ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

কৃষকের পরম বন্ধু ফিঙে পাখি 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১৯
কৃষকের পরম বন্ধু ফিঙে পাখি  .

ঈশ্বরদী (পাবনা): উজ্জ্বল কুচকুচেকালো রং ও মিষ্টি সুরে ডাকে পাখি ফিঙে। ক্ষেতের পোকামাকড় দমন করে বলে পাখিটি কৃষকের পরম বন্ধু। ধানক্ষেতে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে কৃষকের ফসলের উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রয়েছে ফিঙে পাখি। 

মাঝারি আকারের এ পাখির ডানা লম্বাটে, সামান্য বাঁকা ঠোঁট, লম্বা লেজ যা দেখতে অনেকটা মাছের লেজের মতো। অনেক সময় বড় পাখিকে তাড়া করে ছোট-নিরীহ পাখিদের রক্ষা করে এ পাখিটি।

আমাদের দেশে পাখিটির পরিচিত নাম ফিঙে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘Dicrurus macrocercus’। পাখিটি এশিয়ায় বাস করা ড্রোঙ্গো পরিবারভুক্ত একটি ছোট্ট গানের পাখি। এটি গীষ্মকালীন অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা। এদের দক্ষিণ-পশ্চিম ইরান থেকে শুরু করে ভারত এবং শ্রীলংকা হয়ে দক্ষিণ চীন ও ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত দেখা যায়।

পৃথিবীতে প্রায় ২৪ প্রজাতির ফিঙে রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ৬ প্রজাতির ফিঙে পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই এ পাখির প্রাধান্য। এদের প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত। গাছের মগডালের ফাঁকে বাটি আকৃতির বাসা বুনে পাখিটি। ডিম দেয় তিন থেকে চারটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। ফিঙে লম্বায় লেজসহ প্রায় ২৮ থেকে ৩১ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। পুরুষ ও স্ত্রী ফিঙে সহজে আলাদা করা যায় না। এদের প্রায় সময়ই কোন খোলা আকাশের নিচে, কোন খুঁটি অথবা গরু বা মহিষের পিঠের উপর লম্বা লেজ ঝুলিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। একটি ফিঙে গড়ে ২৫ থেকে ২৮টি মাজরা পোকা খেতে পারে।

এছাড়া ফিঙে খাবার তালিকায় রয়েছে- ঘাসফড়িং, হলুদ মাজরা পোকা, বাদামি ঘাসফড়িং, পামরি পোকা। এসব ক্ষতিকর পোকামাকড় খাওয়ার কারণে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি অতিরিক্ত কীটনাশক খরচ থেকে রক্ষা পায় কৃষকরা। .ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের সিবিলহাট তালতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফিঙে পাখি অবাধে আসা-যাওয়ার জন্য জমিতে গাছের ডাল ও বাঁশ পুতে এর মধ্যে তার লাগিয়ে দিয়েছে কৃষকরা। এতে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে পার্চিং পদ্ধতির মাধ্যমে ফিঙে পাখির বসা ও চলাফেরা করার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।  

পাকশী ইউনিয়নের যুক্তিতলা গ্রামের কৃষক নুর ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ধান চারা রোপণের দিন থেকে ধান ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত ১৭৫ প্রজাতির পোকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। এ পোকা কীটনাশক প্রয়োগ করলেও যায় না। একমাত্র ফিঙে পাখিই হলো কৃষকের পরম বন্ধু। পাখিটি ক্ষতিকর বিভিন্ন পোকা খেয়ে দ্রুত সময়ে এদের সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।

কৃষিতে ফিঙে পাখির অবদান বিষয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, ফিঙে পাখি কৃষি ও কৃষকের পরম বন্ধু। ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে ফিঙে পাখির অবদান অনেক। ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতিতে ধানের জমিতে গাছের ডাল, বাঁশ পুতে সরু তার ঝুলিয়ে রাখলে ফিঙে পাখির দল সারিবদ্ধভাবে বসে থাকে। এমন কিছু পোকামাকড় আছে যা কীটনাশক প্রয়োগ করলেও মরে না। পার্চিং পদ্ধতিতে ফিঙে পাখির মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন সহজলভ্য হওয়ায় বর্তমানে কৃষকের কাছে এ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫  ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।