ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কেঁচো সারে সচল সংসারের চাকা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
কেঁচো সারে সচল সংসারের চাকা মারজাহান বেগম কেঁচো সার উৎপাদনকেন্দ্র

রাঙামাটি: স্বামীর আয়ে সংসারে টেনেটুনে চললেও সন্তানদের লেখা-পড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হতো। রাঙামাটি শহরের বাসিন্দা মারজাহান বেগম কেঁচো সার উৎপাদন করে সংসারের সেই টানাপোড়েন ঘুচিয়েছেন। কেবল তা-ই নয়, তার চোখে-মুখে এখন আরও ভালো কিছু করার স্বপ্ন যেন জ্বলজ্বল করছে।

দুই ছেলে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সংসার। বসবাস করেন জেলা শহরের সিএ অফিস পাড়া এলাকায়।

তাদের দুই ছেলে এখন ঢাকার একটি কলেজে পড়াশোনা করছেন। এ কেঁচো সার বিক্রি করে মারজাহান সংসারের নানা প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি মেটাচ্ছেন দুই সন্তানের লেখা-পড়ার খরচও।

মারজাহান বেগম বাংলানিউজকে জানান, কেঁচো সার (ভার্মিকম্পোস্ট) উৎপাদনের বিষয়টি তিনি টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তারপর স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণের সহযোগিতায় কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এরপর থাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে।  

একটি সরকারি ব্যাংক থেকে গত বছর এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শুরু করেন এক কেঁচো সার উৎপাদন কাজ। প্রথমে তার বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি স্থান নির্বাচন করে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন মারজাহান। কেঁচো সার ও কেঁচো বিক্রি করে প্রতিমাসে আয় করছেন ২০ হাজার টাকা।
মারজাহান বেগম কেঁচো সার উৎপাদনকেন্দ্র
তিনি বলেন, কেঁচো সার উৎপাদন করতে প্রথমে কাঁচা গোবর, মুরগীর বিষ্ঠা, বিষমুক্ত সবুজ লতা-পাতা, তরকারির খোসা, ফলের খোসা এবং কলা গাছের কুচি দরকার হয়। আর ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির মূল উপাদান অস্ট্রেলিয়ান এজোজিক কেঁচো সংগ্রহ করতে হয়। এ কেঁচোগুলো তিনি সংগ্রহ করেছেন স্থানীয় একটি এনজিও সংস্থা থেকে। তার এ কাজে সহযোগিতা করছেন তার স্বামী। পাশাপাশি কাজের লোকও রাখাছেন ওই গৃহিণী।

মারজাহান আরও বলেন, অল্প পরিমাণ জায়গায় মাত্র ৫০ হাজার টাকা খরচ করে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা মতো আয় করছি। কেঁচো সার বিক্রি করে টানাপোড়েনের সংসার দুঃখ অনেকটাই ঘুচেছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছি। কেঁচো সারের পাশাপাশি নার্সারি, ও হাঁসের খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে।

কেঁচো সার বিক্রির ব্যাপারে এ গৃহিণী বলেন, স্থানীয় চাষিরা খুচরা এবং পাইকারি দামে বাড়ি থেকে সার কিনে নিয়ে যায়। তাছাড়া বড় বড় সারের দোকানগুলো পাইকারি দামে বাড়িতে এসে সার সংগ্রহ করে।  

পরিশ্রম ছাড়া কোনো পেশায় সফল হওয়া যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মনোযোগ দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করা দরকার। তাহলে পরিশ্রম ফল হিসেবে সফলতা ধরা দেবে এবং অভাব ঘুচে যাবে এক নিমিষে। কেঁচো সার উৎপাদনে বেকার তরুণ-তরুণীদের উদ্বুদ্ধ হতে আহ্বান জানান গৃহিণী মারজাহান বেগম।

এ বিষয়ে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, যে কোনো বেকার যুবক অল্প জায়গায় স্বল্প পুঁজি দিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন করতে পারে। অধিক ফসল উৎপাদনে এ সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কেউ কেঁচো সার উৎপাদন করতে চাইলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ তাকে সাহায্য করবে। মারজাহান বেগম একটি দৃষ্টান্ত উদাহরণ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।