ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ঈদ আনন্দ নেই কৃষক পরিবারে

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৯
ঈদ আনন্দ নেই কৃষক পরিবারে

লালমনিরহাট: ঈদের আগে ধান ঘরে তুলেও সরকারিভাবে বিক্রি করতে না পেরে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের কৃষকরা। সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলেও তালিকা জটিলতায় গুদামে যাচ্ছে না কৃষকদের ধান। সামান্য কিছু কৃষক ধান দিলেও এখনো পায়নি টাকা।

লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৪৮ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের। যার মধ্যে ২৬ টাকা কেজি দরে মাত্র এক হাজার ৪৯৩ মেট্রিক টন ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে ১০ হাজার ৭৩১ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজি দরে ৩৪৫ মেট্রিক টন আতপ চাল কিনবে সরকার।

অধিক সংখ্যক কৃষকের ধান ক্রয়ের জন্য কৃষক প্রতি ৪৮০ কেজি ধান সরকারের কাছে বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি।

জেলার সাতটি গুদামে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) পর্যন্ত প্রায় ১০০ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। সব গুদামে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রয়ের উদ্বোধন করা হলেও পুরো দমে ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি সরকারি এ দফতরটি।  

জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় গত ১৯ মে হারুন ও মিলন নামে দুই কৃষকের মাত্র ৯৬০ কেজি ধান কিনে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হলেও আর কোনো কৃষকের ধান এখন পর্যন্ত গুদামে যায়নি। ধান বিক্রির ১০ দিন হলেও ধানের টাকা পাননি কৃষক হারুন ও মিলন। ফলে ধান বিক্রি করেও বিবর্ণ হচ্ছে এ দুই কৃষক পরিবারের ঈদের আনন্দ।

সরকারিভাবে প্রতি মণ ধানের বিক্রয় মূল্য এক হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪৫০-৪৮০ টাকা দরে। সরকারি গুদামে চাল দিতে চালকল মালিকরাও বাজারে ধান ক্রয় শুরু করেননি। ফলে ধানের বাজারে আসছে না কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন। আসন্ন ঈদ উৎসবে পরিবারের চাহিদা মেটাতে অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে পানির দামে তাদের কষ্টে অর্জিত সোনার ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

কিছু কিছু কৃষক সরকারি মূল্যে ধান বিক্রি করতে ছুটছেন জনপ্রতিনিধি থেকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের দুয়ারে দুয়ারে। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যেসব কৃষকের জমি ৫০ শতাংশের নিচে। এমন কার্ডধারী কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান বিক্রির যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে কৃষি বিভাগ বা ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। অন্যথায় এ সুযোগ পাবেন না কৃষকরা।
কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে গুদামজাত করা হচ্ছে।  ছবি: বাংলানিউজ
কৃষকরা জানান, কয়েক বছর আগে কৃষি বিভাগ কৃষকদের ভর্তুকির বীজ সারের জন্য কৃষিকার্ড করে দেন। সেই সময় কার্ডে উল্লেখিত জমির পরিমাণ অনুযায়ী কৃষক সার ক্রয় করতে পারতেন। তাই সারের চাহিদা মেটাতে কম জমির বর্গা চাষিরাও অধিক সংখ্যক জমি দেখিয়ে কার্ড করেছেন। ফলে জেলার আয়তনের চেয়েও কৃষকের জমির পরিমাণ বেড়েছে কয়েকগুণ।

ইচ্ছামত জমি দেখিয়ে কৃষক কার্ড করা বর্গাচাষিরাও পড়েছেন অনেকটা বিপদে। ঋণ করে অল্প জমিতে ধান করেও কার্ডে ভুলের কারণে তারা ধান সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারছেন না।

এছাড়াও অনেকেই ধান চাষ না করেও তাদের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে ধান বিক্রির খাতায়। ফলে প্রকৃত চাষিরা বঞ্চিত হয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়,  হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রমজান আলীর পরিবার থেকেই পাঁচ জনের নাম কৃষক তালিকায় স্থান পেয়েছে। ওই তালিকায় তপন ঘোষ নামে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও আজিজার রহমান নামে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার নাম স্থান পেলেও বাস্তবে তারা একটি ধানও ফালায়নি। তাদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও কৃষি বিভাগের সখ্যতা রয়েছে বলেও কৃষকদের অভিযোগ।

এ প্রসঙ্গে সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডালিম কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ওই ব্যক্তিদের নামে ইউপি চেয়ারম্যান তালিকা দিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলুর দাবি— ‘তিনি নন, কৃষকের তালিকা করেছেন কৃষি বিভাগের লোকজন’।

আদিতমারী উপজেলার বসিনটারী গ্রামের কৃষক পিপলু বাংলানিউজকে বলেন, বাবার রেখে যাওয়া সামান্য জমিতে ধান চাষাবাদ করে সংসার চলে তার। কিন্তু কৃষক কার্ডের তার জমি দেখানো হয়েছে এক একরের উপরে। ফলে ঋণ করে চাষ করা ধান সরকারের কাছে বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। ঋণ পরিশোধ ও আসন্ন ঈদের খরচ নিয়ে চিন্তিত এ চাষি। এমন চিত্র গোটা জেলার কৃষক পরিবারে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের কোনো অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মাধ্যমে প্রতিটি ক্রয় কেন্দ্র মনিটরিং করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।