ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৯
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা

সাতক্ষীরা: চলতি মৌসুমেও ইউরোপের বাজারে রপ্তানি হবে সাতক্ষীরার আম। এজন্য রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার চাষীরা। 

মাটি ও আবহাওয়াজনিত কারণে অন্যান্য জেলার তুলনায় সাতক্ষীরার আম আগে পাকায় এবং স্বাদে, গুণে ও মানে অনন্য হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরেই সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি আম রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হলেও এবারও সাতক্ষীরা থেকেই দেশের আম রপ্তানি শুরু হবে।

 

কৃষি বিভাগ বলছে, অন্যান্য জেলার তুলনায় ১৫-২০ দিন আগে সাতক্ষীরার আম পেকে যায়। তাই রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে রপ্তানি বাজারে বিশেষ গুরুত্ব পায় সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি আম। সারাদেশেও রয়েছে এ জেলার আমের বিপুল চাহিদা। তাই রপ্তানি ও দেশের চাহিদা মেটাতে জৈব পদ্ধতিতে কেমিক্যাল ও ক্ষতিকর কীটনাশকমুক্ত আম উৎপাদনে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।  

কৃষি বিভাগের দাবি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আম রপ্তানিতে এবারও দেশের মধ্যে শীর্ষে থাকবে সাতক্ষীরা। যদিও আমের দাম নিয়ে কিছুটা সংশয়ে রয়েছেন আম চাষিরা।  

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এ লক্ষ্যে জেলার প্রায় ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমির ৩ হাজার ৯৮৯টি বাগানে আম গাছ পরিচর্যা করা হচ্ছে।  

এর মধ্যে সদর উপজেলার ১ হাজার ২৩০ হেক্টর জমির ১ হাজার ৫৪০টি বাগানে ১২ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন, কলারোয়ার ৬৫০ হেক্টর জমির ১ হাজার ৩৫০টি বাগানে ৬ হাজার ৩৫ মেট্রিক টন, তালায় ৭১৫ হেক্টর জমির ১ হাজার ৪৫০টি বাগানে ৭ হাজার ৬০ মেট্রিক টন, দেবহাটায় ৩৮০ হেক্টর জমির ৪৭৭টি বাগানে ৩ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জে ৮২৫ হেক্টর জমির ১৪২টি বাগানে ৮ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন, আশাশুনিতে ১৪০ হেক্টর জমির ১৯০টি বাগানে ১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন ও শ্যামনগরে ১৬০ হেক্টর জমির ১৫০টি বাগানে ১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।  

এদিকে, সাতক্ষীরা জেলা থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩১.৮৩ মেট্রিক টন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৭ মেট্রিক টন নিরাপদ ও বালাইমুক্ত আম রপ্তানির পর চলতি মৌসুমেও আম রফতানির লক্ষ্যে জেলার ৫০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।  

এ লক্ষ্যে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ও বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ সদর উপজেলার ১ হাজার ৫৩০ বিঘা, তালায় ৩৫০ বিঘা, আশাশুনিতে ৩৫৫ বিঘা, দেবহাটায় ৩২০ বিঘা ও কলারোয়ায় ৩ হাজার ২০০ বিঘা জমিতে রপ্তানিযোগ্য আম প্রস্ততে কৃষকদের পরিচর্যা, সুষম সার প্রয়োগ, আগাছা দমন, ডাল ছাঁটাই ও স্প্রে করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে।  

তবে আম চাষিদের দাবি, গত কয়েকদিনের বৃষ্টি, ঝড় ও অতিরিক্ত গরমে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝরে পড়ছে প্রচুর পরিমাণে আমের গুটি। সঙ্গে সঙ্গে গাছ ও গাছের ডাল ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমচাষিরা। তারপরও গাছে যা আম রয়েছে শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।  
 
আশাশুনি উপজেলার বুধহাটার আমচাষি মো. শাহাদাত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, গত বছর তার বাগান থেকে ৫ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছিলো। এবছরও তার বাগানে প্রায় ২০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে জৈব পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ ও কীটনাশক না দিয়ে ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে ক্ষতিকর পোকা দমন করছেন তিনি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বা কোনো সমস্যা না থাকলে এবছরও তার বাগানের হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি আম যাবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে।  

সদর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের আমচাষি এসএম লিয়াকত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ২০১৪ সাল থেকে তিনি বিদেশে আম রপ্তানি করছেন। গত বছর ৩০-৩২ মণ আম রপ্তানি করেছেন। এবছরও তার বাগানে ২৫-২৬ মেট্রিক টন আম রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। জৈব উপায় সার প্রয়োগ, ফেরোমন ফাঁদ দেওয়া, নিয়মিত বাগান পরিষ্কার করাসহ সব ধররের কার্যক্রম চলছে। কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করছেন।  

তিনি আরো জানান, আমের দাম নিয়ে একটু সমস্যা হয়। বাইরে পাঠানোর জন্য আম প্রস্তুত করতে গেলে অনেক পরিচর্যা করতে হয়। খরচ বেশি হয়। সেই তুলনায় দাম কম পাওয়া যায়। ভালো দাম পাওয়ার জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।  

সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ও উত্তরণের সফল প্রকল্পের ফিল্ড অর্গানাইজার মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে জানান, বিষমুক্ত আম উৎপাদনে পাঁচশ চাষিকে প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে গাছ থেকে আম পাড়া, পচনরোধে হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।  

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমজাদ হোসেন জানান, চলতি মৌসুমেও বিদেশে আম রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রিমিয়াম কোয়ালিটির আম উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ, পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট, উত্তম কৃষি পদ্ধতি বা গুড অ্যাগ্রিকালচার প্রাকটিস (গ্যাপ), ক্লাস্টারভিত্তিক মাছি পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আশা করা যায় সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এবং মে মাসের শেষ সপ্তাহে সাতক্ষীরার সুস্বাদু আম উড়াল দিবে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে এবং দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৯
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।