ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

২০ লাখ ফুলচাষি, ঢাকায় হবে স্থায়ী বাজার

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮
২০ লাখ ফুলচাষি, ঢাকায় হবে স্থায়ী বাজার ফুল কিনছেন এক তরুণী | বাংলানিউজ ফাইল ছবি

ঢাকা: যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার পানিছড়া গ্রামে ১৯৮৩ সালে বাণিজ্যিকভাবে ফুলচাষ শুরু হয়। পরবর্তীতে যশোর জেলার নিকটবর্তী পাঁচটি উপজেলায় ফুলচাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হয়। বাংলাদেশের অন্য কিছু জেলায়ও ফুলচাষ বিস্তার লাভ করেছে। বর্তমানে যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, গাজীপুর, মেহেরপুর, ঢাকা, বগুড়া, রংপুর ও রাজশাহীসহ ২২টি জেলায় ফুলচাষ হচ্ছে।

প্রায় ২০ লাখ লোক ফুলচাষে জড়িত। অধিকাংশ ফুল ঢাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিক্রি হয়।

ঢাকার শাহবাগ ও আগারগাঁওয়ে পাইকারি ফুলবাজার রয়েছে। এখান থেকে খুচরা বিক্রেতারা ফুল কিনে ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়েন। তবে সবজি বিক্রির জন্য কারওয়ান বাজারে অবকাঠামোগত সুবিধা থাকলেও ফুল বিক্রির জন্য কোনো বাজার নেই। কেন্দ্রীয় ফুলবাজার নির্মাণের দাবি বহু আগে থেকেই করে আসছেন ফুল বিক্রেতারা। ফুলের ব্যাপারে মানুষ খুবই সংবেদনশীল, একটু ময়লা ও ধুলাবালি লাগলে সেই ফুল আর বিক্রি হয় না। সামান্য সূর্যের তাপেও ফুলের সৌন্দর্য ম্লান হয়। ফলে ফুল বিক্রির করে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন সংশ্লিষ্টরা।

ফুল বিক্রেতাদের দাবির প্রেক্ষিতে দুইতলা ভবন নির্মাণ করা হবে গাবতলীতে। প্রায় দেড় একর জমির উপর এটাই হবে ফুল বিক্রির কেন্দ্রীয় বাজার। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বাজার হিসেবে নির্মাণ হবে ভবনটি।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের উপ-পরিচালক (গবেষণা) দেওয়ান আশরাফুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে আগারগাঁও অন্যতম ফুলের পাইকারি বাজার। এছাড়া শাহবাগসহ নগরীরর বিভিন্ন স্থানে ফুল বিক্রি হয়। কিন্তু ভালো পরিবেশে ফুল বিক্রি না হওয়ায় সংশ্লিষ্টরা ভালো দাম পান না। তাই আমরা একটা আধুনিক ফুল বিপণন কেন্দ্র নির্মাণ করবো। এর পাশেই একটা প্যাকেজিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।

তিনি আরো বলেন,  ফুলের প্যাক হাউজ অনেক আধুনিক হবে। এখান থেকে ফুল প্যাক করে বিদেশে রফতানি করতে পারবো। প্যাক হাউজে এয়ার কুলিং ব্যবস্থা থাকবে, যাতে ফুল সতেজ থাকে।

শুধু ঢাকা নয়, এর পাশাপাশি যশোর, মানিকগঞ্জ, সাভারেও আধুনিক বিপণন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে বলেও জানান আশরাফুল হোসেন।

কৃষি বিপণন অধিদফতর, বিপণন সেবা সম্প্রসারণ ও খামারের সঙ্গে সরাসরি বাজার সংযোগ সৃষ্টি করা হবে। যেন ফুলচাষি ন্যায্য দাম পেতে পারেন। ফুল  প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্যাকেজিং কার্যক্রমে সহায়তার জন্য ঢাকায় একটি প্রসেসিং সেন্টার নির্মাণ করা হবে। অধিক উৎপাদনশীল জেলায় ফুল বিক্রির জন্য দুটি অ্যাসেম্বল সেন্টার থাকবে।

দেশে ফুলচাষ সম্প্রসারণের আরো সম্ভাবনা আছে। শুধুমাত্র যশোর জেলায় পাঁচ হাজার পরিবার ফুলচাষে জড়িত। এ জেলায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলচাষ হয়। দেশে প্রায় ছয়শ কোটি টাকা মূল্যের ফুল উৎপাদিত হচ্ছে। যশোর জেলার আশপাশেই নানা জাতের ফুলচাষ হচ্ছে। রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিয়াস এবং জারবেরা ছাড়াও মৌসুমি ফুল- চন্দ্রমল্লিকা, ক্যালেনডুলা, জিপসি ফুল উৎপাদিত হচ্ছে। সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে প্রচুর পরিমাণে এবং মে থেকে আগস্ট মাসে স্বল্প পরিমাণে ফুলচাষ হয়।  

এ জন্য ‘বাজার অবকাঠামো, সংরক্ষণ ও পরিবহন সুবিধার মাধ্যমে ফুল বিপণনে সহায়তা প্রদান’ প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪৯ কোটি ২০ লাখ। চলতি সময় থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।  

প্রকল্পের আওতায় গাবতলীতে একটি ফুলের পাইকারি বাজার নির্মিত হবে। ফুল উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত ৬ হাজার ৪০০ জন কৃষক, উদ্যোক্তা, বাজারজাতকারী এবং কৃষি বিপণন অধিদফতরের ১৫০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। একশটি বিপণন দল গঠনের পাশাপাশি প্রসেসিং এবং প্যাকেজিং মেশিনারি কেনা হবে। ঢাকার কেন্দ্রীয় বাজারের পাশাপাশি ২২ জেলায় ছোট ছোট আধুনিক মার্কেট নির্মাণ করা হবে, যেখানে ফুলের উৎপাদন বেশি। ২২টি জেলার সঙ্গে ঢাকার কেন্দ্রীয় বাজারের সঙ্গে সংযোগ থাকবে।
 
কৃষি বিপণন অধিদফদরের মহাপরিচালক ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে আমরা ফুলচাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছি। কিন্তু  নানা কারণে চাষিরা ফুলের সঠিক দাম পান না। তারা দীর্ঘদিন ধরেই একটা কেন্দ্রীয় বাজার নির্মাণের দাবি করে আসছেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুত সময়েই কাজ শুরু করতে পারবো। আমাদের চাওয়া চাষিরা যেন সুন্দর ও আধুনিক পরিবেশে তাদের যত্নের ফুল বিক্রি করতে পারেন। এটা করতে পারলে তারা ফুলের ন্যয্য দাম পাবেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮
এমআইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।