ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

পাঙ্গাস-সিলভার-তেলাপিয়া নয়, ফ্যান-মশারির সঙ্গে মজুরি ৮শ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০২ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৭
পাঙ্গাস-সিলভার-তেলাপিয়া নয়, ফ্যান-মশারির সঙ্গে মজুরি ৮শ মাগুরায় শ্রমের বাজার-ছবি-বাংলানিউজ

মাগুরা: দিনে হাজিরা দিতে হবে ৮শ’ টাকা। খাবারের তালিকায় পাঙ্গাস, সিলভার কার্প আর তেলাপিয়া মাছ হলে চলবে না। তালিকায় রাখতে হবে ভাল ভাল আইটেম। বাড়িতে থাকতে হবে টিভি। আর রাতে ঘুমোনোর সময় দিতে হবে মশারি ও ফ্যান।

এ আয়োজন বাড়িতে আসা কোনো মেহমানের জন্য আবশ্যিকভাবে রাখার দাবি নয়। ফসলের মাঠের পাকা ধান কেটে বাড়িতে আনতে হলে এমন ব্যবস্থা রাখার দাবি শ্রমিকের।

ধান কাটার এ মৌসুমে মাগুরার নান্দয়ালী হাটে গিয়ে দেখা গেছে-গৃহস্থ আর শ্রমিকদের মজুরি আর দাবি-দাওয়া নিয়ে এমন দর কষাকষি চলছে।

স্থানীয়রা বলছেন, এই হাটে গৃহস্থরা ভোরেই চলে আসেন। অপেক্ষমান শ্রমিকরাও এদিক-সেদিক অবস্থান নেন। সেখানেই একেক বছর একেক রকম দাবি নিয়ে হাজির হন শ্রমিকরা। চাহিদা-যোগানের ভিত্তিতেই চলে এই দর কষাকষি। প্রয়োজন বেশি হলে বা শ্রমিকের সংখ্যা কমে গেলে দাবি-দাওয়া বেড়ে যায়। হাটটি স্থানীয়ভাবে ‘মানুষ বেচার’ হাট নামেও পরিচিত।

জেলার মাঠে-মাঠে এখন পাকা বোরো ধান। আবহাওয়া খারাপ হয়ে যে কোনো সময় হতে পারে ঝড় বা ভারী বর্ষণ। তাই দ্রুত ফসল ঘরে তোলার তাড়া রয়েছে কৃষকের। কিন্তু শ্রমিকদের এমন দাবিতে অনেক কৃষকই পড়েছেন রীতিমত বিপাকে। মাগুরায় শ্রমের বাজার-ছবি-বাংলানিউজশ্রমিকরা কোনোভাবেই তাদের অবস্থান থেকে প্রায়শই সরে আসছেন না। দর কষাকষিতে মজুরি কিছুটা কমাতে রাজী হলেও ছাড়ছেন না সুযোগ-সুবিধা নিতে।

মাগুরা সদর উপজেলার শত্রুজিৎপুর এলাকার কৃষক নাসির উদ্দিন, শালিখার আনসার উদ্দিনসহ অনেকেই বাংলানিউজকে বলেন, ৬ শ’ টাকা দিয়ে শ্রমিক (ধানকাট‍া শ্রমিক) নিয়েছেন। তবে তাদের তেলাপিয়া, সিলভার কার্প বা পাঙ্গাস মাছ খেতে দিলে হবে না। বিড়ি সিগারেট দিতে হবে চাহিদা মত।

এছাড়া সন্ধ্যায় চা-নাস্তা আর রাতে টিভি দেখার ব্যবস্থা করতে হবে। আর শোবার জন্য অবশ্যিকভাবে রাখতে হবে মশারি আর ফ্যানের ব্যবস্থা।

নাসির উদ্দিন বলেন, মাঠে পাকা ধান। আকাশে মেঘ। যে কারণে শ্রমিকদের সব শর্ত মেনে নিতে হচ্ছে।

শ্রমিকদের বেশিরভাই আসছেন রংপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ি থেকে। করিম উদ্দিন, শফিক মিয়া, কৌশিক, মোকলেছসহ একাধিক শ্রমিক বলেন, অনেক টাকা বাস ভাড়া দিয়ে মাগুরায় এসেছেন। তাছাড়া প্রচন্ড রোদ, পানি-কাদার মধ্যে ধান কাটা অনেক কষ্টের কাজ। বাড়িও দূরে। তাই কম মজুরি নিলেও চলে না। আবার ভাল খেতে না পারলে বা মশায় কামড়ে দিলে পরের দিন কাজও করতে কষ্ট হবে।

তাদের বক্তব্য হচ্ছে-সারাবছর তো ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা মজুরি থাকে। এখন মৌসুম চলছে। এখনকার আয় থেকেই কিছু জমানো যায়। তাই ৭শ’ টাকার কম মজুরিতে পোষায় না।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা বাংলানিউজকে বলেন, মাগুরায় ধান প্রধান ফসল। এ বছর ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। যে কারণে ভরা মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সরকার ভর্তুকি দিয়ে নানা কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে। আগামীতে এ সমস্যা অনেকটাই দূর হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৬ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৭
ইইউডি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।