ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

বেশি ধান উৎপাদনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে 

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১১ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯
বেশি ধান উৎপাদনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে 

বাগরেহাট: বাগেরহাটে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। ৯৮ শতাংশ কৃষকদের ধান কাটা ও মাড়াই সম্পন্ন হলেও সরকারিভাবে এখনও ধান ক্রয় শুরু করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। রক্ত পানি করে উৎপাদিত এ ধান নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন বাগেরহাটের প্রান্তিক কৃষকরা। 

বাধ্য হয়ে উৎপাদন খরচের থেকে কম দামে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করছেন কৃষকরা। লোকসান হওয়ায় অনেক কৃষকই ধান চাষের আগ্রহ হারাচ্ছেন।

 

বোরো মৌসুমে জেলায় ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষি বিভাগের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৬২ হাজার ৯৯৫ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন। তবে সরকারিভাবে ধান ক্রয় করা হবে মাত্র ১৮৫৫ মেট্রিক টন।  হিসেব অনুযায়ী মোট উৎপাদনের ২ দশমিক ১০ শতাংশ ধান ক্রয় করছে সরকার। ফলে সব কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রি করার সুযোগ পাবেন না। হতাশ কৃষকরা অনেকেই ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।  

রোববার (১২ মে) সকালে ফকিরহাট উপজেলার অর্গানিক বেতাগা কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও বিপণন কেন্দ্রে দেখা যায়, কৃষকরা ৪৪০ থেকে ৬৫০ টাকায় ধান বিক্রি করছেন। এ দামে খুশি নয় কৃষকরা। অল্প দামে ধান ক্রয় করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও ফরিয়ারা।

ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক গুরুদাস, মজনু মোল্লা, হারুন মোড়ল, আনিস ফকিরসহ কয়েকজন বলেন, প্রতি মণ ধান বিক্রি করছি ৪৪০ থেকে ৬৫০ টাকা। কিন্তু জমিতে ধান রোপণ, আগাছা পরিষ্কার, সার-কীটনাশক প্রয়োগ, ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তোলায় প্রতি মণ ধানে কৃষকদের যে খরচ হয় তাও বিক্রি করে তুলতে পারছি না। এছাড়া ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য শ্রমিকের মজুরি দিতে হচ্ছে ৭শ’ টাকা। যা খুবই কষ্টকর।

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক।  ছবি: বাংলানিউজ

উপজেলার রাখালগাছী-সুনগর গ্রামের কৃষক সরোজিত দাস বলেন, ২০০১ সালে ব্লক পদ্ধতির মাধ্যমে ৬ একর জমিতে বোরো চাষ শুরু করি। তখন শ্রমিক, সার-কীটনাশকসহ ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য মালামালের দাম ছিল কম। কিন্তু এখন সবকিছুর দাম অনেক বেড়ে গেলেও ধানের দাম বাড়েনি। যার ফলে এ মৌসুমে ক্রমাগত লোকসান থেকে বাঁচতে এবার মাত্র দেড় একর জমিতে ধান চাষ করেছি।

তেকাঠিয়া বেতবুনিয়া গ্রামের গোলাম রাব্বানি শেখ বলেন, ৬ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ৭০ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। ৪৫০ টাকা করে দরে ধান বিক্রি করলে, কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য শ্রমিকদের টাকা বাড়ি থেকে এনে দিতে হবে।  

কৃষক আব্দুল শহিদুল ইসলাম ও আবুল হোসেন বলেন, ধানের দাম এত কম থাকলে, ধান চাষ বন্ধ করে দিতে হবে। প্রয়োজনের তাগিদে ১২ থেকে ১৫ টাকায় ধান বিক্রি করে ৪৫ টাকায় চাল কিনে খেতে হয়। কি হবে এত কষ্ট করে ধান চাষ করে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, জেলায় ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে মোট ৩ লাখ ৯০ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। জেলায় ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭ জন কৃষককে আমরা কৃষিকার্ড দিয়েছি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটি কৃষিকার্ডপ্রাপ্ত কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করবেন। সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।

জেলা সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা খাদ্য কর্মকর্তা একেএম শহিদুল হক বলেন, এ মৌসুমে বাগেরহাট থেকে ১ হাজার ৪০ টাকা মণে ১ হাজার ৮৫৫ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হবে। দুই এক দিনের মধ্যে আমাদের ধান ক্রয় শুরু হয়ে যাবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।