ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

খ্যাতির মরিচে স্বপ্ন বুনছেন চরাঞ্চলের মানুষ

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৭
খ্যাতির মরিচে স্বপ্ন বুনছেন চরাঞ্চলের মানুষ মরিচ শুকানো হচ্ছে। ছবি: আরিফ জাহান-বাংলানিউজ

বগুড়া: যমুনার পানি ঠেকেছে তলানিতে। জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল চর। শান্ত হয়ে এসেছে হিংস্র যমুনা। খুলে দিয়েছে তার অফুরন্ত ভাণ্ডার। যমুনার বিশাল বুকজুড়ে চলছে চরাঞ্চলের মানুষের কর্মযজ্ঞ। চরের খ্যাতির মরিচ নিয়ে কাটছে তাদের সারাবেলা।

চারদিকে চলছে এখন লাল-সবুজের খেলা। খ্যাতির মরিচেই স্বপ্ন বুনছেন চরাঞ্চলের মানুষ।

কারণ সবুজে-সবুজে ছেয়ে উঠেছে খেতের পর খেত। গাছে গাছে দুলছে কাঁচা-পাকা মরিচ। খেতের পাকা মরিচ তুলে এনে শুকানো হচ্ছে নদীর তীরে। মরিচে মরিচে লাল টুকটুকে হয়ে উঠেছে যমুনার কূল।

সেই মরিচ ঘরে তোলায় চরম ব্যস্ত চরাঞ্চলের কৃষাণ-কৃষাণী। উন্নতমানের এ মরিচের ক্রেতারাও ছুটছেন সমানতালে। দেশের নামকরা কোম্পানি ও বড়-বড় ব্যবসায়ীরা চরাঞ্চলের মরিচের অন্যতম ক্রেতা। বিদেশেও রপ্তানি হয় এসব মরিচ।
 
এ কারণে প্রত্যেক বছর খ্যাতির মরিচের ভালো দাম পান চরের চাষিরা। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বাম্পার ফলনের পাশাপাশি বেশ ভালো দামে এসব মরিচ বেচাকেনা হচ্ছে। মরিচ শুকানো হচ্ছে।  ছবি: আরিফ জাহান-বাংলানিউজ
 
বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে মরিচ চাষে জড়িত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে স্থানীয় ও হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করা হয়েছে।
 
এর মধ্যে চরাঞ্চলের তিন উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। অবশিষ্ট মরিচ চাষ করা হয়েছে শিবগঞ্জ, গাবতলী, শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলার পূর্বাংশের জমিতে।
 
প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে জেগে ওঠা চরের মাটিতে মরিচ লাগিয়েছিলেন চরাঞ্চলের চাষিরা। এখন সেই মরিচ ঘরে তোলায় চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কাকডাকা ভোর থেকে সারাদিন তারা মরিচের পেছনে কাটিয়ে দিচ্ছেন। খেত থেকে মরিচ তুলতে গিয়ে দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন অনেকেই।
 
এরপর সেগুলো যমুনার তীর, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ রোদ পড়ে এমন উঁচু স্থানে এনে শুকাতে দিচ্ছেন। দল বেঁধে কৃষাণ-কৃষাণীরা এ কাজটি করছেন। কেউ মরিচ বস্তায় ভরছেন। গামলা নিয়ে নারীরা দল বেঁধে মরিচ বাছাইয়ের কাজ করছেন। অনেক পুরুষ মরিচ উল্টে পাল্টে দিচ্ছেন।    
 
নবীর উদ্দিন, লালু সরকার, সামছুল আলম, রফিকুল ইসলামসহ একাধিক মরিচ চাষি বাংলানিউজকে জানান, যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরের সিংহভাগ জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। প্রতিবিঘায় গড়ে ৩৫-৪০ মণ হারে মরিচের ফলন হয়েছে। দামও বেশ ভালো।
 
তারা আরো জানান, বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতিমণ মরিচ প্রায় ১ হাজার ২শ’ টাকা দরে বেচাবিক্রি হচ্ছে। প্রতিবিঘা জমির বিপরীতে ১৫-১৬ হাজার টাকা উৎপাদন বাবদ ব্যয় করতে হয়েছে। সবমিলিয়ে চলতি মৌসুমের মরিচ থেকে ভালো অঙ্কের মুনাফার আশা করছেন তারা।

মরিচ চাষিরা আরো জানান, রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চরাঞ্চলের উৎপাদিত মরিচের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। দেশের নামকরা বিভিন্ন কোম্পানিসহ বড় বড় ব্যবসায়ী এজেন্টদের মাধ্যমে খ্যাতির এ মরিচ কিনে থাকেন। মরিচ শুকানো হচ্ছে।  ছবি: আরিফ জাহান-বাংলানিউজ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের হর্টিকালচার সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, গত বছরের নভেম্বরের শেষে মরিচের চাষ শুরু হয়। ৬০-৭০ দিন পর থেকে খেতের মরিচ তোলা শুরু করেন চাষিরা। প্রায় ৩ মাসের মতো মরিচ উঠানো যায়। এক সপ্তাহ পরপর খেত থেকে চাষিরা মরিচ তুলতে পারেন।

চরাঞ্চলের মরিচের খ্যাতির কারণ সম্পর্কে এ কৃষিবিদ জানান, শতভাগ স্থানীয় উন্নতজাতের মরিচ চরাঞ্চলের জমিতে চাষ করা হয়। এসব মরিচের ফ্লেভার মনকাড়া। উৎকট ঝাল থাকে না। স্বাদের দিকেও সুস্বাদু।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।