ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ফসলি জমিতে ইটভাটা, হুমকির মুখে আবাদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৯
ফসলি জমিতে ইটভাটা, হুমকির মুখে আবাদ ফসলি জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা-ছবি-বাংলানিউজ

দিনাজপুর: পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই দিনাজপুর সদর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গায় ফসলি জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা। এমনকি নেয়া হয়নি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি।

ইটভাটা নির্মাণের পর চালু করা হলে আশপাশের কয়েকশ’ একর আবাদী জমির ফসল নষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।  

ঘুঘুডাঙ্গা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এক বছর আগে যেখানে ধানসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ হতো সেখানে এখন নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা।

শ্রমিকরা পুরোদমে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। নির্মিত ইটভাটার পাশের জমিতে চলছে বোরো রোপণ কার্যক্রম।  

ইটভাটা নির্মাণ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেয়নি ভাটা কর্তৃপক্ষ। এমনকি জেলা প্রশাসনের অনুমতিও নেয়নি। ইটভাটা নির্মাণ হলে হুমকির মুখে পড়বে কয়েকশ’ একর আবাদী জমি।  

স্থানীয় কৃষক জমির উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, ইটভাটা নির্মাণ হলে আমাদের ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাবে। ভাটার সঙ্গে লাগানো রয়েছে কয়েকশ’ একর আবাদী জমি। যেখানে ধান, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলানো হয়। ইটভাটা চালু হলে আমরা বিপদে পড়ে যাব।  

ফসলি জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা-ছবি-বাংলানিউজকৃষকরা আরও জানান, আবাদি জমিতে এভাবে ইটভাটা নির্মাণের বিপক্ষে এলাকার সবাই। কিন্তু ভাটার মালিক এলাকার খুব প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারছেন না। ফসলি জমিতে ভাটা হলে আশপাশের অন্য জমিগুলোতে কোনো আবাদ হবে না। ইটভাটার জায়গাটি আবাদী কি না সে ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর, কৃষি বিভাগের প্রত্যয়নপত্র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং প্রশাসনের অনাপত্তি, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন কাগজপত্র লাগে। কিন্তু ঘুঘুডাঙ্গার ইটভাটার মালিকের কাছে কোনো কাগজপত্র নেই।  

ইটভাটার ম্যানেজার মোমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, মালিকের নির্দেশে শ্রমিকরা ইটভাটা নির্মাণের কাজ করছেন। আগামী ৬ মাসের মধ্যে ভাটার চিমনির কাজ শেষ হবে, এর পর আগামী মৌসুমে ইট তৈরির জন্য প্রস্তুত হবে ভাটা।
 
ইটভাটার মালিক মো. মহসিন আলী বাংলানিউজকে জানান, তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাননি। তবে জেলা প্রশাসনে টাকা জমা দিয়েছেন। তিনি ভাটার নাম দিয়েছেন এমআর ব্রিকস। পরবর্তীকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও পেয়ে যাবেন বলে দাবি করেন তিনি।  

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোহাম্মদ শামীম বাংলানিউজকে জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এমআর ব্রিকস নামক ইটভাটার কোনো ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ হলে আশপাশের সফলের অনেক ক্ষতি হবে।  

দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জয়নুল আবেদীন বাংলানিউজকে জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে ইটভাটা নির্মাণ করতে পারে না। এটা দণ্ডনীয় অপরাধ। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক কাজী সাইফুদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই ইটভাটা নির্মাণের কাজ করতে হবে। ভাটার ধোয়ার ফলে আশপাশের পরিবেশের ক্ষতি হবে। কৃষি বিভাগ থেকে অনাবাদি জমির প্রত্যয়নপত্র না দিলে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়ার প্রশ্নই আসে না।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।