ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

শঙ্কা নিয়েও আশাবাদী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
শঙ্কা নিয়েও আশাবাদী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: আমের রাজধানী বলতে সবাই চাঁপাইনবাবগঞ্জকেই জানে। আম নির্ভর জেলা হওয়ায় এখানকার অর্থনীতির ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে আম শিল্পের ওপর। গত কয়েকবছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ফরমালিনের অজুহাতে আম ধ্বংস, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ বিভিন্ন কারণে আম চাষিরা তেমন একটা ব্যবসা করতে পারেনি। চলতি বছর অধিকাংশ আম বাগানই বিক্রি করতে পারেনি বাগান মালিকরা। আর যে কয়টি হয়েছে সেগুলোও অর্ধেক দামে বিক্রি হয়েছে।

তবে এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের ওপর প্রাকৃতিক বড় ধরনের দুর্যোগ না হওয়ায় এবং রাজনৈতিক স্থিতিশিলতা বিরাজ করায় আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন আম চাষিরা।  

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানগুলোতে বলতে গেলে এখনও আমের গুটি অবস্থা।

আরও মাস দু’য়েক পরেই এসব আম উঠবে বাজারে। আমের ভালো ফলন পেতে এবং রোগবালাই দমনে কৃষকরা নিচ্ছেন বাড়তি পরিচর্যা। তবে উচ্চ আদালতে আমে ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রতিরোধে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ রাজশাহী অঞ্চলের আম বাগানগুলোতে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ সংক্রান্ত আদেশ নিয়ে জেলার আম চাষি, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সেইসঙ্গে আম পাড়ার জন্য বাস্তবসম্মত আইন না করে গত বছরের মতো সময়সীমা বেঁধে দিলে ন্যায্য দাম না পাওয়া নিয়ে রয়েছে চাষিদের মধ্যে শঙ্কা।

জেলার শিবগঞ্জের আমচাষি ইসমাঈল হোসেন ও শামিম খান জানান, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত কালবৈশাখী বা শিলা বৃষ্টি না হওয়ায় অনেকটা স্বস্তিতে আম ব্যবসায়ীরা। এছাড়া এবছর আমের ফলনও মোটামুটি ভালো হওয়ায় অনেক আশা নিয়ে বাগানগুলো পরিচর্যা করছেন। গত বছরের লোকসান কাটিয়ে লাভের আশা করছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগান
শিবগঞ্জের আম চাষি ও বাগান মালিক আব্দুল মজিদ বলেন, এখন আমের গুটি অবস্থা। এ অবস্থায় আমের নানা ধরনের রোগবালাই দেখা দেয়। বিশেষ করে আমের মহা (এক ধরনের আঠা জাতীয় ছত্রাক) বিভিন্ন পোকার আক্রমণ, ঝরে পড়া ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়। আর এ সময় কৃষি বিভাগ ও ফল গবেষকদের পরামর্শ অনুযায়ী চাষিরা কীটনাশক (বালাই নাশক ও ছত্রাক নাশক স্প্রে করেন) প্রয়োগ করেন। আর স্প্রে করার সময় পুলিশ বাধা দিলেতো বাগানে আম উৎপাদন করাই সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে আমরা কী করবো? এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা না পেলে আমরা আম চাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

অন্যদিকে জেলা সদরের আম চাষি জাফরুল আলম বলেন, জেলার প্রায় ৭০/৮০ ভাগ জায়গা জুড়েই রয়েছে আমের বাগান। এ অবস্থায় এতো আমবাগানে কি পুলিশ নিয়োগ দেওয়া সম্ভব? হঠাৎ করে পুলিশের আগমন যাতে চাষিদের আতঙ্কিত না করে, মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার না করে এ বিষয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, আম গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আম উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে নিয়ে বসে একটি সুষ্ঠু সমাধানের পথ বের করতে হবে- তাহলে আদালতের এ আদেশ জনস্বার্থে সুফল বয়ে আনবে।

কানসাটের আম আড়তদার সমিতির সভাপতি খাদেমুল ইসলাম জানান, আম বাজারজাত ও গুদামজাতকরণের সময় কেউ যাতে আমে ক্ষতিকর রাসায়নিক পর্দাথ প্রয়োগ করতে না পারে এ বিষয়কে স্বাগত জানায় চাষিরা। এক্ষেত্রে আমরা উচ্চ আদালতের নির্দেশিত পর্যবেক্ষণ টিমকে সহায়তা করতেও প্রস্তুত।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জমির উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, আম শিল্পকে বাঁচাতে উচ্চ আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়নে কোনো পক্ষই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখবে পর্যবেক্ষণ টিম। এছাড়া কৃষকদের আতঙ্কিত না হয়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী আম ও বাগানের পরিচর্যা করতে হবে।

এদিকে গত ৯ এপ্রিল উচ্চ আদালত সাত দিনের মধ্যে বাগানে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোনো বাগানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতের লিখিত আদেশের কোনো কপি এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে পৌঁছায়নি। আদেশের কপি পৌঁছালে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মঞ্জুরুল হোদা বাংলানিউজকে জানান, আমে ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক না দেওয়া হলে বাগান মালিক, চাষি বা আম সংশ্লিষ্টদের সমস্যা হবে না। চলতি বছর জেলার ৫ উপজেলায় ৩১ হাজার ৮২০ হেক্টর আমবাগনে প্রায় পৌনে ৩ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার মধ্যে সর্ব্বোচ শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে।

গত ৯ এপ্রিল হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সাত দিনের মধ্যে আমে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার রোধে বাগানগুলোতে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দেয় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজিকে। তা বাস্তবায়নের পর পুলিশের আইজি, র‌্যাবের মহাপরিচালক, বিএসটিআইয়ের চেয়ারম্যানকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
আরএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।