ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

স্ট্রিপ টিলেজে চাষ, খরচ ৬০% কম, ফলন ৪০% বেশি

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৩ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৬
স্ট্রিপ টিলেজে চাষ, খরচ ৬০% কম, ফলন ৪০% বেশি

আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী ঘুরে: বৈশাখের রোদের আলোয় মাশকালাইয়ের সবুজ সতেজ পাতাগুলো ঝকঝক করছে। ফলের ভারে গাছগুলো ঝুকে পড়েছে।

মাঝেমধ্য বাতাসের পাতাগুলো দোল খাচ্ছে। দেড় থেকে দুই হাত প্রসস্ত একেকটি বেডের ওপর সারিবেশে চাষ হয়েছে মাশকালাই। প্রতি দুটি বেডের মাঝে বয়ে গেছে ছোট একটি নালা।
 
জমিতে ঢুকতেই চাষের এই পদ্ধতি অচেনা ঠেকলো। নতুন এই পদ্ধতির চাষে ফসলের চেহারা দেখে মন ভরে উঠবে। ফলন যে অনেক ভালো হয়েছে তা যে কেউ বলবে।
 
কথা হলো সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। তারা বললেন, এর নাম স্ট্রিপ টিলেজ চাষ।

নতুন এ পদ্ধতির উদ্ভাবনকারী দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট রাজশাহীর এর আঞ্চলিক গম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইলিয়াছ হোসেন।

তিনি জানালেন, এই পদ্ধতিতে ফসল চাষে খরচ কমবে শতকরা ৬০ ভাগ পর্যন্ত। আর ফলন বাড়বে শতকরা ৪০ ভাগ পর্যন্ত।
 
এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক বছরের গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা করে এই স্ট্রিপ টিলেজ পদ্ধতির চাষে সফলতা পাওয়া গেছে। এটি কৃষকের জন্য খুবই উপকারী। শুধু খরচ ও ফলন বৃদ্ধি নয় আরও নানা গুণ রয়েছে। শিগগিরই কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।
 
গবেষকরা এপদ্ধতিতে চাষের সুবিধাগুলো উল্লেখ করে জানান, এ পদ্ধতিতে চাষে জমিতে আগের ফসলের খড় বা নাড়া থাকে। এতে মাটির রস ধীরে ধীরে শুকায় যা ফসল বাড়াতে কাজে আসে। ফসলকে খরা সহনশীল করে তোলে।

খরা প্রবণ এলাকায় এ পদ্ধতি অত্যান্ত কার্যকরী বলেই জানান তারা।  
 
এছাড়া বীজ ও সার প্রয়োগ করায় সার ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ে। ফলে ধান, গম, ভুট্রার ফলন পাঁচ থেকে ২০ ভাগ এবং অন্যান্য ফসল ১০ থেকে ৪০ ভাগ পর্যন্ত বেশি ফলে।

বেডে পাট, তিল, বাদাম, আলু, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা যায়। সময় মতো ফসল আবাদের পাশাপাশি শ্রমিক খরচও কম লাগে।
 
ড. মো. ইলিয়াছ হোসেন জানান, এই বেড পদ্ধতিতে সেচের পানি শতকরা ২৫ থেকে ৪০ ভাগ, ইউরিয়া সার ১০ থেকে ২০ ভাগ, বীজ ১৫ থেকে ২০ ভাগ ও চাষের খরচ ৬০ ভাগ পর্যন্ত কমে। ফসলের ইঁদুরের আক্রমণও খুব কম হয়।
 
স্ট্রিপ টিলেজকে একটি প্রকৃত সংরক্ষণশীল কৃষিপদ্ধতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে সরাসরি বীজ বপন করা যায়। স্বাভাবিক পদ্ধতির মত চাষ-মইয়ের প্রয়োজন হয় না।

সরু স্ট্রিপ তৈরির জন্য বপন লাইনের সামনে চারটি ফাল এমনভাবে সাজানো থাকে যে দুটি ফাল বাম থেকে ডানে এবং অপর দুটি ডান থেকে বামে মুখমুখি থাকে।
 
এতে ঘূর্ণায়মান ফাল মাটি কেটে স্ট্রিপ তৈরি করে এবং ওই স্ট্রিপে ওপেনারের মাধ্যমে পরিমিত বীজ ও সার দেওয়া হয় পরবর্তীতে প্রেস ‍হুইল স্ট্রিপের উপর দিয়ে হালকাভাবে চাপ দিয়ে গড়ায়ে যায় এবং বীজ ঢেকে দেয়। ক্ষেত্র বিশেষে বীজ ঢেকে দেয়ার জন্য প্রেস হুইলের বদলে প্রেস রোলার ব্যবহার চলে।
 
গবেষকরা জানান, স্ট্রিপ টিলেজে ফসলের বীজ ও সার নির্দিষ্ট গভীরতায় পড়ে। ফলে বীজের অংকুরোদগম সহজ হয়। দুই লাইনের মধ্যবর্তী অংশের জমি চাষ হয় না। এতে নাড়া বা খড়গুলো থেকেই যায়।
 
ইলিয়াস হোসেন বলেন, প্রযুক্তি আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির চাষাবাদে বদলে যাচ্ছে দেশের কৃষি। চাষিরাও চান এমন পদ্ধতিতে চাষ করছে যাতে চাষ খরচ কমছে বাড়ছে ফলন।
 
কৃষকরাও এ ধরণের ফসল চাষ পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।   মাঠে মাঠে এই পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে পারলেই এর সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তারা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২১৮ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৬
একে/এমএমকে

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।