ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

চার বছরে মাল্টা-কমলার লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার মেট্রিক টন

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৯
চার বছরে মাল্টা-কমলার লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার মেট্রিক টন মাল্টা। ফাইল ফটো

ঢাকা: আগামী চার বছরে ৪০ হাজার মেট্রিক টন মাল্টা ও কমলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, এ পরিমাণ ফল উৎপাদন হলে ৪০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে বলে মনে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বারি মাল্টা-১ জাতের ফলটি দেশের প্রায় সব এলাকাতেই ভালো ফলন দিচ্ছে। কমলা চাষ করেও আলোর মুখ দেখছেন কৃষকেরা।

এসব বিষয় মাথায় রেখেই দেশের ৩০ জেলায় মাল্টা ও কমলা উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যা চলতি বছরেই ছড়িয়ে পড়বে মাঠ পর্যায়ে।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশের সাত বিভাগের ৩০টি জেলার ১২৩ উপজেলায় আধুনিক পদ্ধতিতে কমলা ও মাল্টা চাষ করা হবে। সাইট্রাস ডেভলপমেন্ট (লেবু জাতীয় ফল) ও কমলা উন্নয়নের আওতায় ৩০টি জেলায় পাঁচহাজার বাগানের মাধ্যমে কমলা ও মাল্টা চাষ করা হবে।
 
পরিপক্ক সবুজ রংয়ের বারি মাল্টা-১ এর উচ্চ ফলন ও স্বাদের কারণে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই ফল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রাথমিকভাবে সবুজ মাল্টা উৎপাদনে বেশি নজর দেয়া হবে। কৃষক পর্যায়ে এই জাতের মাল্টা চারা থেকে শুরু করে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর
 
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা-২ শাখার উপ-প্রধান দীপক কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে দেখেছি বারি মাল্টা-১ দেশের প্রায় সব এলাকাতেই ভালো ফলন দিতে পারে। এ ধরনের ফলের স্বাদের জন্য মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।  

‘ফলে ৩০টি জেলায় সবুজ মাল্টা উৎপাদনে নজর দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কমলা, বাতাবি লেবুও (জাম্বুরা) উৎপাদন করা হবে। কৃষক পর্যায়ে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। এরই মধ্যে দেশব্যাপী এ কাজ শুরু করে হয়েছে। চলতি বছরেরই মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করবো। আগামী চার বছরে ৪০ হাজার মেট্রিক টন মাল্টা ও কমলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। ’
 
জানা যায়, প্রথম দিকে ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোণা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি,  সিলেট ও মৌলভীবাজারে চাষ হবে মাল্টা ও কমলা।  
 
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙামাট, বান্দরবান, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর ও কুড়িগ্রামে উৎপাদন করা হবে কমলা ও মাল্টা। এছাড়া আরও চারটি জেলা রয়েছে।  
 
সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৩ কোটি টাকার কমলা ও মাল্টা দেশে উৎপাদিত হয়েছে। অথচ একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৯০ কোটি টাকার এর ফল আমদানি করা হয়েছে। বাংলাদেশের সব জেলার আবহাওয়া কমলা চাষের জন্য উপযোগী নয়। তবে বৃষ্টিবহুল আদ্র ও উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলে লেবু জাতীয় ফল ভালো জন্মে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটে কমলা চাষ হয়ে আসছে।
 
বর্তমানে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় কমলা এবং মাল্টা চাষ শুরু হয়েছে। তবে আধুনিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ না করায় এসব ফলে রোগবালাই বেশি হয়।  

তাই ‘লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। চলতি সময় থেকে শুরু করে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এসব মাল্টা ও কমলা উৎপাদন করা হবে।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের মাধ্যমে মাল্টা ও কমলা উৎপাদনে সব ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। প্রয়োজনে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়া হবে। প্রকল্প এলাকায় ২০টি সরকারি নার্সারিতে মাল্টা ও কমলার মাতৃবাগান স্থাপনের পাশাপাশি চারা উৎপাদনের ব্যবস্থাও থাকবে।
 
কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মাহবুবুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়নের ফলে বিদেশ থেকে মাল্টা ও কমলা আমদানি একেবারে কমে আসবে বলে আশা করছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৯
এমআইএস/এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।