ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ফসলের হাসিতে ভরে ওঠে যমুনা চরের কৃষকের বুক

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৬ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৯
ফসলের হাসিতে ভরে ওঠে যমুনা চরের কৃষকের বুক মাঠে দোল খাচ্ছে সবুজ গম গাছ। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: দিগন্তজুড়ে সবুজের সমারোহ। মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সবুজ ধানের পাতা। এ যেন নীল যমুনার বুকে সবুজ সমুদ্রের ঢেউ। সবুজ ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে দুলে ওঠে কৃষক বায়েজিদের হৃদয়। উঠোন ভরা সোনালি ধানের যে স্বপ্ন তিনি এতোদিন বুনে এসেছিলেন, তা যেন আজ সত্যি হয়ে হাতছানি দিচ্ছে তার জীর্ণ কুটিরে। 

যমুনার জেগে ওঠা চরে পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা চরের কৃষক বায়েজিদ। ধান ক্ষেতে নিড়ানি দিচ্ছিলেন তিনি।

মৃদু হাওয়া দোল খাওয়া সবুজ পাতাগুলোর মত তার হৃদয়ও যেন দুলে দুলে উঠছিল।  

খুশিতে উৎফুল্ল কৃষক বায়েজিদ বলেন, বাবার প্রায় ১৫ বিঘা আবাদি জমি এক সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছিল। নদী ভাঙনরোধে যমুনার বুক চিরে ক্রসবার বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ফলে জেগে উঠেছে আমাদের বাড়িসহ প্রায় পাঁচ বিঘা আবাদি জমি। এই জমিতে আমি ধান আবাদ করেছি। গাঢ় সবুজ পাতাগুলো দেখে মনে হচ্ছে ফলনও খুব ভাল হবে।

বায়েজিদ ছাড়াও চর খোকশাবাড়ীর আব্দুল ওয়াহাব, মনছের আলী, চর সাপড়ির ইউসুফ আলী, খায়রুল ইসলামসহ অনেক কৃষকই এখন ব্যস্ত চাষাবাদে। আবাদ করছেন গম, মাসকলাই, তিল, তিশি, খেসারিসহ রকমারি ফসল, বাদ যায়নি কৃষকদের বসতবাড়ির আঙিনাও। সেখানে লাগিয়েছেন কলাগাছ, লাউগাছসহ বিভিন্ন শাক-সবজি।  

নদীভাঙনে সর্বস্ব খোয়ানো শত শত কৃষক এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে নেমেছেন। একটি জমিতে একইসঙ্গে একাধিক ফসল উৎপাদন করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।  

ক্ষেতে নিড়ানি দিচ্ছেন এক কৃষক।  ছবি: বাংলানিউজসম্প্রতি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা, খোকশাবাড়ি ও ছোনগাছা ইউনিয়নের যমুনার চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।  

চরাঞ্চলের মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় মাঠভরা ফসল, গোলাভরা ধান আর যমুনার রুপালি মাছ ছিল চরের মানুষের ঘরে ঘরে। গত দুই যুগ ধরে নদীভাঙন আর প্রলয়ঙ্করি বন্যায় একে একে সবকিছুই যমুনার গর্ভে চলে যায়। ধীরে ধীরে সহায়-সম্পত্তি সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে কৃষকরা। সব হারিয়ে শহররক্ষা বাঁধের উপর পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করতেন চরবাসী।  

২০১৭ সালের শেষের দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা সদর রক্ষায় যমুনার বুক চিরে চারটি ক্রসবার বাঁধ নির্মাণ করায় সদর উপজেলার কাওয়াকোলা, ছোনগাছা, খোকশাবাড়ি ও কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। এসব অঞ্চলের সর্বস্ব হারানো কৃষকদের মনে বইছে আনন্দের সুবাতাস। নতুন করে ফিরে পাওয়া বাপ-দাদার ভিটে-মাটিতে বসবাস ও চাষাবাদ করছেন তারা। ধান, গম, আখ, ভুট্টা, চীনাবাদাম, কালাইসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ হচ্ছে এখানে। এছাড়াও নিজ বাড়িতে গরু, ছাগল, হাস-মুরগি পালন করে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছেন কৃষাণীরা।  

সবুজ ধানক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে কৃষক।  ছবি: বাংলানিউজকাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম ভুইয়া বাংলানিউজকে বলেন, চরাঞ্চলের জমি জেগে ওঠায় হতদরিদ্র চরবাসীর ভাগ্য বদলে গেছে। এখন আর চরের মানুষের অভাব-অনটন নেই। সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আধুনিকতার ছোঁয়াও পৌঁছে যাচ্ছে চরাঞ্চলে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষায় চারটি ক্রসবার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ১৬ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি যমুনার গর্ভ থেকে উদ্ধার হয়েছে। জেগে ওঠা জমির খাজনা নেয়া বন্ধ রয়েছে। এসব জমিতে কৃষকরা চাষাবাদ করছেন। যে কৃষক যে জমির মালিক ছিলেন, তিনি সেই জমি চাষাবাদ করছেন। তবে জেগে ওঠা এসব জমি খাস হবে কিনা সেটা নির্ধারণ করবে জেলা প্রশাসন।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ হয়। ক্রসবার বাঁধ নির্মাণ হওয়ার পর আরও চার হাজার হেক্টর জমি নতুন করে চাষযোগ্য হয়েছে। এসব জমিতে ধান গমের পাশাপাশি ব্যাপকহারে ভুট্টা ও চীনাবাদাম আবাদ করছেন কৃষকরা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।