ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

কৃষি

পাট পচানোয় মাছশূন্য হচ্ছে চিত্রা-নবগঙ্গা-কাজলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:১২, আগস্ট ৩০, ২০১৭
পাট পচানোয় মাছশূন্য হচ্ছে চিত্রা-নবগঙ্গা-কাজলা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নড়াইল: নড়াইল জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত চিত্রা, নবগঙ্গা ও কাজলা নদীর দুই পাড়ে গত কয়েক বছর ধরে মৌসুমে ব্যাপকভাবে পাট পচানো হচ্ছে। ফলে পানি পচে দুর্গন্ধের পাশাপাশি মাছ মরে যাচ্ছে।

এ পানি ব্যবহার করে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নদী তীরবর্তী হাজার হাজার মানুষ। নদীগুলো প্রায় মাছশূন্য হয়ে পড়ায় বেকার হয়ে পেশা থেকে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন জেলেরাও।


 
তবে নদীতে না পচিয়ে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছাড়াতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, গত ৮/১০ বছর ধরে জেলার উৎপাদিত পাটের ৬৫ শতাংশই নদী তিনটির ৭০ কিমি তীরজুড়ে জাগ দেওয়া হচ্ছে। পুকুর, ডোবা, উন্মুক্ত জলাশয় ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ায় চাষিরা নদীতেই পাট পচাতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

লোহাগড়া উপজেলার মিটাপুর ও নলদী, নড়াইল সদর উপজেলার হবখালী, শংকরপুর, রতডাঙ্গা ও তুলারামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে নদীর দু’তীরে পাট পচাতে দেখা গেছে। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমজেলেদের অভিযোগ, এর ফলে প্রতি বছর মাছ মরে-পচে যাওয়ায় নদীগুলো প্রায় মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। শত শত মৎস্যজীবী পরিবার এ পেশা থেকে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

পঙ্গবিলা গ্রামের জেলে সুধীর দাস জানান, তারা কয়েকশ’ জেলে বছরের পর বছর ধরে এসব নদী থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বিভিন্ন কারণে দিন দিন এ পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন জেলেরা। নদীতে পাট জাগ দেওয়ায় বছরের প্রায় চারমাস নদী থেকে কোনো মাছই ধরতে পারেন না তারা। এ সময় তারা সম্পূর্ণ বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করেন।

নদীতে পাট জাগ দেওয়া বন্ধ এবং ওই চারমাস জেলেদের বিনামূল্যে চাল, ডাল, তেল  (রেশন) দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

নড়াইল সদর উপজেলার ময়নখোলা গ্রামের চিত্রাপাড়ের বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ জনপদের হাজার হাজার মানুষ আদিকাল থেকেই গোসল, কাপড়-চোপড় ধোয়াসহ পারিবারিক সব কাজ এমনকি রান্নাও নদীর পানিতে করে আসছেন।
কিন্ত গত কয়েক মৌসুমে পাট জাগ দেওয়ায় পানিও দূষিত ও পচে থাকছে। ফলে বছরের ওই ৩-৪ মাস এ পানি ব্যবহার করতে পারছেন না তারা।

পচা পানিতে গোসল করায় অনেকের চুলকানিসহ পানিবাহিত রোগ হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শেখ আমিনুল হক বলেন, এ বছর জেলায় পাটের আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে। নদীতে পাট না পচিয়ে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছাড়াতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

জেলার ৭৫০ জন কৃষকের মাঝে রিবন রেটিং বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

‘নদীর পানিতে পাট পচানোয় তীরবর্তী এলাকার মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতি বছর এভাবে নদীতে নদীতে পাট জাগ দেওয়া হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম আরও বেশি হুমকির মুখে পড়বে’ বলে মন্তব্য করেন পরিবেশবাদী এনজিও নবান্নের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম তুহিন।

নড়াইলের জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় সংশ্লিষ্টদের নদীতে পাট না পচাতে বলা হয়েছে। কৃষি বিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।