রোববার (২১ মে) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে দিনব্যাপী আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এই মর্মে তাগিদ দেন। এশিয়ার ক্ষুদ্র মাছচাষী সমিতিগুলোকে শক্তিশালীকরণ, তাদের ক্ষমতায়ন এবং টেকসই করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও কিরিগিজস্তানের প্রতিনিধিদের নিয়ে কর্মশালাটির আয়োজন করে বাংলাদেশ শ্রিম্প অ্যান্ড ফিস ফাউন্ডেশন (বিএসএসএফ)।
বিএসএসএফ এর উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত লিয়াকত আলী চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোস্তফা এ আর হোসাইন, ইউএনএফএও-ফিলিপাইনের প্রতিনিধি আনহিলিতো গোনসাল, কিরগিজস্তানের অ্যাকুয়াসার্ভিস লিমিটেডের ওলেগ দেসিইয়েভ, শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল অ্যাকুয়াকালচার ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সাবেক মহাপরিচালক ডিইএম উঈরাকোন, ভিয়েতনামের রিসার্চ ইন্সস্টিটিউট ফর অ্যাকুয়াকালচার নাম্বার থ্রি’র প্রতিনিধি থাই নক চিয়েন।
কর্মশালায় বিএসএসএফ-এর অ্যাকুয়াকালচার ভ্যালু স্পেশালিস্ট হীরন্ময় ভট্টাচার্য মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
হীরন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার ১১ শতাংশ বা ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষ এ খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তাদের মাধ্যমেই এ খাত থেকে মোট রপ্তানি আয়ের তিন দশমিক ৬৪ শতাংশ আসে। কিন্তু এদের কোনো বড় একক সংগঠন নেই। আবার স্থানীয় যেসব সংগঠন আছে সেখানে ছোট খামারির যুক্ত হতে পারেন না। কিন্তু একটি শক্তিশালী সংগঠনের মধ্য দিয়ে খুব সহজেই বাজারজাতকরণের ভাল উপায় জানা, ঝুঁকি মোকাবেলা, প্রশিক্ষণ, উৎপাদন বৃদ্ধিসহ নানাভাবে লাভবান হতে পারে তারা। বিএসএসএফ জাতীয়ভাবে দেশের বিভিন্ন সংগঠনগুলোকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তবে এজন্য সরকারের আরো সহায়তা প্রয়োজন।
অধ্যাপক ড. মোস্তফা এ আর হোসাইন বলেন, বর্তমানে দেশে ১ কোটি ৪৭ লাখ মাছ চাষী রয়েছে। এছাড়া ৩০ লাখ মৎস খামার এবং ১ হাজারের ওপরে হ্যাচারি রয়েছে। এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে দেশে ২৬ লাখ টন মাছ উৎপাদন করেছে, যেখানে হ্যাচারিগুলো থেকে পোনা উৎপাদন হয়েছে ৫৪৭ দশমিক ৫৫ মেট্রিক টন।
তিনি বলেন, দেশের মাছচাষি বা হ্যাচারি মালিকদের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোনো জাতীয় সংগঠন নেই। স্থানীয় বা জেলা ভিত্তিক যেসব সংগঠন রয়েছে, সেগুলো জাতীয়ভাবে সারাদেশের মাছচাষিদের সমস্যা দূরীকরণে কাজ করতে পারে না।
তাই এই অধ্যাপক মনে করেন, দেশের মৎসখাতকে এগিয়ে নিতে জাতীয়ভাবে কোনো সংগঠন গড়া জরুরি। এবং সেটা অচিরেই করা উচিত। জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যেটির সক্রিয় কার্যক্রম থাকবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়, মাছ গবেষণা ইনস্টিটিউট বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন কর্মশালায় বা সভায় মাছচাষিদের সংগঠনগুলো থেকে তাদের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এতে মাছ চাষ থেকে আরো বেশি রাজস্ব আসবে। কেননা, চাষিরা জাতীয়ভাবে সংগঠিত না হওয়ার কারণে বিভিন্ন দুর্যোগ, সংকট বা সমস্যা মোকাবেলা করতে পারেন না।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী দেশেগুলোর প্রতিনিধিরাও নিজ নিজ দেশের সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরেন। তারা বলেন, ছোট মাছচাষীদের অনেক প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতাকে মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হয়। এতে জাতীয় ও ব্যক্তিগত আর্থিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। তাই তাদের জন্য কাজ করতে পারে এমন কার্যকরী সংগঠন ছোট মাছচাষিদের ব্যাপক অর্থে লাভবান করতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
ইইউডি/জেএম