দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার জেলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত জমিতে বোরো চাষে সেচ কাজে ডিজেল চালিত ৬২ হাজার ৬৬৯টি নলকূপ ও ৩৮৬টি ললিত পাম্প ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে তেল সংকটের কারণ হিসেবে জেলার ফিলিং স্টেশন ও জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা জানান, দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলায় অবস্থিত রেলওয়ের জ্বালানি তেলের প্রধান ডিপোতে গত তিন সপ্তাহ ধরে দেখা দিয়েছে চরম সংকট। দেশের অন্যান্য তেল ডিপোতে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও পার্বতীপুর ডিপোতে চলছে সংকট। এ সংকট শুধু দিনাজপুরে নয়, রংপুর বিভাগের ৮ জেলার প্রায় ৬৬২টি ফিলিং স্টেশন ও নির্ধারিত এজেন্টগুলোতেও চলছে।
রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে খুলনার দৌলতপুর জ্বালানি তেলের ডিপো থেকে সময়মতো পার্বতীপুর ডিপোতে ওয়াগন না পৌঁছানোর কারণে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার পার্বতীপুর রেলওয়ে ডিপো সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার পার্বতীপুর রেলওয়ে ডিপোতে তেল এসেছে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার। অথচ এই ডিপোতে প্রতিদিনের চাহিদা ১৮ লাখ লিটার। সে অনুযায়ী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চাহিদা ২ কোটি ১৬ লাখ লিটার তেল। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় অর্ধেকে। এর আগে ভারতের আসাম থেকে পার্বতীপুরের এই ডিপোতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হলেও বর্তমানে তাও বন্ধ রয়েছে। আর কয়েকদিন এ পরিস্থিতি বিরাজ করলে শিগগিরই তেল শূন্য হয়ে পড়বে পার্বতীপুর রেলওয়ে ডিপো।
দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর বলাই বাজার এলাকার কৃষক মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে জানান, তিন সপ্তাহ হয়েছে জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যে চারা রোপণ করেছি। চারাগুলো ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। এ অবস্থায় জ্বালানি সংকটের কারণে পর্যাপ্ত সেচের ব্যাঘাত ঘটছে। ফিলিং স্টেশনগুলোতে ৪ থেকে ৫ লিটারের বেশি তেল দিচ্ছে না। যতটুকু তেল পাচ্ছি তা দিয়েই জমিতে সেচ দিচ্ছি। জমির ফসল টিকিয়ে রাখতে আশপাশের খাল-বিল থেকে কোনোমতে কিছু সংখ্যক পানি সরবরাহ করছি। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এরকম পরিস্থিতিতে পানি অভাবের কারণে বোরো চাষ হুমকির মধ্যে পড়েছে।
জেলা জ্বালানি তেল ফিলিং স্টেশন মালিক সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. রওশন আলী বাংলানিউজকে জানান, খুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল মজুদ রয়েছে। রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্ম অবহেলার কারণে তেলবাহী ওয়াগন বিলম্বে আসছে। তেল সরবরাহে বিলম্ব হওয়ায় পার্বতীপুর ডিপোতে তেলের মজুদ সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে যেকোনো সময় পার্বতীপুর রেলওয়ে ডিপো জ্বালানি শূন্য হয়ে যেতে পারে।
জ্বালানি তেলের জন্য ৮ জেলার শতশত ট্যাংক লরি নিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করছেন ফিলিং স্টেশন ব্যবসায়ীরা। তবে আগামী রোববার বা সোমবারের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তেল ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮
জেডএস