ঢাকা, সোমবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৭

কৃষি

পানের দামে সর্বকালের রেকর্ড, লাভ নেই কৃষকের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:২৩, মার্চ ১, ২০১৮
পানের দামে সর্বকালের রেকর্ড, লাভ নেই কৃষকের পান-সুপারির দোকান। ছবি: মানজারুল ইসলাম

খুলনা: সারা দেশের পানের বাজার এখন চড়া। পাইকারি মোকামগুলোতে সর্বকালের রেকর্ডমূল্যে বিক্রি হচ্ছে পান। খুচরা বাজারে একটি পানই বিক্রি হচ্ছে ৫-১০ টাকা। সাধারণ পান এতো দামে সাধারণত বিক্রি হয় না। তবু খুশি নন না পানচাষি।

পানের জন্য বিখ্যাত খুলনা ও বাগেরহাটের কয়েকজন পানচাষির সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।

বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) রূপসা উপজেলার স্বল্পবাহিরদিয়া গ্রামের পানচাষি মনির উদ্দিন শেখ বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে পানের দাম চড়া হলিও আমাগে কোনো লাভ নেই।

 

তিনি জানান, এলাকার জমি ও আবহাওয়া পান চাষের উপযোগী। অন্য ফসলের তুলনায় পান চাষ অধিক লাভজনক। ফলে অনেকেই অন্য ফসলের পরিবর্তে ব্যাপকহারে পান চাষ করেছিলেন। কিন্তু এবার তীব্র শীত ও কুয়াশায় পান পচে গেছে। যে কারণে পানের দাম বেশি হলেও চাষির কোনো লাভ হচ্ছে। দোকান থেকে পান কিনছেন একজন ক্রেতা।  ছবি: মানজারুল ইসলামআব্দুল্লাহ নামে অপর এক চাষি জানান, স্বল্পবাহিরদিয়া ছাড়াও রূপসা উপজেলার তালতলা, গিলাতলা, মানসা বাজার, মৌভোগ, কামটা, বড়বাহিরদিয়া, খাজাডাঙ্গা, বুড়িরবটতলায় এবার ব্যাপক পান চাষ হয়। এসব এলাকার পান মানসা ও উপজেলা বাজারে পাইকারিতে বিক্রি হয়। এসব পান ঢাকা থেকে ব্যাপারীরা এসে কিনে নিয়ে যান। যা  বিদেশেও রফতানি করা হয়।

রূপসার স্থানীয় বাসিন্দা লিটন বলেন, রূপসার শ্রীরামপুর, দেবীপুর, শিয়েলী, কিসমত খুলনা, ডোবা, গোলটি, দিঘলিয়া ও তেরখাদায় বড় বড় পানের বরাজ রয়েছে।

পূর্ব রূপসার পান ব্যবসায়ী শক্তি দত্ত বলেন, সর্বকালের সবচেয়ে বেশি দামে পান বিক্রি হচ্ছে। ২১০ টাকায় এক পোন (৮০ টিতে এক পোন) পান কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে ২২০ টাকায়।

বাগেরহাট সদর উপজেলার সিংড়াই গ্রামের পান বরাজের মালিক মো. আব্দুর সবুর (৬২) বাংলানিউজকে জানান, গেলো শীতে অতিরিক্ত কুয়াশা পড়ায় বরাজের (পানক্ষেত) সব পান ঝরে গেছে। এখন পানের অনেক মূল্য থাকলেও আমাদের বরাজে কোনো পান নেই। মূল্য বেশি হলেও আমাদের লাভ নেই।

সিংড়াই গ্রামের পান বরাজের মালিক লিটন আকুঞ্জী (৩৫) বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা, শীতকালের কুয়াশা এবং পানের ডাটা পচা রোগে এবার আমরা শেষ হয়ে গেছি। গ্রামের শতাধিক পানচাষি এ বছর অনেক বড় লোকসানে পড়বে। ঋণের টাকা শোধ করা কষ্টকর হবে।

পান ব্যবসায়ী সিদ্দিক মোল্লা জানান, কার্তিক মাসে যে পান পোন ৫০-৬০ টাকা কিনতাম সে পান এখন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তারপরও পান পাচ্ছি না। বরজে পান না থাকার কারণে চাষিরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তেমনি আমরা ব্যবসায়ীরাও বিপদে পড়েছি।

খুচরা পান বিক্রেতা মহানগরীর দোলখোলার পান দোকানদার তৈয়েব বলেন, পাইকারি বাজার থেকে আমরা বড় আকারের পান এক পোন কিনি ৩৫০ টাকায়। বিক্রি করি ৩৮০ টাকায়। আর মাঝারি আকারের পান কিনি ২০০ টাকা পোন দরে। বিক্রি করি ২৫০ টাকায়।

এই দোকানে পান কিনতে আসা পূজা রানী বলেন, পানের দাম এতো বেশি যে এখন আর পোন ধরে কিনতে পারছি না। এক একটা বড় পান কিনতে হচ্ছে ৫ টাকা করে। এতো দামে আগে কখনও পান কিনিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনা জেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম বাংলানিউজকে বলেন, খুলনার প্রায় সব উপজেলায় কম বেশি পান চাষ হয়।   রূপসায় ২১৫ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ১ হেক্টর, দিঘলিয়ায় ২২৫ হেক্টর, ফুলতলায় ৯০ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ৫ হেক্টর, তেরখাদায় ৬২ হেক্টর, পাইকগাছায় ১৮৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। সর্বমোট ৭৮৩ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক মো. আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে জানান, রোগে পান পচে যাওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কোনো কৃষক তাকে কিছুই জানাননি।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা,  মার্চ ০১, ২০১৮
এমআরএম/এএটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।