ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সুযোগ নিচ্ছে ভারতীয় রফতানিকারকরা, কমছে না চালের দাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৭
সুযোগ নিচ্ছে ভারতীয় রফতানিকারকরা, কমছে না চালের দাম কমছে না চালের দাম, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়া চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ২০ জুন চালের উপর থেকে আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার।
 

সরকারি এ সিদ্ধান্তে চাল আমদানি কয়েকগুণ বাড়লেও খুচরা বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি।  উল্টো এই সুযোগে দেশের চালের বাজারে এবার কোপ বসিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

গত দুই সপ্তাহে তারা চালের রফতানি দর বাড়িয়েছে টনপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ ইউএস ডলার। ফলে সরকারি সিদ্ধান্তে কেজি প্রতি কমপক্ষে ৬ টাকা দর কমার যে সুযোগ দেখা দিয়েছিল, তা মিলিয়ে গেছে এই ঘোষণাতেই।
 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক গোপন প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাওর অঞ্চলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢল, বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ, চলনবিলের আগাম বন্যা, মিল মালিক ও আমদানিকারকদের যৌথ ষড়যন্ত্রে এ বছরের বোরো মৌসুমের আগেই দেশের বাড়তে থাকে চালের দাম। এক পর্যায়ে প্রকার ভেদে চালের দাম বাড়ে কেজি প্রতি ১৫ টাকা পর্যন্ত। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার চাল আমদানির ওপর ধার্য করা শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে
আনে ১০ শতাংশে। সরকারি পর্যায়েও প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। শুল্ক কমানোয় কেজিপ্রতি চালের দর যেখানে কম পক্ষে ৬ টাকা কমার কথা, সেখানে দর কমেছে মাত্র ১ থেকে ৩ টাকা। আবার কোন কোন চালের না কমে বরং কেজিতে আরো ৩ টাকা বেড়েছে। আর এজন্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ সেল ও দেশি ব্যবসায়ীরা ভারতীয় রফতানিকারকদেরই দায়ী করেছেন। কমছে না চালের দাম, ছবি: বাংলানিউজ
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০ জুন পর্যন্ত ভারত থেকে চাল আমদানিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ব্যয় হতো সর্বোচ্চ ৩৯০ ইউএস ডলার। ২১ জুনে ১০ ডলার বেড়ে দাঁড়ায় ৪০০ ডলারে। ২২ জুন সেই দর আরো ২০ ডলার বেড়ে পৌঁছায় ৪২০ ডলারে। বর্তমানে ভারত থেকে প্রতি টন চাল আমদানিতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আদায় করছেন ৪৫০ ডলার। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে  আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
 
ভারত থেকে চাল আমদানির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত হিলি স্থলবন্দর। গত ২০ জুন চাল
আমদানিতে শুল্কহার ২৮ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণের পর বন্দর দিয়ে চাল আমদানি বেড়ে যায়। চাল আমদানিকারকদের মতে,  শুল্ক কমানোর ফলে চালের দর যে পরিমাণ কমবে বলে আশা করা হয়েছিল, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের রফতানি দর বাড়িয়ে দেওয়ায় সে সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। বাড়তি টাকায় আমদানি করা চালের দর কমানোর সুযোগ তো আর থাকছে না।
 
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে সে দেশে চালের দর বাড়ার এক প্রবণতার চিত্র তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনটিতে দেশটির চাল রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান পাত্তাভি এগ্রো প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিভি
কৃষ্ণ রাও বলেন, চলতি বছর  অনিয়মিত ক্রেতা বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা ভারত থেকে কয়েক লাখ টন চাল আমদানি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশ দুটি ভারতীয় চালের নিয়মিত আমদানিকারক না হওয়ায় এর প্রভাব রফতানিবাজারে পড়ছে।
 
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ভারতীয় চালের রফতানি মূল্য বেড়েছে ১৫ শতাংশ। জানুয়ারিতে প্রতি টন সাদা চালের রফতানি মূল্য (ফ্রি অন বোর্ড) ছিল ৩৬০ থেকে ৩৭০ ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৪২০ থেকে ৪৩০ ডলার। এদিকে হিলি বন্দরের একাধিক আমদানিকারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বর্তমানে ৪৫০ ডলারের কমে চাল দিচ্ছে না।
 
রাজধানীর পাইকারি চালের আড়ত বাদামতলীর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন,আশা করা হচ্ছিল শুল্ক কমানোয় আমদানি করা চাল ঢাকায় এলে দর কমবে। আমদানি করা মোটা চালের দর কম হলে তখন দেশি মিল মালিকরাও তাদের মজুদ চালের দর কমিয়ে দেবেন । কিন্তু ভারতীয় ব্যবসায়ীরা রফতানি দর বাড়ানোয় ঘাটতি পূরণ হচ্ছে ঠিকই দরে প্রভাব পড়ছে না।
 
বর্তমানে রাজধানীর বাজারে সর্বনিম্ন দামে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। মাঝারি মানের চাল বিআর আঠাশ ও লতা ৫১ থেকে ৫২ টাকা ও পাইজাম ৫০ থেকে ৫১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরু চাল মিনিকেট ও নাজিরশাইলের কেজি এখন ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা। তবে ভালো মানের নাজির ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আতপ চালের কেজি ৫০ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। সরু চালের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ।
 
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৭
আরএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।