উৎপাদন খরচ কম ও চাহিদা বেশি থাকায় বাংলাদেশের খামারিদের কাছে টার্কি পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রচলিত খামারে প্রজননের জন্য দুটি স্ত্রী টার্কির সঙ্গে একটি পুরুষ টার্কি রাখতে হয়।
শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, টার্কির বাচ্চা উৎপাদনের জন্য গত বছর জুনে বাজার থেকে ২ হাজার টাকায় আটটি ডিম কিনি। এর মধ্যে পাঁচটি ডিম থেকে বাচ্চা হয় আর তিনটি নষ্ট হয়। তখন থেকেই কৃত্রিম উপায়ে উর্বর ডিম উৎপাদনের কথা ভাবতে থাকি। পরে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পড়াশোনা করে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারি।
কৃত্রিম প্রজনন কিভাবে করলেন জানতে চাইলে শাহীন বলেন, প্রথমে আমার বাড়ির খামার থেকে প্রজননের জন্য পুরুষ টার্কি বাছাই করি। এরপর টার্কিটির শুক্রাণু টেস্টটিউবে সংগ্রহ করি। এরপর ডিম দিচ্ছে এমন একটি স্ত্রী টার্কির ডিম্বাণু সংগ্রহ করে শুক্রাণু তার ডিম্বনালির দুই সেন্টিমিটার ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দেই।
তিনি জানান, এই প্রক্রিয়ায় সাতদিনের মধ্যে স্ত্রী টার্কিটি যতগুলো ডিম দেবে তার শতভাগ উর্বর হবে। আরও উর্বর ডিম পেতে সাতদিন পর পর স্ত্রী টার্কিতে একই পদ্ধতিতে শুক্রাণু দিতে হবে। একটি সুস্থ পুরুষ টার্কি থেকে তিনদিন পর পর ০.৩ মিলিলিটার শুক্রাণু সংগ্রহ করা যায়। একটি স্ত্রী টার্কির ডিম নিষিক্ত করতে প্রয়োজন হয় ০.০২৫ মিলিলিটার শুক্রাণু। ফলে একটি পুরুষ টার্কির শুক্রাণু অন্তত ১২টি স্ত্রী টার্কিকে সরবরাহ করা যায়।
ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ শাখার যুগ্ম সম্পাদক ড. কে ভি এম সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পুরুষ টার্কির ওজন স্ত্রী টার্কির চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয় বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের মিলন বাধাগ্রস্থ হয়। ফলে উর্বর ডিমের পাশাপাশি কিছু অনুর্বর ডিমও উৎপাদিত হয়। তবে, শাহিনের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে শতভাগ উর্বর ডিম পাওয়া যাচ্ছে।
খামারিদের উদ্দেশে শাহীন বলেন, সংগৃহীত শুক্রাণু অবশ্যই আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে স্ত্রী টার্কিতে প্রবেশ করাতে হবে।
শাহীন আশা করেন, এই পদ্ধতিতে তুলনামূলক কম পুরুষ টার্কি পালন করেই খামারে শতভাগ উর্বর ডিম উৎপাদন করা যাবে। সম্ভব হবে টার্কির দ্রুত বাচ্চা উৎপাদন, কমবে খরচ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তরুণ এ বিজ্ঞানী বলেন, কম সময়ে বেশি ওজনের টার্কি উৎপাদনের জন্য গবেষণা করার ইচ্ছা রয়েছে।
টার্কির মাংসে বেশি প্রোটিন ও কোলেস্টেরল কম, উৎপাদন খরচও কম। ফলে দিন দিন খামারি ও স্বাস্থ্য সচেতন ভোজন রসিকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে টার্কি।
শাহীনের এ সফলতা টার্কি উদ্যোক্তাদের জন্য মাইলফলক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাকৃতিকভাবে মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ উর্বর ডিম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ উদ্ভাবনের ফলে উর্বর ডিমের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ফলে অল্প সময়ে দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটানো যাবে।
বাজারে এখন প্রতি কেজি টার্কির মাংস ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃত্রিম এ প্রজনন পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারলে মাংসের দাম আরও কমে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৮
আরআর