চারিদিকে ধানের চারা রোপণ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষকরা। গত বোরো মৌসুমে লোকসান গুণতে হয়েছে কৃষকদের।
বদলগাছী উপজেলায় চাংলা মাঠে কাজ করছেন বইতুল শেখ। এবারের মৌসুমে তিন বিঘা বোরো আবাদ করেছেন তিনি। গত বোরো মৌসুমে লোকসান গুণতে হয়েছে তাকে। তবে এবার লোকসান পুষিয়ে নেবেন এই আশায় ফসল বুনেছেন।
বইতুল শেখ বলেন, “এবার ধানের অবস্থা ভালো। তবে এখনই বুজার লয়। চৈত্রিক (চৈত্র) মাস গ্যালে বুজা যাবি। গ্যালো বছর ফলন ভালো লয়। যে হারে হয়, সেই হারে খুব অ্যাটা হয়নি। গ্যালো বছর পানি ঝরে ব্যাবাক ধান ফেলে দিচে। তবে এবার ধান ভালো, খারাপ লয়। ”
মধ্যবিত্তের চাহিদা মাঝারি মানের মিনিকেট ও গুঁটি চাল। অনেকের কাছে গুঁটি চাল লাল স্বর্ণা নামেও পরিচিতি। জিরাশাইল ধানের জন্যও বিখ্যাত নওগাঁ জেলা। দেশের ধান-চালের বড় মোকাম নওগাঁ জেলাতে প্রায় ১২শ’ মিল রয়েছে। এর মধ্যে অটোমেটিক ৫৫টি এবং বাকিগুলো হাসকিং মিল। জেলা থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়। জেলার চাহিদা ৪ লাখ মেট্রিক টন চাল। বাকি চাল সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত বোরো মৌসুমে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ধান কম উৎপাদিত হয়েছে।
জিদিরপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ সাত বিঘা জমিতে এবার বোরো আবাদ করেছেন। বিঘা প্রতি খরচ করেছেন সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। আশা করছেন এবার বিঘা প্রতি ২০ মণ ধান ঘরে তুলবেন।
এবার ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন আব্দুস সামাদ জানান। গত বছরের ক্ষতি এবার পুষিয়ে নেওয়া যাবে বলে আশা করছেন জানিয়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “অন্যান্য বছর নিচে ২০ মণ হইচে। গত বছর ঝড়-বৃষ্টির প্রভাবে বিঘা জমিতে ৫ থেকে ৭ মণ ধান পাইছি। এবার আশা করা যাচ্ছে, আল্লাহ যদি দুযযোগ না দেয় যথারীতি পাবো। ”
চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এবার বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৩১ হাজার ৪২ মেট্রিক টন। গত বছর ৩৮৩ হেক্টর জমিতে নষ্ট হয়েছিলো এক হাজার ৫৭৫ মেট্রিক টন বোরো।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি প্রকৌশলী আবুল খায়ের মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, নওগাঁ জেলায় এবার বোরো ধানের চাষ বেড়ে গেছে। সব সময় নওগাঁ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ৬০ শতাংশ জমিতে জিরাশাইল ধানের চাষ হচ্ছে। এই ধান দিয়ে মিনিকেট চাল তৈরি হয়।
নওগাঁ জেলায় ১০ থেকে ১৫ দিন আগে বোরো রোপণ শুরু হয়েছে। অনেক চাষি আলু ও সরিষার জমি নতুন করে প্রস্তুত করে বোরো রোপণ করছেন। এটা আরো কিছু দিন পর্যন্ত চলবে। রোপণের ১৩০ থেকে ১৩৫ দিন পরে কৃষকের ঘরে ধান ওঠে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৮
এমআইএস/এমজেএফ