিষার বীজ জমিতে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ধান ও খড় কেটে নিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী সার ও ওষুধ দেয়, আর সময় হলে ফসল ঘরে উঠাই। এর মাঝে জমিতে কোনো ধরনের চাষ দিতে হয় না।

বিনা চাষে এভাবে যে ফসল উৎপাদন হয়, চাষ দিয়েও একই পরিমাণে ফসল উৎপাদন করা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাভাবিক নিয়মে দক্ষিণাঞ্চলে আমন ধান কাটার পর যখন সরিষা বুনতে হয় তখন জমির জো থাকে না। আর জমি চাষ করে সরিষা বুনতে যে সময় লাগবে তাতে বোনার সময় থাকবে না। তাই আমন ধান ফসলি ক্ষেতে থাকা অবস্থাতেই সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেই।

তিনি বলেন, পাঁচ বছর আগে প্রথমবারের মতো জমিতে চাষ না দিয়েই বিনা-৯ জাতের সরিষা রোপণ করি। এ জাতটি পানি সহিষ্ণু হওয়ার পাশাপাশি ফলনও ভালো দেয়। ফলে যদি বন্যার পানিও আসে তাতেও সমস্যা হবে না এ জাতের সরিষা গাছের।

জমিতে চাষের প্রয়োজন না হওয়ায় সেই টাকা ও শ্রম যেন বেঁচে যায়, তেমনি অল্প সার ওষুধ প্রয়োজন হওয়ায় লাভ বেশি থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম বছর নিজে করেছি, সফলতা থেকে পরের বছর চাষি বেড়েছে। আর এখন তো শতকরা ৯০ শতাংশ কৃষক আমাদের এলাকায় বিনা চাষে এভাবে সরিষা রোপণ করে।

গোলাম কবিরকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বর্তমানে বিনা চাষে সরিষা আবাদ করছেন পার্শ্ববর্তী ভবানিপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. শহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমি ঢাকা থেকে চলে এসে ২০২১ সালে কবির কাকাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হই। এরপর গত কয়েক বছর ধরে বিনা চাষে সরিষা আবাদ করছি। বলতে গেলে আমি শুধু শ্রম দিয়ে ফসল ঘরে তুলছি। খরচ তেমন একটা হয় না। প্রথমবার তো বীজ সংগ্রহও কাকার কাছ থেকে করেছি।
তিনি বলেন, সর্বশেষ মৌসুমে ২০ শতাংশ জমিতে আবাদ করে ছয় মণ সরিষা ঘরে তুলেছি, এবারেও কম হবে না।

একই কথা জানিয়েছেন নারী কৃষক ফজিলাতুন্নেছা। তিনি বলেন, বিনা চাষে সরিষা আবাদের পর প্রয়োজন অনুযায়ী সার দিলেই হয়। আর মাটিতে রসের অভাব হলে চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর প্রথম সেচ এবং প্রয়োজনে ফুল ফোঁটা শেষ হলে দ্বিতীয় সেচ দিলেই হয়। এর থেকে বেশি কিছু করার প্রয়োজন হয় না।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক আরিফুর রহমান বলেন, বিনা চাষে সরিষা আবাদের বিষয়টি শুনে প্রথমে অনেকেই হাসাহাসি করেছেন। কিন্তু পাঁচ বছর আগে অল্প জমিতে বিনা চাষে একজন চাষি সরিষা আবাদ করে ভালো সুফল পেয়েছেন। আর এখন তার দেখাদেখি ৯০ শতাংশ কৃষক বিনা চাষে সরিষা আবাদ করেন অত্র এলাকায়।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশালের অতিরিক্ত উপ পরিচালক (উদ্যান) মোসা. ফাহিমা হক বলেন, বরিশাল অঞ্চলে আমন ধান অনেক সময় একটু দেরিতে পাকে। ফলে ধান কাটতেও দেরি হয়। কিন্তু সরিষা আবাদের সময় মাত্র ১৫ দিনের হওয়ায় ধান কাটার পর জমিতে চাষ দিয়ে তা আর রোপণ করা সম্ভব হয় না। তাই আমন ধান মাঠে থাকা অবস্থায় বিনা চাষেই সরিষা আবাদ করা হয়। আর এটিও সরিষা আবাদের একটি প্রক্রিয়া। এতে খরচ কমে গেলেও ফসল উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।