ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

গোলায় পাকা ধান তুলতে ব্যস্ত জুমিয়ারা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮
গোলায় পাকা ধান তুলতে ব্যস্ত জুমিয়ারা ধান কাটছেন জুম চাষিরা। ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি: পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যের চাষাবাদ হচ্ছে জুম। বর্তমান সময়ে পাহাড়িরা অন্যান্য পেশা গ্রহণ করলেও এখন পর্যন্ত জুম ফসল তাদের ভরসার প্রতীক। বছর শেষে গোলায় ভরে সোনালি পাকা ধান। সেইসঙ্গে তোলেন অন্যান্য ফসল।

এদিকে জুমের ফসলে পাহাড় সেজেছে নবরূপে। একদিকে পাকা সোনালি ধানের মৌ মৌ গন্ধ অন্যদিকে সাথী ফসলের পসরা পাহাড়কে অন্য রূপ দিয়েছে।

তাই এসব ফসল দেখে পাহাড়ি পরিবারগুলোর চোখে মুখে হাসির ফুলকি ঝড়ছে। তাদের ঘরে চলছে উৎসবের আমেজ।

পাহাড়ে কিছু কিছু জায়গায় পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। গোলায় পাকা ধান তোলার জন্য জুমিয়ারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর যাদের ধান এখনো পাকেনি তারাও ধান গোলায় তোলার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। গত বছর পাহাড় ধসের কারণে জুমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বছর প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় জুমের ভাল ফলন হয়েছে।

জুমিয়ারা ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পাহাড় পরিচ্ছন্ন করে জুম ফসল চাষের উপযোগী করে তোলেন। এরপর বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে গর্ত করে ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল, শিম, আদা, ভুট্টাসহ নানা ফসল রোপণ করেন।

রোপণের তিন মাস পর তথা ভাদ্র মাস থেকে এসব ফসল ঘরে তোলার ধূম শুরু হয়। অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত উৎপাদিত এসব ফসল পর্যায়ক্রমে ঘরে তোলেন জুমিয়ারা। পাহাড়ে পাকা ধান।  ছবি: বাংলানিউজসরেজমিন জেলা সদরের কাপ্তাই-রাঙামাটি বিকল্প সড়কের মোরঘোনা এলাকার বাসিন্দা জুম চাষি বিপুল চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর পাহাড় ধসে জুমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং জায়গার সংকুলান হয়েছে। তবে আশা করছি আবহাওয়া এ বছর ঠিক থাকায় ফসল ভাল পাবো।

জুমিয়া বিপুল অভিযোগ করেন, জুম চাষের সমস্যা হলেও কৃষি কর্মকর্তারা কোনও খবর নেন না। কৃষি বিভাগ যদি উন্নত জাতের ধান, ফসলের বীজ দিতো তাহলে ফলন ২-৩ গুণ বাড়তো।

বড়গাঙ এলাকার জুম চাষি মঙ্গল চাকমা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, গত বছর জুমে ২০ কেজি ধান রোপণ করে ৪-৫ বস্তা ধান পেয়েছিলাম। এ বছর উৎপাদন বাড়তে পারে। গত বছরের তুলনায় এবার জুমে ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান তিনি।

কৃষি সম্প্রসাণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর  লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে জুমের ধান আবাদের। তবে আবাদ করা  হয়েছে ৫ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে। এ জমি থেকে এবার ৫ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ধান পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ মানুষ জুম নির্ভর। জুমের ফলন ভাল হলে পাহাড়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা যায় না।

এ কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যদি জুম চাষ করা যায় তাহলে অধিক ফলন উৎপাদনের ফলে জুমিয়ারা যেমন লাভবান হবেন ঠিক অন্যদিকে অধিক ফলন উৎপাদনের ফলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এসব ফসল বিক্রিও করা যাবে। এছাড়া একই জমিতে সারা বছর চাষাবাদ করতে পারলে জুমিয়াদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলে যোগ করেন কৃষি কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক  পবন কুমার চাকমা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জুমের ফসল ভাল হয়েছে। এছাড়া ধানের পাশাপাশি অন্যান্য সাথী ফসলের উৎপাদনও সন্তোষজনক বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, জুমিয়াদের যদি আমরা উচ্চ ফলনশীল ধানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি তাহলে তারা আরও ভাল ফলন ঘরে তুলতে পারবে।

ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগ জুমিয়াদের নিয়ে কাজ করছে বলেও যোগ করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।