ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

‘ফণী’ আতঙ্কে আধাপাকা ধানেই চালানো হচ্ছে কাস্তে

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৫ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৯
‘ফণী’ আতঙ্কে আধাপাকা ধানেই চালানো হচ্ছে কাস্তে

বগুড়া: প্রায় ৩৫ বিঘা জমিতে বোরো লাগিয়েছেন কৃষক মোজাম্মেল হক। এরমধ্যে রয়েছে বিআর-২৮, মিনিকেট, সুবললতা, কাজললতা জাতের ধান। জমির এ ধানগুলো আর সপ্তাহখানেক পর কাটতে পারলে ভালো হতো। মনে তৃপ্তি আসতো। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা বৈরী আবহাওয়া তাকে ভীষণ চিন্তায় ফেলে দেয়।

এ অবস্থায় ধান জমিতেই রাখবেন নাকি গোলায় ভরবেন। আবহাওয়ার হাবভাব দেখে কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।

এরমধ্যে আবার নাকি ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আসছে। তার জমির চারপাশে ধানকাটা দেখে এ কৃষকও নিজ জমির অনেকটা আধাপাকা ধানকাটার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
 
তিন দিন আগের কথা। জমির সে আধাপাকা ধানকাটার জন্য নয় জনের একদল দিনমজুর ঠিক করে ফেলেন। প্রতিবিঘা জমির ধান কাটতে তাদের প্রায় তিন হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিতে হবে। সে থেকে প্রতিদিন ভোর থেকে দিনমজুররা দলবেঁধে ধানের গোড়ায় বিরামহীন কাস্তে চালিয়ে যাচ্ছেন। আর কৃষক মোজাম্মেল হক সবকিছু কখনও জমির আইলে কখনও জমির ভেতরে দাঁড়িয়ে বা বসে দেখভাল করছেন।
 
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে এবার জেলার ১২টি উপজেলায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে ধান লাগানো হয়েছে। এরমধ্যে বিআর-২৮, ব্রি ধান-৫৮, সুবললতা, কাজললতাসহ হাইব্রিড জাত অন্যতম। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪০ মেট্রিক টন।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, বিআর-২৮ জাতের ধানে প্রায় পুরোপুরি পাক ধরেছে। পুরো জেলায় কমবেশি করে এ জাতের ধানকাটা শুরু হয়েছে। তবে অন্য জাতের ধানগুলো এখনো পুরোপুরি পাক ধরেনি। সামান্য কাঁচা রয়েছে। এসব ধান পুরো পাকতে আরও প্রায় সপ্তাহখানেকের মতো সময় লাগবে। কিন্তু আবহাওয়ার বৈরিতার কারণে জমির আধাপাকা ধানতে কাটতে শুরু করেছেন এ জেলার কৃষকরা।  
ধান মাড়াই করছেন কয়েকজন দিনমজুর।  ছবি: বাংলানিউজপ্রতিদিন ভোরে শ্রমিকদের সঙ্গে জমিতে ছুটে যাচ্ছেন ধান চাষিরা। শ্রমিকদের সঙ্গে তারাও হাতে কাস্তে ধরছেন। বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আগেই যেন শত কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারেন এ চিন্তা থেকে। আর বাড়ির আঙিনায় সে ধানের জন্য অপেক্ষায় থাকেন নারী শ্রমিকদের সঙ্গে গৃহিনীরা। একদল জমিতে ধান কাটছেন। আরেকদল সে ধান মাথায় বা ভাড়ে করে বাড়ির আঙিনায় আনছেন। কয়েকজন সে ধান মাড়াই করছেন। নারী শ্রমিকদের সঙ্গে বাড়ির গৃহিনীরা পাল্লা দিয়ে ধান পরিষ্কার করে ঘরে তুলছেন।
 
কৃষক সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সম্প্রতি কৃষি বিভাগ থেকে মাইকিং ছাড়াও নানাভাবে তাদের ধানকাটার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। একে তো চলছে তীব্র তাপদাহ। এরপর রয়েছে কালবৈশাখীর ভয়। আবার নাকি ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আসছে। একসঙ্গে এতো কিছু সামাল দেওয়া কোনো কৃষকের পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই জমির আধাপাকা ধানকাটা হচ্ছে।
 
কৃষক শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আর সপ্তাহখানেক জমিতে ধান রাখা গেলে অনেক ভালো ফলন পাওয়া যেতো। কারণ বিআর-২৮ জাতের ধান প্রতিবিঘায় ১৮-২০ মণ হারে ফলন হচ্ছে। তবে বাজারে ধানের দাম বর্তমানে অনেক কম। রকমভেদে প্রতিমণ ধান ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সবকিছু সামলে জমির ফসল ঘরে তোলায় এখন প্রতিটি কৃষক পরিবারের জন্য একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 
কৃষি অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বাবলু সূত্রধর বাংলানিউজকে জানান, বিআর-২৮ জাতের ধান পুরোপুরি কাটার সময় হয়েছে। কিছু জাতের ধান কাটতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। তবে শতকরা ৮০ ভাগ পাকা ধান দ্রুত কেটে ফেলতে কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে ফলন কম হবে না।
 
জেলার সদর, নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট উপজেলায় পুরোদমে ধানকাটা-মাড়াই চলছে। অন্য উপজেলায় কমবেশি ধানকাটা হচ্ছে। কারণ এসব উপজেলায় আলু লাগানোর কারণে ধান লাগাতে কিছুটা দেরি হয়। যে কারণে একটু সময় লাগছে। সবমিলে ঘুর্ণিঝড় ‘ফণী’সহ বৈরী আবহাওয়ার কারণে জমির উঠতি ফসল নিয়ে কৃষি বিভাগও ভীষণ চিন্তিত যোগ করেন এ কৃষিবিদ।     
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৯
এমবিএইচ/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।